আসাদুজ্জামান রোকনের ছয়টি কবিতা
আসাদুজ্জামান রোকনের ছয়টি কবিতা
১. অন্তরযন্ত্রের দহন

কালবৈশাখীর ঝড়ের তুফানে একবার এসে দেখা দাও তুমি প্রেয়সী
ঘুঙুর বারিশে্ খণ্ড খণ্ড শীলার দাপটে তন্ন তন্ন হয়ে যাক হৃদয় আমার
গভীর রাত্রি, গভীর ঝটিকা, গভীর প্রেমের টানে মাতোয়ারা
ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ নিষ্ঠুর বিদ্রোহী আমি!
হদিস পাচ্ছো? কতটা ভয়ঙ্কর আমি কালবৈশাখী! 
প্রমত্ত মহাকালের দনুজ যানের নাবিক হয়ে যাই
উত্থাল ঢেউয়ের প্রেমে হাল ছাড়া ভীম!
প্রেয়সী!
প্রজ্জ্বলিত খোদার চাহনির তড়িৎপৃষ্ট ইবলিশ— ধ্বংসের দ্বারে আমি এক উন্মাদ প্রেমিক! 
পর্বতশৃঙ্গের পস্তর খসে পড়া
মিকাইলের প্রলয় চিৎকারে দণ্ডায়মান খোদা-সংঘর্ষ
প্রেম আমার!
প্রেয়সী!
আমি এক বিদ্রোহী প্রেমিক।
পুরাণ-কোরান-খোদাদ্রোহী-অন্তরযন্ত্রের জ্বালামুখী অগ্নিবাণ আমার প্রেম!
প্রেয়সী!
সেই প্রেম তুমি বুঝবে না।
সেই প্রেম তুমি বুঝবে না!



২. আক্রোশ

বারবার জাগ্রত হই, নিষ্পেষিত প্রাণে বসন্তী পবন
বারবার শিহরণ তোলে; অগ্নিবাণ বাহুভূষণে পুনরায়
দাড়াঁ হই সাংঘাতিক প্রতিকুলে আর ধ্বংস করি অবিরাম—
নিরন্তর তিমির অশরীরী খুন করে লাল কিরণ ফোটাই!
দাহ করি ধূর্ত প্রতারকের তারকাশোভিত বিলাস পৃথিবী।
কংকালসার নিরন্নদের অঙ্গে পরাই রঙিন পোষাক-
মশালে পোড়াই সীমাহীন ক্ষুধাতুর প্রবৃত্তি! 

রক্তস্নাত এ শরীরে শুধুই আগুন-গন্ধ
পশমের কুপে কুপে ফুলকিত রোষ
কঠিন পাঁজরে দগ্ধ ইস্পাতের দাগ—
জমাট ক্ষোভের মশাল অন্ধকারে জলে ওঠে আজ!
জীবনের ফুৎকারে; চঞ্চল তারুন্যে আর মানায় না সব
নীতির পোষাক।
মাতাল সমীর, শ্রান্ত বিদ্রোহীর বুকে আনে অটল শক্তি।
বেজে ওঠা উল্লাস মুখর মিছিলের কণ্ঠে—
কঠিন রোষের ফুঁৎকারে উড়ে যায় প্রাচীর



৩. প্রাগৈতিহাসিক 

শিল্প আমি চলে যাচ্ছি
চিত্র আমি চলে যাচ্ছি
নগর, বন্দর যাচ্ছি চলে
সভ্যতাকে ছেড়ে বর্বরতা আলিঙ্গন করতে যাচ্ছি
তোমাদের আণবিক-সংসারে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়
চোখ জ্বালা করে, মগজে মরক ভর করে
নগরের বিষবাষ্প পান করে অবসাদগ্রস্ত আজ! 
তাই যাচ্ছি চলে
আদিম কোন প্রস্তরযুগে



৪. হিংসা 

কিছুটা আবেগ আর কিছুটা ক্রোধ আমাকে
নিঃসঙ্গ সড়কে নিয়ে যায় ঠেলে ঠেলে
ঐতিহাসিক নিষ্প্রভ ফ্যাকাসে ভগ্নস্তূপে,
নিবিড় সবুজ অরণ্যের নিমজ্জিত মোহনায়।
রৌদ্রতপ্ত ধানক্ষেতে কৃষকের কাস্তের তীক্ষ্ণতা 
আর ইটভাটা, মিলকারখানার শ্রমিকের হাতুড়ির 
আঘাত আমাকে প্রচণ্ড আবেগি করে তোলে
ধরিত্রীর শোভমান বৈষম্য, বর্ণবাদ,
আনবিক-সহিংসতা আমাদের মধ্যে বিপ্লব সঞ্চালন করে।
ভীষণদর্শন দ্রিমি-দ্রিমি স্বভাবে আমরাও
সলীলের সুরে গেয়ে উঠি,
"হেই সামালো ধান হো
কাস্তেটা দাও শাণ হো"



৫. খরিদ্দার 

চারদিকে রমরমা ব্যবসা চলিছে
আমরা ঠেকাবার কেউ নই,
খরিদ্দার হইয়া আমরা 
শোভমান বাংলাদেশে ফকিরের বেশে
পান্তা আনি নুন খাই!


৬. নিষ্পাপ 

তুমি লুকাও আমার বুকে নির্ভাবনায়, তুমি
থাকো আমার চতুর্দিকে- আমি দুর্বৃত্ত কখনো নই, ছল
করে তোমায় ছোবনা, খুন করবনা, যেন রেখ!

সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান