
বেরিকেড
নিরপেক্ষ শব্দটিই নিরপেক্ষ নয়
মুখ বন্ধ না রেখে উপায় কি।
পায়েতে বেড়ি দেয়নি
দৌড়নো তো দূরের কথা হাঁটতেও পারছি না,
হাতেও শিকল পড়ায়নি কেউ
তবুও মশালটা জ্বালানো যাচ্ছে না।
আঙ্গুলে লাবণ্য নেই — চাতাল ঘিরে অন্ধকার
শুধু কানে শোনা ছাড়া কোথাও আলো নেই।
পৃথিবীতে এখন গভীর রাত
ইচ্ছে হয় ফিরে যাই আদিম গুহায়
ফর্শা মুখগুলো ঢেকে আছে জটিল মুখোশে।
মুখের মতো চোখও বন্ধ রাখতে হচ্ছে
স্বপ্ন ভাঙ্গার পরেও দেখি চোখ মেলছে না।
আয়না দেখে
রোজ আযনাতে আমি আমাকেই দেখি —
আমার চেহারা অবিকল আমাকে দেখিয়ে দেয় আয়না।
নিখুঁত মেকাপে আমি নিজেকে নিদারুণ ফুটিয়ে তুলি
আয়না দেখে ভাবি আমি তো সুন্দর
আমার এই বাহারি সাজ সজ্জায় নিজেকেই সাজাই।
আয়নাও কি আমাকে দেখে — আমার ভিতরে বাহিরে
কিংবা সুবেশী চেহারার আড়ালে অন্য আমিকে।
আয়না কি টের পায় মনের অপ্রকাশিত শব্দগুচ্ছ
হাসির আড়ালে থাকা বেদনার কষ্ট
আয়না কি শোনে না বলা কথার দীর্ঘশ্বাস
গাঢ় সাজের আড়ালে কতো গোপন কথাই না থাকে।
আয়নাতে আমার চেহারা দেখে ভাবি
রঙে আর আলোয় আমি কি সত্যিই আমি
নাকি সাজের আড়ালে মুখোশ ধরে আছি অন্য কেউ।
জল-মাটি-রোদ্দুর
ছায়ারা জানে সব পথ ফুরোয় এসে দরজায়
ঘৃণার কোন রং নেই মানুষ রং মিশিয়ে দেয়াল আঁকে
ছায়ারা হাঁটে শূন্যতায় জীবন প্রবাহে
ধর্ম আসার আগে মানুষ তারো আগে জল মাটি রোদ্দুর
প্রার্থনার আগে তবুও আমরা রঙ বেছে নেই
অথচ ঈশ্বর কারো একার নয়।
ভাত জল এসবের কোন মসজিদ নেই মন্দির নেই
রাম যদি ভালোবাসা শেখায়
কোরআন যদি গুনাহ্ মাপের কথা বলে
তবে কেন আমরা ঘৃণার ছায়ায় হাঁটি।
ধর্মে ক্ষুধার কোন জাত থাকে না, তৃষ্ণারও নামফলক
তবুও মানুষ ভুলে যায প্রেমই প্রাচীনতম প্রার্থনা।
একই জলে একই আলো একই রোদে
ধর্ম যদি হয় হোক সে প্রেম মানুষ থাকুক মানুষ হয়ে।
আঙ্গুলে মাটি, চোখে ভোর
পেছনের দরজায় দেখি
বিকেলের কিছু পুরোনো শব্দ ঝুলে আছে।
ভেজা রঙধনুতে ঘুমিয়ে আছে সোনার বিকেল।
হাত বাড়ালে নদী খুলে — ঘোমটা খুলে কুয়াশার।
ফেলে আসা রাত্রির নিঃশ্বাসে ঘুমায় মাতাল শহর।
আঙুলে এখনও মাটির গন্ধ,
বৃষ্টির ফোঁটায় ঝরে আগুন রাঙ্গা উঠোনে।
আলপথে হেঁটে যাওয়ায়
আমরা জানি ভোরের দরজা খুলে নাকি বন্ধ হয়।
চোখ
চোখ দুটো খোলা, তবু ঘুম নামে ভিতরে ভিতরে।
আমি দেখি না—
কেবল টের পাই ছায়ার মতো কিছু নড়ে।
স্বপ্ন ভাঙে,
কিন্তু জেগে উঠি না।
চোখে জলের চেয়ে ধূলি বেশি,
আর প্রতিচ্ছবিতে নিজেকে চেনা যায় না।
যা দেখি,
তা দেখা নয়—
শুধু অভ্যেসের দৃষ্টি।
চোখ দুটি এখন জানালা নয়,
একটা বন্ধ দরজা,
যার ওপাশে আমি নেই।
সার্চ লাইট
স্টেশনটা দূরে, বহুদূরে—
ট্রেনটা লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটছে।
মেঘগুলো সকাল-সন্ধ্যা করতালিতে
উৎসাহ দিচ্ছে খুব।
চিৎকারগুলো ঢেউ তোলে ভয়ে,
যেন — অপারেশন সার্চলাইট!
চাঁদও হারিয়ে যায়— প্রদীপ নিভিয়ে ভৈরবীতে।
মুক্তির নেশায় মাতাল কিছু লোক
প্রখর রৌদ্রে খুঁজছে স্টেশন।
বেসুরো
বাটিতে উপচে পড়ছে ঝোল,
হাড্ডিতে যেন কামড়াকামড়ির উৎসব
তারা খাওয়াই বোঝে দিনেই হোক আর রাতে
সব পথ থেমে গেছে চুপে
রাত্রির প্রহরে
সুরের গান ওঠে না একতারায়
অন্ধকার দলিত গাঁয়ে নক্ষত্রের আলো
স্বপ্নরাঙ্গা চোরাবালির গর্ত
পাহাড়তলির তীর্থস্থানে নেশা মাতাল ডেরায়
হেডলাইট জ্বলে উঠলে থেমে যায় বেহুদা গুঞ্জন
নদী পেরিয়ে পথ ফিরে ফণিমনসার ঝোপেঁ।