নাঈম ফিরোজ । ৫টি কবিতা
নাঈম ফিরোজ । ৫টি কবিতা
স্বৈর-রথ
আমরা অনন্ত কোনো নদীর কথা ভাবছি
তার কান্না পাচ্ছে এ-কথাও ভাবা যাক।
নেবুজল ও নেবুলা আরো ভাবাক্রান্ত করে
জুলাই যায়না, অগস্ট আসে আসে অই
বুদবুদের মতো সটকে পড়ে স্বৈর-রথ
হাওয়াভ্যন্তরে ভাসে নিতল শ্লোগানে, এলিজি
ইনকেলাব জিন্দাবাদ— ডেকে যায় রক্তঝরা পাখীরা
দূরের কথা অনেক বিস্ময় নিয়ে
কাছে আসে এবং স্থায়ী শান্তির গান গায়।
এই দেশ এই লোকালয়ে একদিন আরক্তিম,
আবার কেউ বুক পেতে দিয়েছিলো একাত্তরবাদ, চব্বিশে,
অকুতোভয়, অভিষিক্ত হয়েছিলো উড্ডীন পতাকার তলে
শহীদের মর্যাদায়।

পাজল্ড পাখীরা

বুড়ো হয়ে যেতে যেতে ভাবি— আসলেও অমর হব কি আমি?
মৃত্যুতো কত ভারী সুন্দর!
মৃত্যু— আমার জানালায়, নেইবারের আমের শাখায় রোদ, সূর্যের হাসির ইমোজি, কিউট একটা!
তৃতীয় ইনিংসের দিকে জীবনের কূটিল অভিযাত্রায় মৃত্যু এক মগ্ন ট্রাম..
এখনো নরম লাথিটা মনে পড়ে বাবার, কিম্বা তরল চোপাড় যত, ক্যারিয়ারের গ্রাফের উড়তে পারাটা, উপরে গিয়ে আবার সবটা উপড়ে যাওয়াটা, এসব সুন্দর খুব নষ্ট নস্টালজিয়া!
কখনো আলাপনে, ভুলভাল ভাবি, ভাবি বারগেন, মেলবোর্ন কিম্বা লিভারপুল, কোথাও সেটেল করে নেবো কীনা, ভাবি, লন্ডন কেমন? তাও কেমন যেন!
শীত সয়না, ওজনদার লাগে, শ্বাসাঘাত হয়।
অতীতে যিনি বা যারা আমার পূর্বতন মানুষ; ধর্ম— অনেক কিছু যাদের কাছে, অনেক দিয়েছে যাদের
অনেক তাদের ধবল টুপির নিচে— পাজল্ড পাখীরা বাসাটাসা বেঁধে থাকেটাকে এখনো নাকি?
আমি অনেক দূর যাবো, অনেক দূর খুব বেশি দূরে না।

গোলাপমেঘ

পৃথিবীর সমূহ ট্রেন কি সাপেদের অতীব্র সহোদর?
আমাদের স্নাতকসনদে আঁকা সূর্যরঙা যত সাপ
হিজলঘাস থেকে লুকিয়ে তাকায়— যেন উড়াল পর্বত ভায়া বৈকাল হ্রদ থেকে কমলাপুরে আসা জনশুন্য এক ফিরতি ট্রেন
দুর্দান্ত ঘূর্ণির এই অতিনীল বাতাসে
অবনত আলুলায়িত পাতারাও
জানে
পাগলপারা গাছেদের কাছে
তাবিজের জন্য আসবেন এক উননাবিকের মা
এমতাবস্থায় বলো, হে ঝড়নাভি— আমি বারমুডা ত্রিভুজে নিখোঁজ সব বিমানমালিকের সাথে গুলিয়ে ফেলবো এই অতুলন গোলাপমেঘ?
বিপাশা হতে যত জল এসে বেগুনি হয় রেইনট্রি
ঢাকার সমস্ত বুলভার্দ আর ক্ষীণতোয়া বনানী
সেসবের বাইরে আছে অবগুন্ঠিত জারুলের জিকির— শোনো?
জগডুমুরের বন,
তুমি সূর্যের ব্যাসার্ধে গৌরনদী হও,
অতীন্দ্রিয় সফেন সমুদ্দুর হয়ে রও
তদুপরি
ঘাসকন্যাদের ডেকে এনোনা রেমাল ঝড়ের কান্নায়

শাদা ম্লানিমার গান

বর্ষার শিসে সুবহে সাদিক নামে নামে
অফুরানে তবু
আঁধিয়ার ধেয়ে এলে—
পৃথুল নাগরিক জীবন
ফিরে আলোর কুহকে আসার আয়োজন সেরে নেয়
যেন এলম পাতা—
আঁকছে মহীয়ান বিড়ালের চোখে— অশিষ্টতার অধিবৃত্ত
দূর টীকাভাষ্য—
তোমাদের জর্জরিত অপছন্দ জুড়ে—
বাড়িয়ে দিতে থাকে— মাছে মাছে মতানৈক্য
জানা যাবে কীভাবে আর—
শাদা ম্লানিমার গান
অনর্গল এই জাজমেন্টাল প্রহরের শান!
এলমের পাতায় বিড়ালকর্ণিয়া ভেবে এসব আহবান বাজায় নিক্কণ কারা, কোন অরণ্যনাভিমূলে?
ঝরাপাতা মাঠে কোনো শিশুমহিষের চোখে—
তন্তুবায় মরে গেলে— নদীর রঙ বেমালুম ভুলে যাওয়া জলমোহনা ডেকে নেয় কারে?
আপ্লাবন থেমে থাকা পানসির দিকে
স্রোতমোহন—
এই ডলক বর্ষার ঠোঁটশিসে—
নিম্নলিখিত ম্লানিমা
কে মদমত্ত, আঁকে এখানে—
শুনহ— শাদা ম্লানিমার অই গান
আকাশ শাদা হয়ে এলে,
সুবহে সাদিকের দিকে অফুরান!

অচিন মুত্তাকী

এই ঘুম-পরিখা পেরিয়ে
স্যামন সব সুদূরসীমায় সন্তরণে চলে গেছে
পরিক্লান্তির দিকে দেউটী খোলা
আলুলায়িত চুলে তুমি শীতলতা
লালসার মধ্যে কী সৌম্যস্বভাব
রুপোপজানানা
কী অমাংসল তোমাদের স্মিতদেহ
তালগোল-হারা ট্রাপিজ এখনো
কেবলি বেগনি মানুষের অভ্যন্তরে সেতুর জন্ম হয়
এই ঘুম-পরিখা পেরিয়ে চলে গেছে অমলিন স্মৃতির সাইকেল— দিকচিহ্নে অফুরান— ছায়াশহরে সমাধিসৌধ আমাদের— তার কিনারে দাঁড়িয়ে অচিন মুত্তাকী—
তুমিতো সুন্দর ছিলে— সুবহানাল্লাহ
..সূর্যকান্তি, হেমবিহবল, থৈ থৈ!



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান