মাহবুব বারী । কবিতা গুচ্ছ
মাহবুব বারী । কবিতা গুচ্ছ
তিনটি ফড়িং

আগুন কী?
তিনটি ফড়িং একটি শূন্য ঘরের ভেতর
মোমবাতির শিখাকে
প্রদক্ষিণ করে করে উড়তে লাগল।
আগুন কী?
একটি ফড়িং প্রজ্বলিত শিখার কাছে উড়ে গিয়ে
উত্তাপে পালালো দিগ্বিদিক |
দ্বিতীয় ফড়িংয়ের একটি পাখা পুড়ে গেলে
সেও পালালো। আর
তৃতীয় ফড়িং আগুনে ঝাঁপ দিয়ে দগ্ধ হলো।
আগুন কী?
যে পুড়ে পুড়ে দগ্ধ হলো শুধু সেই জানে।

জড়ো করি ঝড়ো রাতের তারা

৪৪. স্বপ্ন
সাম্রাজ্যবাদীরা কখনোই
মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্ন কেড়ে নিতে পারে না
আমি তো মৃত্যুর পরেও তাদের চোখে স্বপ্ন দেখেছি !
৪৫. বিরোধ
এত কথা জমে আছে ! - বলা হলো না
প্রতি মুহূর্তে তারা নিজেরাই বিরোধে জড়িয়ে পড়ে !
৪৬, উপশম
মোহ আরা মায়া
সবকিছু ত্যাগ করে সন্ত হয়ো না
নিদারুণ কষ্টের দিনে তারাই একমাত্র উপশম !
৪৭. অপেক্ষা
মেঘলা দিন - মন খারাপ হয়ে যায়,
কারো তো আসার কথা ছিল না
তবু কেন অপেক্ষায় দিন কাটে !
৪৮.সুর
যখন নীরবতা নেমে আসে চারিদিকে
তখনও শূন্য হয় না এই পৃথিবী
সুরে সুরে পূর্ণ হয় হৃদয় !
৪৯. মিলন মানে
মিলিত হওয়ার চেয়ে
মিলনের বাসনাকেই জাগিয়ে রাখো বন্ধু
জানো তো মিলন মানে মৃত্যু !
৫০. চোখের দেখা
চোখের দেখাই দেখেছিলাম শুধু !
এখন সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দিকে
ফিরেও তাকাই না !
৫১. মনে রেখো
কুসুম-ফোটানো হাওয়া এল চারদিকে
মনে রেখো সখী, সেই কথাটি আমার
যে কথা তোমাকে বলিনি কখনো।
৫২. আবর্তন
পৃথিবী যেমন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে
আমিও তোমাকে কেন্দ্র করে
তেমনি আবর্তিত হই
কিন্তু কিছুতেই কাছে যেতে পারিনা
এমনকি দূরেও।
৫৩, মাত্রাছাড়া
সত্যেনের মতো আমি ছন্দের জাদুকর নই
এমনকি সাধারণ ছন্দজ্ঞানও নেই
কোনো মাত্রা মানে না আমার মন
আর তোমার ব্যাপারে তো মাত্রাছাড়া ।

সমুদ্রের স্বপ্ন

সমুদ্রের স্বপ্নগুলো বারবার হানা দেয় মনে ।
সমুদ্র আমাকে ডাকে
আমাকে ডেকে নিয়ে যায়
তার উচ্ছ্বসিত জলের জীবনে
তার গভীর গোপন অতলে, যেখানে
সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না কেমন করে
খেলা করে জলের ঘূর্ণনে; তারও
মানুষের জীবনের মতোই
জোয়ার আছে ভাটা আছে - তবুও তার
নীলরঙ জল নিশিদিন - নিরবচ্ছিন্ন
এক সুরের তরঙ্গে বয়ে যায়
আর আমার দুই চোখে তার স্বপ্নগুলো ছুঁয়ে দেয়
আর আমি ছুঁয়ে দিই তোমার ডাগর আঁখির কোণে।

সময়

১.
সময়ের সঙ্গে ধরি না পাঞ্জা, বন্ধু
সে তো হাওয়ার মতো
কোথা দিয়ে যায় সে
আর কোথা দিয়েই বা আসে, জানে না কেউ
তারে দেখি না উপরে-নিচে সামনে-পেছনে কোনোখানে
সময়, সে তো চলে সময়েরই সাথে।
২.
সময়কে তুমি ছুড়ে দিয়েছ একটি বলের মতো,
তারই খেলা দেখছি সকাল-বিকাল ।
হে ঈশ্বর, সময় কী?
হে ঈশ্বর, কীভাবে সময় চলে যায়?
হে ঈশ্বর, কীভাবে তার দেখা পাব আমি?
এই তো কিছুক্ষণ আগে বাদশা সোলায়মান জীবিত ছিলেন
আর এরই মধ্যে তিন হাজার বছর পার হয়ে গেছে!

কপালের টিপ
( বর্ণমালা আ থেকে র )

সারা রাত চৌবাচ্চার জলে চাঁদ ধরি।
ধরি ধরি আর ধরতে পারি না,
ভোর হওয়ার সাথে সাথে
কপালের টিপ হয়ে পথে নামে সে
নানান রঙে
বেগুনি নীল আকাশি হলুদ সবুজ কমলা লাল
আমি তারে এইভাবে পথে পাই, পথে পথে
চাঁদের মতোই আলো করে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে
আর নারীর হৃদয়ের মতো ভেঙ্গে পড়ে
পুরুষের হৃদয়ের ওপর ।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান