
নজরুল সাহিত্য
'অগ্নিবীণার' অনল দিয়ে পোড়াও অনিয়ম,
বঞ্চিতদের বন্ধু তুমি শোষণকারীর যম।
বাংলাদেশের কবি তুমি কাজী নজরুল,
তুমিই কেবল লিখতে পারো 'সিন্ধু হিন্দোল'।
প্রলয় শিখা, বিষের বাঁশি, সাপুড়ে ও ঝড়,
পুবের হাওয়া, ফণী মনসা, জিঞ্জীর ও নির্ঝর।
যুগবাণী, ধূমকেতু ও রুদ্র মঙ্গল,
গানের মালা, গুল বাগিচা, গীতি শতদল।
মধুমালা, চিত্তনামা, বনগীতি, বুলবুল,
মরুভাস্কর, নতুন চাঁদ ও সন্ধ্যা, ঝিঙেফুল।
সর্বহারা, কুহেলিকা, মৃত্যুক্ষুধা এই,
পড়লে পরে পাই খুঁজে পাই জীবন বোধের খেই।
ঝিলিমিলি, চন্দ্রবিন্দু, সঞ্চিতা, সঞ্চয়ন,
দোলন-চাঁপা, সাম্যবাদী, আছে রিক্তের বেদন।
রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম, কাব্যে আমপারা,
হক সাহেবের হাসির গল্প, বাঁধন হারা।
সুরসাকী, দুর্দিনের যাত্রী, দিওয়ানে হাফিজ আর,
শেষ সওগাত, নজরুলগীতিকা, সুরলিপি, জুলফিকার।
শিউলি মালা, সুর-মুকুর ও গল্প ব্যথার দান,
চোখের চাতক, পিলে পটকা, আছে ভাঙার গান।
আর 'রাজবন্দীর জবানবন্দী লিখেন জেলখানায়,
বিবিধ লেখা আছে আরো পড়তে পারেন ভাই!
বিদ্রোহী বীর বিশ্ব মাঝে আছে কে বা আর,
চক্রবাকের ওগো কবি, তোমায় নমস্কার।
মৌচাক
দিনের কাছে আলো আছে
আলো সবার চায়,
দিনকে সবাই ভালোবাসে
আলো মাখার দায়।
দিনের বেলা সূর্য হাসে
রোদে মাখামাখি,
দিনের আকাশ ভরা থাকে
হাজার রকম পাখি।
কোলাহলে মুখর এমন
যেন চাঁদের হাট,
সবাই সবার ভূমিকাতে
করছে দারুণ পাঠ।
দিনের আকাশ কোলে যেই না
দেয়া ডেকেছে,
ফুরুত পাখি রোদ তখনি
হাওয়া হয়েছে।
ফুরায় যখন আলো নাচন
আঁধার ঘনায় আসে,
যে যার মতো ছুটে পঁলায়
থাকে না কেউ পাশে।
অন্তদহন
কবিদের ভিড়ে আমি অকবি
কাকের কন্ঠ নিয়ে কা কা করি।
আমার কবিতা ব্রম্মপুত্র কিংবা মেঘনার মত নয়,
নয় ফিনিক্স পাখির উপাখ্যান।
আমার কবিতা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েনি চাতক-চাতকীর ডাকে,
মেটায়নি কারুর তৃষ্ণা।
আমার কবিতা ভাঙা মন দগ্ধ হৃদয়ের হয়নি উপশম,
রসদ হয়নি ফিলিস্তিনের।
আমার কবিতা ফোটায়নি গোলাপ।
আমার কবিতা চুপচাপ, মুখে তার কুলুপ পুরা,
বিদ্রোহ করেনি কখনও।
আমার কবিতা বুক চিতে দাঁড়ায়নি আবু সাঈদের মত।
আমার কবিতা প্রাণহীন, রসহীন।
আমার কবিতার ছন্দ চালে কারুর হৃদয় নাচে না।
আমার কবিতায় শিল্প নেই, অনুপ্রাস অন্ত্যমিলও নেই,
নেই কল্পচিত্র, গল্প, উপমা।
আমার কবিতায় দলছুট মানুষ ফেরেনি ঘর
ঘর পায়নি যাযাবর।
কিছু কবিতা
কিছু কবিতা,
ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে খুব, বিখ্যাত হয়।
কিছু কবিতা,
স্থায়ী, কালজয়ী, মানুষের মন মননে রয়।
কিছু কবিতা,
কল্পচিত্রে, অন্ত্যমিলে, ছন্দ রসে নিয়মের হোক।
কিছু কবিতা,
ক্ষনিকের সে ভুলে যায় লোক।
কিছু কবিতা,
ঠিক ভুল ভাবতে শেখায়।
কিছু কবিতা,
মনুষ্যত্ব, ক্ষমা, প্রেম ও ভালোবাসা জাগায়।
কিছু কবিতা,
পথে পথে আজন্মকাল সংগ্রাম করে।
কিছু কবিতা,
অযত্ন আর অবহেলায় হারিয়ে যায়, কাল গহ্বরে।
কিছু কবিতা,
উজ্জ্বল এমন সূর্যের মত!
কিছু কবিতা,
বীর বিক্রমে সমুন্নত।
কিছু কবিতা,
হৃদয়গ্রাহী, স্পর্শকাতর, বেদনার হয়।
কিছু কবিতা,
অস্থিমজ্জায়, সত্য সুন্দর ভুলবার নয়।
স্বাধীনতার আদ্যোপান্ত
আমরা সিংহভাগ মানুষ বাবার পছন্দে বাঁচি
মায়ের ইচ্ছায় খাই
বিয়ের পর, বউয়ের কথায় উঠবস করি।
আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা আছে।
ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রশ্নে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলে।
বাবার পছন্দ, মায়ের ইচ্ছে,
বউয়ের কথা শুনতে শুনতে, মানতে মানতে
আমিও এক সময় বাবা হয়ে উঠি।
আমার মধ্যে যে বীজ বপন করা হয়েছে দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে
আমি যে অত্যাচার সয়ে এসেছি
তা আজ বংশপরম্পরা, নিয়ম বা শাসন রূপে বুঝতে শিখেছি।
আমার ঝরে যাওয়া স্বপ্নগুলো, মৃতপ্রায় ইচ্ছেরা
হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আমাকে খোঁচায়।
আমি দিশা পাই, ইচ্ছে পূরণের।
আমার লালসার শিকার হয় আমার সন্তান।
আমি হরহামেশাই ভুলে যাই তারও ইচ্ছে থাকতে পারে।
তার মতামত গ্রাহ্য করি না।
কেননা, সে নেহায়েতি একজন শিশু।
সে জীবনের কিচ্ছু জানে না কিচ্ছু বোঝেনা।
আমি বাবা, জীবনের অনেক চরাই উতরাই দেখেছি
আমি জীবনকে চিনি, জানি।
বাবা নামক অস্ত্রের কাছে হেরে যাওয়া সন্তান
তার জীবনের সমস্ত সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দেয় পিতার পায়ে।
ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্ন এখানে অবান্তর।
হুরন বেওয়া
তুমি না কইছিলা
আমারে গঞ্জের হাটে নিয়্যা যাবা
হাট থাইক্যা। লাল জুল ফিতা, চুড়ি কিনা দিবা!
ভুইল্যা গেছ? তুমি খালি ভুইল্যা যাও!
যাও, তোমার সাথে কথা কমু না, আড়ি!
আচ্ছা, তুমি এতো ভুইল্যা যাও ক্যান?
কোনদিন দেখমু তুমি আমারেও ভুইল্যা গেছ।
সত্যিই কি তুমি আমারে ভুইল্যা যাবা?
আমারে ভুইল্যা গেলে তোমার সুখ হব?
যদি তোমার সুখ হয়, তয় ভুইল্যা যাইও!
আমার কষ্ট হইলেও অভিযোগ করমু না
তোমারে কাঠগড়ায় তোলমুনা
জিজ্ঞেস করমু না কি দোষ আমার?
আচ্ছা, তুমি সবসময় এমন চুপচাপ থাকো ক্যান?
তুমি তো এমন ছিলা না।
কত কথা কইতা
তোমার সুন্দর বচন ভঙ্গি আমারে মুগ্ধ করতো
তোমার কথা হুনতে হুনতে আমার কথা ফুরায়া যাইতো
আর এহোন দেহো, আমি একাই বকবক করতাছি-
ভাল্লাগেনা ছাই।
হোন, সংসারের মেলা কাম পইড়া আছে, আমি এহোন যাই,
তোমার সাথে আবার পরে কথা কমু।
দেয়ালে টাঙানো ছবির সাথে
এভাবেই রোজ কথা বলতো- হুরন বেওয়া।