মেলায় কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের দুটি বই
মেলায় কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের দুটি বই

বইয়ের প্রচ্ছদ ও কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান


এবারের বইমেলায় কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের দুটি বই বের হয়েছে। একটি উপন্যাস ও একটি প্রবন্ধের বই। প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ ও পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

‘মায়ামুকুট’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ থেকে। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর- দীর্ঘ কুড়ি মাসে উপন্যাসটি রচিত।

উপন্যাসটির বিষয়সংক্ষেপ এই : প্রেমিকা শিউলির সঙ্গে মিলনকালে সাবেক সেনাসদস্য মুলুকের মনে পড়ে যায় পিতৃশাপের কথা। মুহূর্তে উবে যায় তার যৌনশক্তি, নিস্তেজ হয়ে পড়ে তার পৌরুষ। ক্লীব ভেবে তাকে প্রত্যাখ্যান করে শিউলি। মুলুক জড়িয়ে পড়ে পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির গুপ্ত রাজনীতিতে। হয়ে ওঠে দুর্ধর্ষ ডাকাত, ভয়ংকর খুনি।

তিরাশিবার তাকে গ্রেপ্তারের ব্যর্থ চেষ্টা করে পুলিশ। তার অস্তিত্ব নিয়ে তৈরি হয় সংশয়। কারণ পুলিশ তো কখনো সরাসরি তাকে দেখেনি, দেখেছে সেনা সদর দপ্তর থেকে সংগৃহীত পাসপোর্ট সাইজের তার একটা সাদাকালো ছবি। ছবির মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে বাস্তবের মানুষটিকে গ্রেপ্তার করা তো দুষ্কর। ফলে মুলুক হয়ে ওঠে কিংবদন্তির মানুষ।

সাংবাদিকের অনুসন্ধানে একদিন বেরিয়ে আসে মুলুকের জীবিত থাকার প্রমাণ। অবশেষে সে গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে মুলুক আবার পালিয়ে যায় আদালত চত্বর থেকে। আশ্রয় নেয় উদারপন্থী প্রয়াত এক বাউলের মাজারে। উদার, বহুত্ববাদী ও সংগীতসাধক বাউল আর সাধু-সন্ন্যাসীদের সংস্পর্শে থেকে বদলে যায় মুলুক। দীক্ষা নেয় মরমীবাদের।

যাকে গ্রেপ্তার করাটা গোটা পুলিশ বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, একদিন সেই মুলুক আত্মসমর্পণ করে থানায়। কিন্তু সে আদৌ মুলুক কি না নিশ্চিত হতে পারে না পুলিশ। তৈরি হয় নতুন জটিলতা। পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আটষট্টিটি মামলায় এক শ তেতাল্লিশ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। পৃথিবীর সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুলুক হয়ে ওঠে কারাগারের প্রধান জল্লাদ। একাত্তরের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী, পঁচাত্তরের খুনি এবং জঙ্গিসহ কার্যকর করে তেত্রিশজন কুখ্যাত গণশত্রুর ফাঁসি। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। তাকে ঘিরে তৈরি হয় নানা মিথ। তার জীবনকথা নিয়ে গাথা রচনা করেন সংগীতসাধক ভুবন সাধু। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ, শাপলায় হেফাজতের উত্থান, ২০১৩ পরবর্তী জঙ্গিদের ভয়াবহ সব হামলাসহ বাংলাদেশের কয়েকটি রাজনৈতিক ঘটনাকে ধারণকারী প্রায় তিন শ পৃষ্ঠার উপন্যাস ‘মায়ামুকুট’। উপন্যাসের চরিত্র হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চ সংশ্লিষ্ট অনেকে।

লেখকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র মুলুক আর কেউ নয়, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শাহজাহান, যিনি জল্লাদ শাহজাহান নামে পরিচিত। তিনি দেশের প্রধান জল্লাদ। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। ২০১৩ সালের একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে জল্লাদ শাহজাহানকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সেই প্রতিবেদনটি পড়ে ‘মায়ামুকুট’ উপন্যাসটির আইডিয়া পান স্বকৃত নোমান। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশর্ট ই-মেইলের ড্রাফটবক্সে রেখে দিয়েছিলেন এমন ভাবনা থেকে যে, কোনোদিন হয়ত কাজে লাগবে, কোনোদিন হয়ত শাহজাহানকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখতে পারবেন।

স্বকৃত নোমান বলেন, ‘জল্লাদ শাহজাহানের বৈচিত্র্যময় জীবন উপন্যাসটির কাহিনিসূত্র মাত্র। শেষ পর্যন্ত উপন্যাসের কাহিনি সর্বাংশে শাহজাহানের বাস্তব জীবন সম্ভূত থাকেনি। শাহজাহান হয়ে উঠেছে লেখকের একটি কল্পিত চরিত্র। সেই চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবের শাহজাহান জল্লাদের জীবনের মিল খোঁজার কোনো অবকাশ নেই।’

উপন্যাসটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোমিন উদ্দীন খালেদ। দাম রাখা হয়েছে ৪ শ টাকা। বইমেলায় অন্যপ্রকাশের ‘প্যাভিলিয়ন নং ২০’ থেকে পাঠক কিনতে পারবেন তিন শ টাকায়।

অপরদিকে, প্রবন্ধের বই ‘আঠারো দুয়ার খুলে প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। আঠারোটি প্রবন্ধ নিয়ে এ বই। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন ও সমাজসহ নানা বিষয়ে স্বকৃত নোমান তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করেছেন এসব প্রবন্ধে। বাঙালি সংস্কৃতির পরিবর্তন ধরা পড়েছে তাঁর অনুসন্ধানী চোখে।

ইতিহাসের গভীরে প্রবেশ করে তিনি তালাশ করেছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সংকটের উৎস। প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন প্রচলিত ইতিহাসকে। বলেছেন ইতিহাসের পুনর্বিচার ও পুনর্বিবেচনার কথা। বাংলার ভাবজগতের অসাম্প্রদায়িক, বহুত্ববাদী ও সহজিয়া মানুষদের সঙ্গে মিশে তুলে ধরেছেন তাঁদের চেতনা ও সাধনার নানা কথা।

স্বকৃত নোমান বলেন, ‘এ বইয়ের সবচেয়ে বড় প্রবন্ধটি হচ্ছে ‘বাংলার ইসলাম : রক্ষণশীল ও সহজিয়া ধারা।’ প্রবন্ধটি আমার বহুদিনের গবেষণার ফসল। আরও রয়েছে ‘পরিবর্তিত বাঙালি সংস্কৃতি’, ‘শ্রীচৈতন্য ও তাঁর উদার ধর্মমত’, ‘রোহিঙ্গা সংকটের গভীরে’, ‘যেভাবে লেখা হলো বইগুলো’ শীর্ষক চারটি দীর্ঘ প্রবন্ধ। আশা করি পাঠকদের ভালো লাগবে। বইটি উৎসর্গ করেছি আমাদের সদ্যপ্রয়াত বন্ধু ড. অনু হোসেন ও কবি সরকার আমিনকে।’

বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের ১৭ নম্বর প্যাভিলিয়নে। তিন শ পৃষ্ঠার বইটির দাম পাঁচ শ টাকা। পাঠক কিনতে পারবেন ৩৭৫ টাকায়।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান