কচি রেজার পাঁচটি কবিতা
কচি রেজার পাঁচটি কবিতা

অকৃতিত্ব

ইডিয়েট, কেনো নিজের কৃতিত্ব শোনাচ্ছ?
শেখো নক্ষত্রপুঞ্জের কাছে, ছাতিম গাছের দিকে, দেখো
কিভাবে গোপন রেখেছে ছায়া এবং মায়া
মরবার আগে সম্পূর্ণ ঢুকে পড়ো বীজের ভিতর
আংটিটা খুলে লক্ষ্য করো হরিণের বিস্মিত ভংগী
যে স্বপ্ন রোমন্থন করছ, সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই তোমার
জিজ্ঞেস করো তোমার ব্রেন সার্জেনকে
তোমার মাথায় সে কিছু টিস্যু দেখেছে মাত্র, কবিতা নয়।


মিথ্যা

নোট চাইতে রোজ বাড়ি আসতো যে সহপাঠি ছেলেটি
যাকে আমিই উসকেছি আগে আর চুমু খেয়েছি
অথচ ধরা পড়ে বলেছি, কুত্তা, ছোটোলোকদের একদম প্রশ্রয় দিতে নেই, মা'
যেমন প্রাইমারিতে কয়েকবার আমি অংকে শূন্য পেয়েছি, বলেছি?
এতোদিন অনেক মিথ্যে বলেছি অবলীলায় নিজের পক্ষে বানিয়েছি শব্দ
ব্যাংকের পুকুর সাঁতরে এপার-ওপার করতে গিয়ে সোনার চেইন হারিয়ে মা'কে
নির্দ্বিধায় বলেছি, সেদিন তো আমি গলায় কিছু পরিই নি, মা
এইসব অল্প করে কিছু আজ জানালাম
পরে আবার কোনোদিন বলব, সত্যিটাই বলব।

লকড ডাউন--১

ভালোবাসি গাছ মেঘ আকাশ এবং আকাশ থেকে
নামা উদ্ভাসিত ভোর
যাপন করি এক দুরাগত, আভাষিত ছায়া
যদিও বা কখনও খুব কম সময়ে নিজেকে
ভালো মানুষ দেখাতে চেয়েছি
আদৌ চাইও নি
কাঁচাঘুম ভেঙ্গে দেখেছি
প্রকাশ হচ্ছে পাখির
গির্জার ঘড়িতে নিভছে সিমেট্রির মোম
উলটানো রাতে আমি কুড়োচ্ছি
আলোর হামাগুঁড়ি
ভেজা চুলের কাঁটায় আজ বুঝি আষাঢ় ?

লকড ডাউন--২

কতকিছু আমি সইয়ে নিয়েছি চোখের অসুখ বলে। এখন বসে আছি ঠিক রাত্রির পাশের চেয়ারটিতে। চকিতে জ্বলে উঠছে পাহারাদারের আলো। এই আলো ক্ষীন্ন করে, ক্ষুদ্র করে যেন কোলাহল করে ওঠে মৃত্যু।
অপমান নিয়ে ভাবি, ভাবি প্রত্যাহার নিয়ে
স্বাগত জানাই সেই স্বপ্ন, সেই পাথর যা রক্তাক্ত করেছে অসংখ্য অশ্রু মেখেও ।
কোনো গাছ অথবা রাস্তার কুকুরও আজ অন্ধকারে ঘুমায় না। জেগে থাকে ফনি মনসা, অন্ধকার এসে বসে থাকে অন্ধকারের পাশে ।
জিভের আস্বাদনে আজ হারিয়ে গেছে অভিমান। কোনো স্বেচ্ছাচার এসে বলেনা, এসো, হত্যা করি, অনেক আশা অনেক ভালোবাসা অনেক আঘাত। এসো, আজ কবিতা হত্যা করি।
তিনটের রাত। বাইরে জ্বলজ্বল করছে এল ই ডি লাইট। তবু অন্ধকার তো অন্ধকারই এমন । নিজের দেহ থেকেই যেন বেরিয়ে আসা।।
কে বলে অন্ধকারের গন্ধ নেই। নির্জন রাস্তার গন্ধ , দু একটি যাত্রী বিহীন ক্লান্ত রিকশার গন্ধ আর এম্বুলেন্স। হ্যাঁ সবচেয়ে তীব্র গন্ধের ঝাপটা আসে এম্বুলেন্স থেকেই।
মৃত্যুর আগে রঙ উঠে যায়, মুখের?
যেমন এই সময়টায়, এই সিনথেটিক্স রাতে রোজ ঘুম ভেংগে, রাত যেন ওড়ে আর ওড়ে
ফ্ল্যাটবাড়ির ভেন্টিলেটর
ফুসফুস নিংড়ে নিঃশ্বাস ফেলি
পাশাপাশির গাছগুলো ছুয়ে চেষ্টা করি আরোগ্য হওয়ার। ভীষণ ভীত বোধ করি ওই শয্যায় ওই মশারীর ভিতরে ফিরে যেতে।
বৃক্ষ, দাও আমাকে অজস্র পাতা। মৃদু করো তোমার নখের মতন।

লকড ডাউন---৩

খুব ভোরে উঠি, ভোরটা কিছুতে ফসকে যেতে দেইনা, দেখি সামনের পথ আজ কততম নির্জন। দেখি বড়ো রাস্তায় দু একটি গাড়ি বা রিক্সা। রবীন্দ্রনাথ বেজে যাচ্ছে রুমে। আমার একলা রুমে।
"তুমি কোন ভাঙ্গনের পথে এলে সুপ্তরাতে
আমার ভাঙ্গলো যা তা ধন্য হলো চরণপাতে"
টবের নিমগাছের শেকড় শুকিয়ে গেছে। আর কিছু গন্ধহীন ফুল গাছ। একটি তুখোড় বেড়ে ওঠা ফনি মনসা। সবার জল চাই। মেঘ হীন আকাশ। ঝড় বৃষ্টিহীন দিন। বিরুদ্ধ সময়!নিচে যাইনা। মৃত্যু কি নিচে, সিড়িতে, গেটে, পা বাড়ালে রাস্তায়? কয়েকটা কবুতর তবু ওড়ে। এসির জল খায় ঠোঁটে করে। সব কি ঠিক ঠাক? হেঁটে যেতে পারি। পারবো যতদুর ইচ্ছে? পারবো হাট বাজারের ভিতর মানুষ, মানুষের কনুই ঠেলে আর একটু এগোতে। কোন ভাঙনের পথে চলেছে পৃথিবী।
এইকি আমার স্ট্রবেরি রঙের জগত?
টবের গাছগুলো দেখি। এতদিনে বুঝতে পারি ওদের নীরবতা ! বুঝতে পারি কি কথা ওই বাকলের সাথে পাতার, কান্ডের সাথে হাওয়ার। আমার সঙ্গেও হয়তো বলেছে।
আজ শুনি। জল দিই, বুঝতে পারি শেকড়ের পিপাসা ।স্নানের পর বারান্দার তারে কাপড় মেলতে গেলে, গাছটি অবিকল নিমগাছের গলায় বলে ওঠে, জল দাও মা। একটু জল।

সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান