একজন
অসুস্থ মানুষ যদি শয্যাগত হয়,সে যখন দুচোখে অন্ধকার দেখে,যখন মৃত্যুর পহর
গুনে,স্বেচ্ছায় আত্মহননের পথ বেছে নেয় দেহযন্ত্রনা মুক্তির জন্য তখোনি যখন
সেই মৃত্যুপথ বেছে নেয়া লোকটিও মানুষের অকৃত্রিম প্রবিত্র ভালোবাসা পেলে
ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে।অনেক দিন বাঁচে। আমিও সেই মানুষ।জীবনের ঘাত
প্রতিঘাতে জেল জুলুমে দেহযন্ত্র যখন ব্যাথা বেদনায় অচল হয়ে উঠে তখোন রোগ
যন্ত্রনা মুক্তির জন্য জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে প্রকাশ্য ঘোষণা করি আত্মা
হত্যার। আমাকে আত্মহনন থেকে বিরত করে মানুষের ভালোবাসার আকুতি।প্রকাশ্য এ
ঘোষণা রহিত করতে উঠে পড়ে দেশের ও দেশের বাইরের কবি সমাজ,রাজনৈতিক,
সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মীরা।ওনারা বিবৃতি দেয় পত্র পত্রিকায়।আমার জন্য গঠন
হয় চিকিৎসা তহবিল।অনেকেই এই চিকিৎসা করানোর উদ্যোগ নেয়। আমি তাঁদের এই উদ্যোগ কখনোই অস্বিকার করতে পারিনা। আমার আত্মহনন ঘোষণা রহিত করতে কবি, বুদ্ধিজীবীরা ঢাকার রাজপথে মানব বন্ধন করে প্রেস ক্লাবের সামনে।আমি তাঁদের সকলের প্রতি ঋণী। কক্সবাজার
শহরে আমার চিকিৎসা ও আত্মহনন রহিত করতে একদল যুবক ছাত্র,সংস্কৃতি কর্মী,
রাজনৈতিক কর্মী ও নেতারা জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।জেলা
প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন হয়ে উঠে বেতিব্যস্থ। অতঃপর বাংলাদেশেই আমার চিকিৎসা হলো যতটুকু সম্ভব।অসম্ভব টা বিদেশেও ঝুকি পুর্ণ।কারন চিকিৎসা নিতে বহু দেরি জনিত কারনে। এর পর ফিরে এলাম আপন ভুবনে।লিখছি শিশুতোষ গল্প,কবিতা,গল্প,অনু গল্প,মুক্তগদ্য,ও কলাম। সাথে রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক, সামাজিক আন্দোলন,মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অসমাপ্ত আন্দোলন সংগ্রামে।এখনো আছি এই লড়াইয়ে। এ
লড়াইয়ে সেই দুর্দিনে কাছে আসা মানুষের সাথেও ঘটেছে কত তর্ক বিতর্ক বিরোধ ও
আপোষ।এসব হয়েছে শুধু আদর্শগত কারনে।মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিখাদ অবস্থানের
কারনে,সামাজিক আন্দোলনের কারনে।নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার
সন্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারনে।এখানে আমার একান্ত কোন ব্যক্তিগত
স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। ২০১৪সালের জুন জুলাইয়ের দিকে আমি আত্ম হত্যার
কথা ঘোষণা করি,আজ ২০১৯সালের জানুয়ারি শেষ প্রান্তে।এই চার বছরে আমার
নৈতিকতা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান,সুবিধাবাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার
কারনে কত প্রিয়জন ভুল বুঝে দূরে সরে গেছে।তবুও আমি তাদের কাছে ঋণী। আবার কত
জন দূরে গিয়ে আবারো আপন হয়েছে, তাদের কাছেও আমি ঋণী।আবার চিরতরে কেউ কেউ
শত্রু মনে করছে,পারলে আমি যেনো এখনি মরে গেলে তারা রক্ষা পায়।পেচাল থেকে
বাছে। এসব কারনে কত জন আমার মৃত মা বাবা কে ও কবর থেকে তুলে আনে।তবুও আমি তাদের কাছে ঋণী। তবে আদর্শিক অবস্থানে আমি আমার অবস্থানে। বিগত
এই চার বছরে হয়ত আমি দু'মাস তিন মাস অন্তর অন্তর কোন না কোন অসুখে
পড়ি,হটাত হস্পিটালাইজড হচ্ছি,এই মুমুর্ষ অবস্থায় ও আমাকে মানুষ চিকিৎসা র
হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।প্রতি তিন বেলা আমার ঔষধ খেতে হয়,অনেক সময় ঠিক মত খেতে
পারিনা,দোকানী বাকি তে ঔষধ দিতে না করেনি।তারা জানে আমি তাদের পাওনা টাকা
হাতে এলেই পুশিয়ে দিব। গত ২৭জানুয়ারি আমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি,এবারের
অসুস্থতা অকাল প্রয়াত কবি মাসউদ শাফি কে নিয়ে তার সাহিত্য কর্ম চুরি
প্রতিবাদ, তার রচনা প্রকাশ,সংরক্ষন বিষয়ে অহেতুক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কে
জড়িয়ে।এতে আমি খুব অপমান বোধ করেছি,বিস্মিত হয়েছি। এই কারনে একদা আমার
করুণা প্রত্যাশী রাই এই অপরাধের সাথে জড়িত।আমাকে নিয়ে তাদের কুৎসা, রটনা,আর
মাসউদ শাফি যে সংঘটন ও আদর্শে বিশ্বাসী তাদের নির্লিপ্ততা নিয়ে।বরং সেই সব
চুরদের সাথে তাদের উঠবস দেখে।এতে আমি মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ি।মানুষ
পারে একজন মৃত মানুষের সাথে প্রতারণা করতে।এসব বেদনায় আমি আবারো শয্যাগত
হই।২৮জানুয়ারি আমার জন্মদিন। আমার এই জন্মদিন নিয়ে অবশ্য বিখ্যাত
ব্যক্তিদের মতো আমার কোন আড়ম্বর অনাড়ম্বর কিছুই থাকেনা।অসুস্থ মন ভালো নেই
দেহ ভালো নেই,নেই হাতে টাকা পয়সা। ফুরিয়ে গেছে ঔষধ, খাওয়া হয়নি নিয়মিত।
কিন্তু আমার এই জন্মদিনে মানুষের ভালোবাসা আমাকে সুস্থ করে তুলেছে। শিশু
কিশোরেরা আমাকে নিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।শিশুদের প্রাণোচ্ছল প্রবিত্র
ভালোবাসায় ও কলরব। আমি ধৈর্য ধরেছি,মানুষিক শক্তি অর্জন করেছি,মনোবল শক্ত রেখেছি।হাতের কাছে যা ভেষজ আছে তাই দিয়ে নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করেছি। আমি
এখন মনোবল ফিরে পেয়েছি মানুষের ভালোবাসা পেয়ে।আমার জন্মদিনে অনলাইন
অপলাইন,সরাসরি আমার বাসা খোজে খোজে বাসায় শুভার্থী রা এসে শুভেচ্ছা বিনিময়
করা। শিশু কিশোরের আগমনে কোলাহলে কলকাকলিতে আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আমি
বিশ্বাস করি মানুষের ভালোবাসা পেতে মানুষের পক্ষে থাকতে হয়। আর কিছুই
লাগেনা।নৈতিকতা, মানুষের প্রতি দায় ও দায়বোধই পারে মানুষের মন জয় করতে। এ ভালোবাসা একটি হাসপাতাল সমান একজন রোগী কে সুস্থ করে তুলতে। জয় হোক মানুষের জয় ভালোবাসার।