তসলিমা নাসরিনের নিষিদ্ধ ৬ টি বই
তসলিমা নাসরিনের নিষিদ্ধ ৬ টি বই
নারীবাদী এই লেখকের লেখায় উঠে এসেছে ধর্ম-সমাজ-পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজস্ব ক্ষোভ, হতাশা আর আক্রমণ করেছেন সবকিছু ভেঙে ফেলার জন্য। ফলে তিনি সমালোচিত হয়েছেন, হয়েছেন নিন্দিত। লেখার কারণে হারাতে হয়েছে স্বদেশের ঠাঁই, হয়েছেন পরবাসী। তারপরও তাঁর কলম থামেনি। তাঁর মত প্রকাশে বার বার এসেছে বাধা, বেঁধে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তার মুখ, নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার বই। তাঁর নিষিদ্ধ ৬ টি বই নিয়েই আমাদের আজকের এই ফিচার।


তসলিমা নাসরিন। বাংলাদেশের এক বিতর্কিত নাম। নারীবাদী এই লেখকের লেখায় উঠে এসেছে ধর্ম-সমাজ-পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজস্ব ক্ষোভ, হতাশা আর আক্রমণ করেছেন সবকিছু ভেঙে ফেলার জন্য। ফলে তিনি সমালোচিত হয়েছেন, হয়েছেন নিন্দিত। লেখার কারণে হারাতে হয়েছে স্বদেশের ঠাঁই, হয়েছেন পরবাসী। তারপরও তাঁর কলম থামেনি। থাকেননি চুপ করে। তাঁর মত প্রকাশে বার বার এসেছে বাধা, বেঁধে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তার মুখ, নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার বই। তাঁর নিষিদ্ধ ৬ টি বই নিয়েই আমাদের আজকের এই ফিচার।

১। লজ্জা:

১৯৯৩ সালে সরকারী এক তথ্যবিবরনীর মাধ্যমে তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। সেই তথ্য বিবরণী অনুযায়ী, জনমনে বিভ্রান্তি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অঙ্গনে বিঘ্ন ঘটানো এবং রাষ্ট্র বিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্যপ্রকাশিত হওয়ার জন্য ‘লজ্জা’ নামক বইটির সকল সংস্করণ সরকার বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। প্রকৃতপক্ষে মৌলবাদীদের আন্দোলনের কাছে মাথা নত করা সরকার বাধ্য হয় বইটিকে বাজেয়াপ্ত করতে। মৌলবাদীরা তসলিমাকে দেশ ত্যাগেও বাধ্য করে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও বিশ্বের অনেক ভাষায় ‘লজ্জা’ বইটি অনূদিত হয়েছে। প্রাজ্ঞজনদের মতে শৈল্পিক বিচারে ‘লজ্জা’ উৎকৃষ্ট কোন সাহিত্য হয়ে ওঠে নি। কিন্তু বাবারী মসজিদ ধ্বংস হওয়ার পর বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া নৃশংসতা বিষয়ে নিজস্ব মতামতকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা গল্পের বক্তব্যটিকে মৌলবাদীরা নিতে পারেনি।

২। আমার মেয়েবেলা:

১৯৯৯ সালে নিষিদ্ধ হয় তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনীমূলক ‘আমার মেয়েবেলা’। নষ্ট ও গলিত পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটা মেয়ে যে প্রতিকূল পরিবেশের ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠে তাই বর্ণনা করেছেন নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। যৌননিপিড়িত হয়েছেন আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক তার বর্ণনাও উঠে এসেছে বইটিতে। বলেছেন তার মেয়েবেলার মনের আকুলিবিকুলিও। অশ্লীলতার অভিযোগে বাংলাদেশ সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে দেন।

৩। উতল হাওয়া:

‘আমার মেয়েবেলা’র দ্বিতীয় খণ্ড ‘উতল হাওয়া’ প্রকাশিত হয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে। বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বইটিতে ইসলাম বিরোধী তথ্য থাকার অভিযোগে বইটিকে নিষিদ্ধ করে দেয় আগস্ট ২০০২ এ। বলা হয়, এই বই ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত হানতে পারে।

৪। ‘ক’:

ময়মনসিংহের স্থানীয় ভাষায় ‘বলা’ কে বলে‘ক’। অর্থাৎ ‘কথাটি বল্’ কে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয়- ‘কথাটা ক’। সেই ‘বলা’ কথার বই ‘ক’ তসলিমা নাসরিনের আরো একটি বিতর্কিত বই। ২০০৩ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর সাহিত্য ও মিডিয়া অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে। কারণ বইটিতে তসলিমা নাসরিন তাঁর ব্যক্তিজীবনের ঘটনাগুলো খুব খোলামেলা ভাবে প্রকাশ করেছেন। বলেছেন যৌনতা ও ধর্ম বিষয়ে নিজের মতামত। ইমদাদুল হক মিলন, সৈয়দ শামসুল হক সহ বিভিন্ন জনকে জড়িয়ে নিজের জীবনের ঘটনা ব্যক্ত করেন। যদিও এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিলো। কবি ও ঔপন্যাসিক সৈয়দ শামসুল হক তসলিমার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানীর মামলা করে দেন। ফলে হাই কোর্ট কর্তৃক নিষিদ্ধ হয় তসলিমা নাসরিনের ‘ক’।

৫। দ্বি-খণ্ডিত:

আমার মেয়েবেলার তৃতীয় খণ্ড ‘দ্বি-খণ্ডিত’ নিষিদ্ধ পশ্চিমবঙ্গে ২৮ নভেম্বর, ২০০৩ সালে। বাংলাদেশে ‘ক’ নিষিদ্ধ হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্বি-খণ্ডিত’ নামে বইটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু এন্টি-ইসলামিক বিষয় থাকার অভিযোগে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

৬। সেই সব অন্ধকার:

ইসলাম ধর্ম ও হযরত মুহাম্মদ (স:) সম্পর্কে কূটক্তি থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ সালে নিষিদ্ধ করে ‘সেই সব অন্ধকার’ বইটি। সমাজকে আঘাত হানতে পারে এই ভয়ে তসলিমা নাসরিনের এই বইটিকেও আটকে দেয়া হয় নিষিদ্ধতার বেড়াজালে।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান