অনুপ্রেরণাদায়ি খালেদ হোসাইন । আহমেদ বাবলু
অনুপ্রেরণাদায়ি খালেদ হোসাইন  ।  আহমেদ বাবলু

শৈশবেই ছড়া লেখার প্রচেষ্টা থাকলেও সিরিয়াসলি আমি ছড়া লেখা শুরু করি নব্বয়ের গণ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে, একদল তরুণ ছড়াকারদের ঈর্ষা করতে করতে। কাজী শাহীদুল ইসলাম Kazi Shaaheedul Islam, রুমন রেজা Rumon Reza, হাশিম মাহমুদ, দর্পন কবির Darpan Kabir, মোর্শেদ কমল আরও কেউ কেউ তখন আমার এই ঈর্ষার কারণ।

সেই সময়ে যেহেতু ফেসবুক ছিল না, তাই হয়ত সাহিত্য সভাগুলোর একটা রমরমা অবস্থা ছিল। সূক্ষ প্রতিযোগিতাও থাকতো লেখকদের মধ্যে, কে কার চেয়ে ভালো লিখবে তাই নিয়ে। সেই সময়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত কোনো একটা সংগঠনের সাহিত্য সভায় ছড়া পড়তে গেছি, সেখানেই আলোচক হিসেবে খালেদ হোসাইনকে সম্ভবত প্রথম দেখতে পাই। মনে আছে আমার ছড়ার ভীষণ প্রশংসা করেন তিনি। খালেদ ভাই সুদর্শন, সদা হাসিমুখ, চমৎকার বাচনভঙ্গি। আমি বয়সে তরুণ বলেই হয়তো লোকটি মনে গেঁথে গেলো। খুঁজে খুঁজে তাঁর ছড়া পড়তে লাগলাম। সেই সময়ের একটি ছড়া আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল, সম্ভবত এখনও ভুলিনি।

বাজার থেকে বাড়ি ফিরে
চেঁচান মিয়া খন্দকার
কইরে তোরা কোথায় গেলি
চোখে দেখি অন্ধকার

বাজার থেকে মাছ এনেছি
সব্বাই তোরা দর দেখ
সাত টাকাতে আজ কিনেছি
একটা মাছের অর্ধেক।

০২

মাঝখানে আমি ছড়া লেখা ছেড়ে দিলেও ২০১০ পরে আবারও লিখতে শুরু করলাম। ইতোমধ্যে ফেসবুক নামক অস্থির করা বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। দেশের নানান রকম অনাচারের খবর পাই হরহামেশা। দুয়েকটা রাজনীতি সচেতন সংগঠনও আমার উপর প্রভাব ফেললো। সুতরাং নব্বইয়ের পরে আবার যে ছড়া লেখা শুরু করলাম স্বাভাবিক ভাবেই সেই ছড়া হয়ে উঠল সমাজ ও রাজনীতি সচেতন। ২০১২ সালে আমার প্রথম ছড়ার বই প্রকাশিত হয় সমগীত প্রকাশন থেকে, নাম- "ভাবনা ভরা, ছন্দ ছড়া", মনে মনে বাসনা আমার ছড়া মানুষকে ভাবাবে। আমি নিরাশ হইনি। ব্যাপক মানুষের প্রশংসা পাই। বইটির প্রথম সংস্করণ তখনই প্রায় শেষ হয়ে যায়।

সম্ভবত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী। আমি কোনো একটা ট্যুরে যাচ্ছি। কেউ একজন ফোন করে বললো "ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন" দেখতে, তখন না দেখতে পারলেও পরে দেখেছিলাম, সম্ভবত রাজনীতি সচেতন ছড়া বিষয়ক একটা টকশোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন প্রিয় ছড়াকার সেই খালেদ হোসাইন। ব্যাকগ্রাউন্ডে কয়েকটা বইয়ের প্রচ্ছদ বার বার ঘুরে ফিরে দেখানো হচ্ছে। এবং আমাকে বিস্মিত করে তারমধ্যে "ভাবনা ভরা ছন্দ ছড়া" বইটি আছে।

০৩

ফেসবুকের কল্যাণে একসময় খালেদ ভাইকে পেয়ে গেলাম। মন দিয়ে তাঁর ছড়া পড়ি আর আমার মন খারাপ হয়। মন খারাপ হওয়ার কারনটা বিচিত্র। অর্থাৎ তাঁর ছড়া লেখার মান আগের চেয়ে কমে গেছে তা কিন্তু নয়, বরং তা আরও বেশি মনোগ্রাহী। ছন্দময়। চমৎকার। কিন্তু আমার কেবলই মনে হতে থাকল, একজন লেখকের সমাজের প্রতি মানুষের প্রতি যে দায়বদ্ধতা থাকা উচিত সেই চেতানায় আমি খালেদ ভাইকে দেখতে পাচ্ছি না! তিনি তখনও শিশু-কিশোর, স্বপ্ন-প্রেম কিংবা প্রকৃতি নিয়ে ছড়া লিখছেন, অথচ মানুষের যন্ত্রণা, সমাজের সংকট, রাজনীতির নোংরামি এসব তাঁর ছড়াতে নেই। ভেতরে ভেতরে এক ধরনের রাগও তৈরী হতে থাকে।

এই আমিই একদিন উপলব্ধি করলাম, সিরিয়াস ছড়া লিখতে লিখতে নিজে আর শিশুতোষ কোনো ছড়া লিখতে পারছি না।যন্ত্রণা হচ্ছিল। মনোবেদনায় একবার একটা পোস্টও দিয়ে ফেললাম "রাষ্ট আমার শিশুতোষ মনের হত্যাকারী"।মনে মনে খালেদ ভাইকে আবারও বোধ হয় ঈর্ষা করা শুরু করেছি। অথচ আমাকে অবাক করে দিয়ে একজন খালেদ হোসাইন ঠিকঠিকই সেইসব ছড়া লেখা শুরু করলেন, যা নিয়ে তাঁর প্রতি আমার অভিমান ছিলো। মাঝে মাঝেই উঠে এলো সমাজের প্রতি মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ খালেদ হোসাইনের নানান বিষয়ের ছড়া। সে তনু হত্যা , শিক্ষক অবমাননা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এমনকি বাংলাদেশের ক্রিকেট বা ফুটবলের জয় নিয়েও খালেদ ভাইকে দেখি একের পর এক দারুন সব ছড়া লিখে যান। তবে এরমধ্যেও চিরচেনা খালেদ হোসাইন ঠিকঠিকই নিজস্ব বিষয় ও ভঙ্গিমায় বিদ্যমান থাকেন। খালেদ ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ফিরে পাই। ফিরে পাই অনুপ্রেরণাও। আজ খালেদ হোসাইনের জন্মদিন। আপনি আমার শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা গ্রহন করুন হে অগ্রজ।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান