কুমার দীপ-এর কবিতাগুচ্ছ
কুমার দীপ-এর কবিতাগুচ্ছ

 

 

এই অনাত্ম সংসারে

 

এই অনাত্ম সংসারে-

এক হাতে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে

অন্য হাতে গোলাপ ফোটানোর সাধনা

তার নাম-

কবিতা-জীবন

 

প্রতিহিংসার শরশয্যায়

রক্তাক্ত হয়েও

ভীষ্মের মতো অহিংসার কপোত ওড়ানোর চেষ্টা

তার নাম-

সাহিত্য-সাধনা

 

এই অনাত্ম সংসারে

কবিতার চর্চা-

আততায়ী গ্রেনেডের বুকে মাথা রেখে

মৃত্যুর গরলে

ডুবে যেতে যেতে

মধুময় জীবনের কথা বলা;

 

সাহিত্যের সাথে থাকা মানে-

অজস্র¯ নাগিনীর ছোবলে

নীল হতে হতে


 

আলোয় মোড়ানো

সকালের কথা বলা

 


সততা, একটি পরাজিত স্বপ্নের নাম

 

পথ শুধু পথিকের নয়

 

সারি সারি ফলের দোকান

আপেল, কমলা, আঙুর, ডালিম, লিচু...

সকলে তালিম নিয়েছে ডালহীন অনবদ্য ঝুলে থাকার

 

একটু কাছে গিয়ে দাঁড়াই

আপেল বলেআমাকে দ্যাখো, কী সুন্দর,

কমলা জানায়,

চোখ থাকলে, আমার দিকেই তাকাও

আরে না, আমরাই একমাত্র খাবার,

যারা বৃক্ষের থোকাগুলোকে মান্যতা দিয়েছি ঢের

--এ কথাগুলো গায়ে গা-ঘেঁষে ঝুলতে থাকা আঙুর বোনদের

সুদৃশ্য ডালিম সম্প্রদায়, যারা কিনা ইদানিং

আনার কিংবা বেদানা ডাকে নিত্য গদগদ

হেসে হেসে বলে, তোমরা আসলে বোকা,

বাইরের থেকে যাদের কোমল ত্বক তোমাদের

সুড়সুড়ি দেয়, তাদের দিকেই যাও;

ওইসব বাদ দিয়ে চেইনের ধরনে খুলে দ্যাখো আমাকে

কী রক্তিম কামনা লুকিয়ে রেখেছি এই শরীরে !

 

আরও কেউ কেউ কথা বলতে চায়

হয়তো বলেও

 

থমকে দাঁড়াই

ভাবি, এই ফলগুলোও কি ইদানিং মানুষের মতো হলো !

 

বাইরে-

বিউটি পার্লার

ভেতরে-

বিষের আধার

 

 


প্রিয়মুখগুলো

 

 

তোর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় না কতদিন !

একথা সত্য কি ? অহরহই তো হচ্ছে !

ওই যে, তুই এখনও বসে আছিস

তোর চেহারাটা কিন্তু ওদিকে এগোচ্ছে

 

তোমার সঙ্গে মুখোমুখি বিকেল বসে

ঝিলে; শালুক পাতারা সিগ্ধ ছবি আঁকে

কতো বছর আগের সেই শিমুল ডালের পাখি !

ধুর, প্রতিদিনই তো মুখোমুখি হচ্ছি , ওসব কি আর থাকে ?

 

আপনার মুখে, আপনারই বাণী শুনবো বলে

কতো দিন যে কেটেছে ধেয়ানে ধেয়ানে !

এখন আর তেমন ভাবছি না; ভাবতে হচ্ছে না

যখন তখন পাচ্ছি গুরুমুখ, যেখানে-সেখানে

 

প্রিয়মুখগুলো- ফেসবুক হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে

চারদিকে এ্যাতো মুখ দেখি

তবু সেই মুখগুলো কই ?

মনের ভেতরে তড়পাচ্ছে জাদুকর

ঠিকানাশূন্য পত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ

কেউ নেই, কারা লুকিয়েছে বই ?

 


ব্রাত্য প্রলাপ-৭

 

কতো দিন

দীন হয়ে রয়

কতো রাত

হয়ে ওঠে

দিবসের আলো,

বাসনা

বিয়োবার আগে

দুর্মতি

দ্বিপদেরাই

গীত হয় ভালো

 


গোলাপে রক্তের ছোপ

 

পুনশ্চ নেমেছি জলে- নিষেক আশায়

 

পুকুর, খাল, নদী এমনকি সাগর বলেই জানে সকলে;

এই খররৌদ্রে

কেউই পারে না দিতে আশ্রয়- সমূহ শীতলতা;

 

এমনকি সাইবেরিয়ার শ্বেতরাশি,

প্রশান্তর গভীর তলদেশ থেকেও-

আদিগন্ত উঠছে শিখা, ভাসছে আগুনের মেঘ;

 

যারা ভাবছিল মঙ্গল অথবা মহাশূন্যে ভেসে

সেরে নেবে আগামীর চড়ইভাতি, সান্ধ্য ভ্রমণ

তারাও ছুটছে জ্ঞানহীন-দিগি¦দিক;

 

পুনশ্চ নেমেছি জলে, জলাঙ্গীর পথে

আরও কেউ কেউ নামবেও নিশ্চয়

অথচ, মেঘ-নদী-সাগর...

 

ধুয়ে দিতে ব্যর্থ

গোলাপে রক্তের ছোপ

 

--

২৫/০৪/২০১৯


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান