৫টি কবিতা । তাপস চক্রবর্তী
৫টি কবিতা । তাপস চক্রবর্তী
সিকেন্দার

যীশুরা ক্রুশবিদ্ধ হবে... মানুষজন আগুনে পুড়বে
আতংকে হাতমুখ ভাঙবে— কাঁদবে
এসব বলেছিল একদিন সিকেন্দার।
সংখ্যালঘুতে নয় সামষ্টিক কোলাহল আর
এবার সংখ্যাগরিষ্ট তত্ত্বের গুণনে হবে
ভাগশেষের ফলাফল দাঁড়াবে ক্রোধ--
কেননা,
যাচিত সংখ্যায় কেউ আছি— আবার কেউ নেই
তবু দেখো, পোড়াবাড়িতে বসত গড়েছে
অহঙ্কারের ক্রু,
অথচ চিনিরকলে আখের ছোঁবারায়
চড়কায় বোনা সাদাকাফনে
কফিনে
ভাসে দলাদলা পুঁজ রক্ত
এ যেনো বৈধব্য কপালে টকটকে লাল সূর্য
বিয়োজন পদ্ধতি ক্রমেই প্রখর হচ্ছে
বৈকালিক সহজতায়...
অথচ মাটির গানে যে মমতা ছিল বাঁধা
একদিন
সেতো নাবালিকার চুম্বন।
কামার্ত ষোড়শী নয়... আগুনে সয়লাব
সংখ্যালঘুর ঘরদোর
এবার চাই মায়ের মতো বৃদ্ধার ছোঁয়া।
যেতে হবে, তাই, গান বাঁধা এই
যীশুরা ক্রুশবিদ্ধ হবে, ঝলসাবে মুরগীর ছানা
ভাঙবে দেবতার হাত পা কোমর
কিম্বা কোমলগান্ধার
উঠবে পোয়াতির আগাম প্রসববেদনা
এসব চোখ বুঝে বলেছিলো একদিন সিকেন্দার।
অন্ধ বিশ্বাসের কোন সংলাপ নয় আজ
নয় ধর্মের বাদ-বিসংবাদ
আমি যাবো তুমিও যাবে— শুধু ছুঁয়ে যাব
আমার পোড়াবাড়ি ঘরদোর বুকের ভাঙা পাঁজর
ছোঁবো না আর কোনোদিন তোর আধপোড়া মনটা।

তবুও মাছ হবো

জোড়া দিঘি
চার পাড় মিলেমিশে একাকার।
দেখি—
সূর্যগ্রহন।
এদিকে ওদিকে কর্পূর জ্বলে•••
দেবতার হুতাশনে।
কারো কারো আজ
অষ্টমঙ্গলা।
সিঁদুর লেপ্টে আছে সিঁথি।
সঙ্গম শেষে জেগে ওঠে— ভোরের নদী।
রূপকথার নকশীকাঁথায়
হরেক রকমের বিন্যাসের ফলাফল
তবুও মাছ হবো— নীলাদ্রি একের বৈঠকে।

পূর্ণ সংখ্যা

কাল পাহাড়টা কিনে নেবো
দেখিস— সত্যি বলছি;
অংকটা এবার মিলিয়ে নিয়েছি
আজ শোবার ঘরে।
হাঁটুতে আজ তৈলাক্ত বাঁশ
পূর্ণ সংখ্যার
শেষের ঘরে যোগ করে নিস্
যতো শূন্যের মহারত্ন।
পাহাড়ের কোলে— ঘর বাঁধবে বলে
বিভ্রমে— মগ্ন ছিলি তুই বহুকাল।
দরদাম শেষ আজ
ফিরে আস— ওই পাহাড়ের কাছে
আজ হাতে হাত রাখবো ক্ষন।

কর্ণফুলি ও মেয়েটি

চৌকাঠ মাড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াও...
দাঁড়িয়েছো?
দেখো তোমার চোখ
নাক
ভ্রু
কপাল
কোপল...
দেখো তোমার চুলের ভাঁজে রঙিন সমুদ্র...
দেখেছো?
এবার হাতে নাও—
তোমার লালটিপ
লালফিতে
আলতা
স্নো পাউডার...
তারপর আস্তে আস্তে চোখ বুজো—
নিঃশ্বাস নাও
অনুভব করো নিজের অস্তিত্বের
শূন্য। একটা ভাসমান শূন্য—
শূন্যের মাঝে আর্যভট্ট।
এবার অনুভব করো— কারো রুদ্রশ্বাস...
এক
দুই
তিন....
এইভাবে ক্রমান্বয়ে উনসত্তরে স্থিতি হও...
হয়েছো?
এবার চটজলদি...
ইন্দ্রের মায়াজাল ছিন্ন করো, দেখো—
কেউ তোমার কাবেরী কেশ হাতড়িয়ে
পার হচ্ছে সমুদ্র।
অতএব আজ তোমার নোনাজল স্থির করো—
ভুলে যাও বিগত চাওয়া পাওয়া...
ভুলে যাও রাতের মতো সকল বেদনা...
এবার চোখ খুলো— দেখো
জোনাকির মিছিল
অতএব নিবু নিবু আলোয় দেখো
আমাদের পৃথিবী।
দেখেছো পৃথিবীটা কেমন... মরে আসছে!
হ্যাঁ আমার নদীটাও মরে আসছে
বিকেলের হাওয়ারা মরে আসছে
মরে আসছে লুসাই পাহাড়ের ঝর্ণাও।
হ্যাঁ ঠিক ধরেছো, ওটার নাম কর্ণফুলি—
ওর বুকে সাঁতরিয়ে ক্লান্ত হয়েছি বার-বার
অনেকবার...
রূপোলী মাছের বুকে তীর বিঁধিছি
শামুকের খোলস কুঁড়িয়ে রেখেছি
খুচরো পয়সার মতো।
প্রথম প্রেমে মশগুল হয়ে তুলে এনেছি নীলপদ্ম
কৈবর্তসংসারে জাল ও জল ভুলে...
হ্যাঁ ওপারেই আমার বসত...

রোদচশমা

এখন আর মৃত্যু নিয়ে ভাবি না,
যতোটুকু ভাবি—
ততোটুক হলো জীবন মানে রিক্সার টুংটাং শব্দ।
যেমন ফিরতি পথে রোজ রোজ তোমাকে দেখি
মতিঝিল হয়ে পুরানা পল্টনে...
আমিও কাওরান বাজার ঘুরে আসি চটজলদি
একটা পালংশাকের আঁটি কিনে।
কাঁটাবনের পাখিগুলো রোজ আমাকে দেখে
হাসে
আর বলে, আমারি বংশধর তুমি।
টিএসসির কুকুরগুলো জানে, পথের শেষ রেখা..
কিন্তু আমিতো জানি না শেষ কোথায়!
দাঁড়িয়ে দেখছো আকাশ কোথায়
পাখিরা কোথায় মিলেছে— কোনো নীলিমায়
আমিও রোজ দেখি ক্ষয়ে যাওয়া রিক্সার প্যাডেল
ছেঁড়া চপ্পল কোর্তা
আর তীর্ষক রোদে রোদচশমা তোমার বিহ্বল আঙ্গুল...
বেহুদা গদর্ভ হয়ে রঙিন হই, আজ-কাল-পরশু
দিন যায়, অথচ আমার আমিকে কেউ বোঝেনা
বোঝে শুধু মোড়ের চা ওয়ালা চাচা—
যে আমাকে দেখে;
রেসকোর্স ময়দানে আমার তাকিয়ে থাকা।
জনসভায় রাজনৈতিক বুলিতে ছুঁয়ে যায়—
ছুঁয়ে গেছে মানুষের নতুনত্ব।
অথচ গতকাল তোমাকে নিয়ে কি যেন ভেবেছি!
হ্যাঁ। ভেবে গেছি পুরোনো তোমার তুমিকে।
পথ ও তুমি, তুমি ও রোদচশমা
কেউ কখনও বুঝোনি—
আমি নামক এক পথিকের গতিবিধি।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান