কামরুল বাহার আরিফ এর গুচ্ছকবিতা
কামরুল বাহার আরিফ এর গুচ্ছকবিতা

কবি : কামরুল বাহার আরিফ

ছুটছি আমি কোন সে টানে

ফাগুন হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে বইয়ের একটা পাতা
কি ছিল তায় লেখা? ডানার কথা!
প্রজাপতির রঙের কথা? উড়ছে কেনো?
যাচ্ছে কোথায়? বনের ধারে, আগুন ধরা বনের শাখে?
আমিও কি ছুটছি তারই পিছু? ছুটছি কেনো?
কি আছে টান? কেনোই বা টান?
বনের শাখে লাগলে আগুন, আমার কি তা?
আমি কি আর প্রজাপতি? ফাগুন প্রেমে পাখনা মেলি?
আমি জানি বৈশাখী ঝড়, সব চুরমার, ওলট-পালট
ধ্বংসলীলা। ফাগুন প্রেমে কী আসে যায়?
তবু আমি ছুটছি কেনো পাতার পিছু?
ছুটছি আমি, ছুটছি আমি...
তাহলে কি পাতার ’পরে লেখা আছে, আমার কিছু?

আমি প্রবিষ্ট তারই মাঝে

সাগরজল এক মানবী
প্রতিচিত্রে নয়, জাগ্রত উত্তরণে
ঢেউ আর ঢেউ বুননে
উজানের ঐশ্বর্যে, ভাটির শূন্য চিত্রপটে
বিষাদের পাথরচাপা ঝরনার কান্নায়...

সাগরজল এক মানবী তরু
বিচ্ছেদে নয়, শাখার বিস্তারে
ঐশ্বরিক প্রেম-পবনে
আছে অগ্নিগিরির জ্বলন্ত লাভায়
প্রকৃতির প্রেম প্রহেলিকায়
আছে চাপ চাপ মৃত্যু-নিঃশ্বাসে

তবুও সাগরজল চারিদিকে অসীম প্রবাহিনী
আমি প্রবিষ্ট তারই মাঝে সাঁকোহীন প্রাণতরণী।

প্রত্যাখ্যান-- কোনো প্রতারণা নয়

ইনবক্সের প্রতিশ্রুতিগুলো
পিছনে পড়ে গেছে দূর শহরের মতো।
রাজনীতির কাঙ্ক্ষার রকমারী হতাশাকে
মিলাতে পারি আজকের তুমি-আমিকে।
সেখানে ফিরে বা খুঁজে দেখা সমীচিন খুব কী?
কিছু ছবি আছে প্রত্নের মূল্যে ভীষণ উজ্জ্বল,
তাদেরও দূরত্ব ধরাছোঁয়ার জ্যামিতিতে বন্দি।
তাই থাক ওরা ওখানেই ঘুমের বিছানে।
যদি সে ঘুম জাগাতে চাই
বেড়ে যেতে পারে দেনা-- প্রেম ও প্রত্যাখানে।
ওখানে অনুগত প্রেম ছিল,
তাকে যদি পৃথিবী বলো, তা ছিল দু’জনেরই।
আর আজ প্রত্যাখ্যান শেষে
যা কিছু জমেছে শূন্যতায় তাকে যদি খুঁজে দেখো,
পেতে পারো দু’জনেরই গড়ে তোলা অন্ধ কনডেম সেলে।

বিচারের রায় পড়বে না কোনো কালে, বিচারক কোনো।
আমি জানি, ‘প্রত্যাখ্যান-- কোনো প্রতারণা নয়।’ তাই
ইনবক্স জমা থাক কোনো দায়হীনার প্রেমের কুলুতানে,
থাক জমা প্রতিশ্রুত সব সূর্যসকাল।
ভালোবাসার প্রত্নে সকলেই জেনে যাক,
‘প্রেম ও প্রত্যাখ্যান’ কোনোটাই ছোট নয় মূল্যের বিচারে।

একটা ঘুমখুন রাত

ঘুমকে খুন করে
সারারাত অভিশাপের ধোয়াশার
রক্তে গড়াগড়ি করেছি।

ভালোবাসার ফলায় ক্ষত-বিক্ষত বিভৎস
ঘুমের শরীরী চেহারা থেকে
ছুটে আসছে দানবীয় তাণ্ডবে
কালো কালো বেগুনী নীলের
খুনপিয়াসী নগ্নশিশ্নের অক্টোপাসেরা।
শীতের বিছানে সরীসৃপ শীতলতায় অন্ধ অজগরের আলিঙ্গনে
মড়মড় করে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিচ্ছে সকল বক্ষখাঁচা!
অভিশাপের রক্তের বিকট দুর্গন্ধে
নিঃশ্বাস চেপে ধরেছে অতৃপ্তের আত্মা সকল।

অভিশাপের রক্তের রঙ কখনো লাল হয় না।
কালো কালো গহীন কালো!
আমার চোখগুলো
যেনো ভয়ের দিকহীন অদৃশ্য তন্ত্রের এক অন্ধকারাগার!
আমি তো ঘুমকে খুন করে রক্তের পিচ্ছিলতায় বুদ হয়ে
রাতের অভিশাপের বিকৃত গন্ধের
নোনা নোনা বিস্বাদ জিহ্বায় পড়ে আছি।

অতঃপর ভোরের মুয়াযযিনের সুর কানে ভেসে আসে,
"আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম"
দেখি, ঘামের জল প্রবাহে ধুয়ে গেছে
অভিশাপের ধোয়াশার রক্ত ও গন্ধ সব।

শেখ হাসিনা, শেখের বেটি

তুমি সৌভাগ্যবতী বাঙালিজাত
তুমি শেখের বেটি, আত্মজাত।

কেউ কেউ অতি আবেগে তোমাকে নোবেল জয়ী দেখতে চেয়েছিল
কেউ কেউ তোমাকে বলেছে, মানবতার জননী
আমি এমন পক্ষপাতে তোমাকে নতুনরূপে চাই নি।

যাঁর পিতা শেখ মুজিব, যাঁর রক্ত স্রোতে বাঙালি সাম্য-প্রীতি,
যিনি জীবনের পরতে পরতে লালন করেন চণ্ডিদাসের গীতি
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ বলো,
তাকে আর নতুন কোন অভিধায়, উচ্চতায় উঠানো যায়?
হিমালয় যেখানে আছে, যত উচ্চতায় আছে, সেখানেই থাক।

আকাশ সমান ভালোবাসা বুকে নিয়ে যে মানবী
পিতা মুজিবের বাঙালিমন্ত্রে দীক্ষিত, সেই আত্মজাতের অহংকার গ্রীবায়
অন্য কোনো পদক আর মানায় না।

তুমি অনন্যা, শেখ হাসিনা। তুমি শেখের বেটি!
এটাই তোমার শ্রেষ্ঠ পদক, তুমি মুজিব সূর্যের জ্যোতি!



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান