জসীম উদ্দীন মুহম্মদ'র ৫টি কবিতা
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ'র ৫টি কবিতা

কবি : জসীম উদ্দীন মুহম্মদ


নিহত শব্দের পদাবলি


বেশ কিছুদিন নিহত হয় .. আমার কেবলই কিছু
অভব্য অব্যয় পদের কথা মনে হয়
এই যেমন.... যদি, গদি, তবে, কিন্তু, এবং, বরং
এই জাতীয় আরও কিছু কিছু বেহায়া শব্দঝুড়ি!

একদিন ক বলতে ম বলে ফেলায় মস্তবড় প্রমাদেরা
আমোদ প্রমোদে মেতে উঠেছিলো
আর এখন যদি বলতে আমি পুরোদস্তুর গদিকে বুঝি
ভালোবাসা বলতে কেবল বর্ণমালার চোরাচালানকেই
বুঝি!

তবুও.......
আজকাল কিছু নিষ্পৃহ নীরবতা নীরবে নিষ্পেষিত
হয়
আমিও ফাঁকতালে ভালোবাসার চোরাকারবারি হই
তবুও কেউ কেউ তসবি হাতে তদবিরের নামজারি
করতে ব্যস্ত হয়
আমি ভুলেও আর বর্ণমালার কবিতা লিখি না!!

কে তবে জানে না....
যে অব্যয়ের বোধ জলে ফিরে গেছে,
সে আর কোনোদিন ফিরবে না, কোনোদিন না!
আবারও বলি মাতৃভাষার কদর বুঝে না কোন শালা?
তবুও কেনো নীরবে কাঁদে আমার প্রাণের বর্ণমালা?

প্রচ্ছদ


দিনান্তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যখন আমি ঘুমাই.......
তখনো কি আমি মানুষ?
নাকি আপাদমস্তক মানুষে মোড়ানো একজন ঘোড়া?

অনেক প্রশ্নের মতো এই প্রশ্নটিরও আমার কাছে কোনো জবাব নাই
এই যেমনঃ
শক্তি থাকলেই কি যে কাউকে চড় মারা যায়?
হাত থাকলেই পরস্ত্রীকে আদর করা করা যায়?
ক্ষমতা থাকলেই কি কারো অধিকার ভোগ করা যায়?
মুখ থাকলেই কি ধনুকের মতো মুখ বাঁকানো যায়?
ইত্যাদি... …. ইত্যাদি!!
অনেককিছুর মতো আজকাল ....
এসব প্রশ্নেরও আমার কাছে কোনো জবাব নাই!

আমি কেবল একলা আমার মতো......
তেলাপোকা, গিরগিটির মতো অন্ধকারে টিকে থাকতে চাই

আসন্ন বইমেলায় কোনো বইয়ের প্রচ্ছদ হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাই!!


নোলক


পুনশ্চঃ আমি প্রাগৈতিহাসিক কালে ফিরে যেতে চাই
লেংটাবাবারা এখন সবচাইতে ভালো আছেন....
তাঁদের সত্য-মিথ্যার কোনো প্রকার রোগ-বালাই নাই..!

কোনো একজনের
পেছনে জানিয়া বুঝিয়া কবিতাকে লেলাইয়া দিয়াছিলাম
তিনি এখন ডিকশনারি কিনে অপ্রচলিত, দূর্বোধ্য, কঠিন কঠিন
শব্দ রপ্ত করেন
বড় কবিদের বই ঘোটা করে উপমা, অলংকার আপ্ত করেন।

আমি প্রাগৈতিহাসিক আমলের নোলকের কথা ভাবি.....
সেরের উপর শোয়া সের, দেড় সের এবং দুই সেরের কথা ভাবি
যে করেই হউক...
আমাকে কবি হতেই হবে...., আমি সেই কথাও ভাবি!!

পাদটীকাঃ সুপ্রিয় পাঠক কবিতাটি গুরুচণ্ডালী দোষে দুষ্ট।

কবিতা


মাঝেমাঝে খুউব মন চায় কবিতা লিখে গোলা ভরে দিই
যেমন করে কিষাণি আউসের গন্ধ দিয়ে গোলা ভরে দিতো
আমিও তেমনি কিছু নগ্ন, অর্ধনগ্ন শব্দের চাষী হই
দেবোত্তর সম্পত্তির মতো কবিতাকে ভোগ করতে থাকি
ভোগ করতেই থাকি... করতেই থাকি. !!

পথের উড়ন্ত ধূলিকণাও জানে
এখন ভালোবাসা ছাড়াই প্রেমের দোকানদার হওয়া যায়
কোনো খরিদ্দার লাগে না!
খিলিপান চিবিয়ে চিবিয়ে উলংগ ঠোঁট লাল করা যায়
প্রজন্মপাখির ঘাড়ে বসে যা কিছু খুশি গিলানো যায়
ছারপোকাদের কোনো টিপসই লাগে না!

কবিতাদের কোনো ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছা থাকতে নেই...
আমারও খুউব খুউব ইচ্ছে হয় বাবল গামের মতো...
যতোখুশি কবিতাকে চুষি.. চুষতেই থাকি....
চুষতে চুষতে যখন খুশি উচ্ছিষ্টগুলো ফেলে দিই দিকবিদিক...
সাগর
ভাগাড়
জলাধার..
ওরা সবাই সবকিছু ভাগাভাগি করে খেয়ে নিক..নিক!!!

রেবেকার রাত্রি লুট হয়নি
রেবেকার রাত্রি লুট হয়নি
ঘুমের ঘোরে এমনি কতো দুঃস্বপ্নে রেবেকারা কেঁদে উঠেই
আমি ভাবছি আমরা যারা জেগে জেগে ঘুমাই তাদের কথা
তাদের কি রেবেকার মতো লুটেরাদের ভয় নেই?

আজকাল আকাশে কবিতা লেখা হয়
আজকাল বিষন্ন বাতাস মুদ্রণযন্ত্রের ভূমিকা পালন করে
আমি রাস্তার অথৈ নীরবতায় জবরদস্ত তাম্রলিপি দেখি!

কে জানেনা, মাটি আর শিলায় মল্লযুদ্ধ হয়না----
শিলায় শিলায় ঠিকই আগুনের ফুলকি বের হয়!!


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান