প্রদীপ আচা‌র্য'র তিনটি ক‌বিতা
প্রদীপ আচা‌র্য'র  তিনটি ক‌বিতা

জলজ অন্ধকারে মু‌ছে যাক অক্ষমতা

সঙ্গোপনে কোথাও তুমুল বৃষ্টি ঝরে আজ
এক আকাশ ঘন কালো মেঘ
অন্ধকার ছড়ায় ঘরময় ,
মুগ্ধ অন্ধকার সমর্পণে ডুবে যাই...
আমাকে ডাকে না কেউ বৃষ্টি ঝরার ক্ষণে
মুহুমুহু যেন না ডাকে কেউ দুর্নিবার পিছুটানে
অন্ধকারে ঝুম বৃষ্টি নামে ইশারায়,
তখন কালো মেঘ আর
মায়াময় অন্ধকারে
নিঃসঙ্কোচ একটি মুখ
বৃষ্টি হয়ে কড়া নাড়ে ঘরের দরজায়
তাড়াহীন সময় বড় যত্নে গভীর নৈঃশব্দ্যের হাত ধরে দরজা খোলে
ওপার থেকে কচি একটি হাত এগিয়ে আসে মুখের খুব কাছে
বিরিয়ানীর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়;
বলে, বিশ্বাস হইতাছে তো ? খাইয়া আইছি ইটের হোটেলের বিরিয়ানী!
রাজপথের রোদ্দুরে মলিন সে কচি মুখ
ধুলোর আস্তর জমে যাওয়া বিবর্ণ চুল
উলঙ্গ পায়ের তালুতে কালচে ক্ষত
মিলিয়ে যায় অন্ধকারে...
তখনো বাইরে বৃষ্টি ঝ‌রে শব্দহীনতায়
জলজ অন্ধকারে অশ্রু ভিজে গিয়ে বলে—
প্রতিবার আমি ঝরি নতুন জন্মে...
 
ক্রমশ বেদনাহীন দৃষ্টি মেলে দেখি
বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ে কপালে, বুকে
গন্তব্য ভুৃলে বৃষ্টির ফোঁটা
সোনালী রঙে ঝরে আমার হাতে
বলে, টাকা জমাও! তোমারেও খাওয়াইতে লইয়া যামু ইটের হোটেলের বিরিয়ানী!
পিতা হয়ে অক্ষমতায় বয়ে বেড়াই সে সোনা-রঙ
বিশ টাকা দামে...


জা‌নি লীন হব শূ‌ন্যে হারাব এক‌দিন


অতীত ঝেড়ে ফেলে শান দেই বর্তমানে
মনোযোগ- তোমাকে মনে রাখায়,
একরোখা দৃষ্টি ক্লান্ত হলে-
স্মৃতিভ্রম হয় সময়হীন শূন‌্যতায়
অনুভব করি কষ্টশেকড়...
কার্পাস পাতার তেলে এ ব্যথা সারবে না জানি,
তোমার দেখানো পথে পৌঁছতে হবে তুলসী, নিমের বন পেরিয়ে...
শূন‌্যতা লীন হয় একেকটি কৃষ্ণপক্ষে
জানি অা‌মিও লীন হ‌ব, শূ‌ন্যে হারাব একদিন...
আমাকে মনে রাখায় অখণ্ড মনোযোগ রাখতে হবে না আগামীর
শুধু মনে রেখ, প্রতি পূর্ণিমার যৌবনক্ষণে
আর
প্রতিশ্রু‌তির জ‌মি‌নে ক্রমাগত জন্ম নেয়া কলমিডাটা,
মস্তিষ্কে...


তোমাকে না বোঝার অপরাধে


তোমাকে না বোঝার অপরাধে
সুখকে আনন্দ ভেবে জড়িয়েছি আলিঙ্গনে
প্রভাত আকাঙ্ক্ষায় বিকেলের চায়ের কাপে
মা'র সাথে সেই ছেলেমানুষী খেলা- তুমিই তো বাবা! -বিস্মৃত অাজ...
বোঝার আগেই সবটা মিলিয়ে যায় হঠাৎ...
বেদনার অনুভবে জীবনতৃষ্ণা বাড়ে অারও
প্রতিনিয়ত আমাকে ক্ষমা করো তুমি, প্রতিবার উষ্ণতায়...
তোমাকে ভেবে বদলানোর ছলে নিজের জন্যই বদলাই
সামান্য সংশয়টুকু না রেখে
জমে ওঠা ধূসর ধূলোয় ফুঁ দিয়ে পাওয়া চকচকে আলো
যেন মিলিয়ে না যায় ছায়ায়...
বুক পকেটে ততটুকু পাহারা জ্বালিয়ে
স্থিরদৃষ্টিতে তোমার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থা‌কি
হাওয়ারা গুনগুনায়, তোমাকে ছাড়া ভাল থাকি না একদম
অসহায়ত্ব জানান দেয় নগণ্য এ সময়
বুকে বেড়ে ওঠা প্রতিদিনের আশা-নিরাশা আলিঙ্গনহীন
নিজেকে তুচ্ছ ভেবে শান দেই প্রগাঢ় অন্ধকারে
দেখি নিজের ভেতর চলতে থাকা মুষ্টিবদ্ধ ছুরির বিরামহীন নাচন
তোমাকে না বোঝার অপরাধে...


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান