মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান এর কয়েকটি কবিতা
মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান  এর কয়েকটি কবিতা
একটা ফুল তোলা সাদা রুমাল

কি চাও আমার কাছে ?
কিছুই তো চাইনে
শুধু একটু শুতে দিও পাশে
বহুদিনের নির্ঘুম চোখ, একটুকু ঘুম চায়
যদি চুলে বিলি কেটে দাও
জন্মান্তর ঘুমিয়ে থাকব
কোমর অষ্টেপৃঠে জড়িয়ে
কোথাও যেতে দেবো না
এক সময় ঘুমিয়ে পড়বে তুমিও
জড়িয়ে বুকের পাশে
নিঃশ্বাসের শব্দ ঘন থেকে ঘণীভূত হবে
তোমাদের জঙ্গলের জোনাকিগুলো
সারা রাত জেগে আলো দেবে
বলবে, দেখো ওরা কত সুখী
মনে হবে এর থেকে বেশি ভালো
বাসেনি কেউ কোনদিন
বাসা যায়না
এক শালিখের চোখে জল পরবে
ওর জোড়াটা শিকারির ফাঁদে ধরা পড়েছে
সেদিন !
বহুদিন পর ঘুম ভেঙে
হাতড়ে বেড়াবো পাশের মানুষটিকে
খুঁজে বেড়াব শহরতলি, গাছে ফাঁকে,
চায়ের দোকানে, চেনা অচেনা রেস্তোরায়
রিক্সার যাত্রীদের ভেতরে
কারোরবা বোরখা উঁচিয়ে দেখবো
ভেতরে তুমি আছো কি না
এক্সিবিশন, পত্রিকার পাতা তন্ন তন্ন করে
খুঁজবো কোনো সংবাদ আছে কি না
যে হারিয়ে যেতে চায়
তাকে কি আর খুঁজে পাওয়া যায় ?
সবকিছু ভোলা যায়, শুধু
ভালোবাসা ভোলে না যে বেসেছিলো ভালো
হয়তো তোমার রুচি বদলেছে
হয়তো নতুন কিছু পেয়েছো খুঁজে
হয়তো আমাকে তোমার চাইনে
হয়তো সব পুরোনো হয়ে গেছে
হয়তো বটগাছটা মরে গেছে যেখানে দাঁড়িয়ে
কথা বলতে লুকিয়ে
হয়তো জীবন নামের জুয়া খেলায়
হেরে গেছি আমি সর্বস্ব বাজি রেখে
দেউলিয়া ঘোষণা দিয়েছে ব্যাঙ্ক
আমার কেউ নেই, কিছু নেই
থাকতে নেই আজীবন
চাইনে কিছু, আমার ফুরিয়েছে দিন
আমায় তুমি দিলে না কাছে থাকতে
দিলে না তোমার জন্যে উজাড় করে
সারাটা জীবন যাকে খুজেছি
তাকে ধরে রাখতে — এ আমার ব্যার্থতা
না কি ঈশ্বরের ষড়যন্ত্র !
ভেবেছিলাম আমার একটা ঘর থাকবে
যেখানে তোমার মুখচ্ছবি তুলে তুলে
ভরিয়ে রাখবো দেয়ালে দেয়াল জুড়ে
সেই তুমি শুধু আমার
একটিও ছবি তুলতে দিলে না
মন জুড়ে যে ছবি চির অম্লান
তা কেবলি আমার মুছে যায় না
দুর্ভিক্ষ লেগেছে ইয়েমেনে
যেতে হবে ভয়াবহতার স্বরূপ তুলে ধরতে
তুমি আমার নেই, অথচ আছো
পৃথিবীতে ভালোবাসা এক জটিল সমীকরণ
হেরে গিয়েও জিতে যায় কেউ কেউ
যুদ্ধে শুধু জিততে হয়
ক্যামেরা তাক করে বসে আছি
ওপাশে বিদ্রোহীরা গোলা ছুড়ছে
গুলি চলছে থেমে থেমে
এগিয়ে গেলাম, সাথে একজন সৈনিক
বাকিরা কাতঁরে কাতঁরে মরছে
ওদের প্রিয়জনেরা হয়তো জানতেও পারলো না
কে কাকে খুইয়ে ফেললো চির জীবনের জন্যে
একটা সাদা ফুলতোলা রুমাল ছিল
বুক পকেটে রেখেছি অনেক যতনে
তোমার দেয়া, প্রথম দেখার দিনে দিয়ে ছিলে
বলেছো, যখন মনে পড়বে তখন
ওটা মুখে জড়াতে
ওখানে তোমার ঘ্রাণ লেগে আছে
বসে পড়লাম বালিতে
সামনে অনেক গুলো ঘর, শিশুরা কাঁদছে
জানিনা ওরা সবাই আজ বাঁচবে কি না
আমরা এম্বুসে পড়েছি
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটটা খুলে ফেললাম
ওর আর কোনো প্রয়োজন নেই
তোমার চেহারাটা চোখের সামনে
চক চক করে উঠলো
দেখলাম, একটা সাদা শাড়ি পরে
তুমি হেঁটে আসছো
লুটিয়ে পড়লো আমার শরীর
ছিটকে পড়লো ক্যামেরাটা
বুকে রাখা রুমালটা ফুটো করে দিলো রক্ত
তুমি জড়িয়ে ধরে বললে,
কিছু হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন
আমি বললাম,
সেই দিন আর কোনোদিন ফিরে আসবে না !
তোমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু
বহু বছর পর, ওখানে জন্মালো একটা বট গাছ
হুবহু তোমার মতন কথা বলতো
কোনো এক যুবকের সাথে
ওর হাতে একটা ফুল তোলা সাদা রুমাল ।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে

চাওনি কি কোনো দিন, সকাল বেলায়
মুখ ঘষে ঘষে কেউ ভাঙিয়ে দিক ঘুম ?
তাকিয়ে দেখ, এক জোড়া মায়াপড়া চোখ
দেখেছে
বলিরেখা, নাকের গরণ
কপালের রেখা যেখানে ভাগ্য লিখা থাকে
ওখানে আমার নাম নেই
কেউবা নামহীন মানুষ আমার মতন
আমি তোমার কেউ না
অথচ নির্বিকার ভালোবেসে
অভিমানে চোখ ভেজায়
জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে অসহায় দৃষ্টিতে
কোনো সম্ভবনাকে না পেয়ে ভাবে সম্ভব না ;
তোমার মতো আর কাউকে সারা বিশ্ব জগতে
সে পায়নি
যা পেয়েছে তা সে, সেভাবে চায়নি
এড়িয়ে গেলে এমন উদাসী ভাবে
যেন এসব কিছুই নয়, এর সবই অলীক ;
চাওনি কি কোনো সময়, পাশ বালিশে বসে
গরম চায়ে ফুঁ দিয়ে জুড়িয়ে দিক তোমার ঠোঁট ?
চাওনি কি কাছে ডেকে মানুষটাকে জড়িয়ে ধরতে
বুকের ভেতর আগলে রাখতে
যেন নিশ্বাসের শব্দগুলো সমস্বরে
কলতান করে বলে
এমনটাই হবার কথা ছিলো, এমনই হয়
অভ্যেস হয়ে যাবে বলে তাড়িয়ে দিলে
লোকটা মাথা নিচু করে
সব সিধান্তে সায় দিলো
কিছুই চাইলো না
যতদূর গেলে আর দেখা যায় না
দিগন্তে মিলিয়ে যায়
যতদূর গেলে কোনো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি
অথবা ফিরে আসা যায় চাইলেই
অথবা তুমি ভুল করে কাছে ডাকলেও
ফিরে পাওয়া যায়
এর সবের বাইরে
যে চলে যায় অভিমান করে
সে আর কোনো দিন ফিরে আসে না
এভাবেই কেউ কারো জন্যে কোনো কোনো
ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে চোখের সাগরে ভেসে যায়
একশোটা গোলাপ মরে যায়
ভালোবাসা শকুনের মতন বেঁচে থাকে
কার কার হৃদয় ঠুকরিয়ে খাবে বলে
পাষাণেরা অট্টহাসিতে ফেটে পরে ।

পাগলা গারদ

কি খোঁজ তুমি ?
শহর বন্দর পেরিয়ে বহু দূরের পাহাড়গুলো
এক একে পার হয়ে
ওখানে কি খোঁজ তুমি ?
ওখানে হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে যায় সময়
ক্ষয়ে যায় মুহূর্ত, চায়ের কাপে চুমুক মিথ্যে হয়ে যায়
জীবন থেকে পালিয়ে দেয়াল টপকে
কাছে যেতে মন চায় যাকে মহাকাল থেকে
খুঁজছিলে, যাকে কতবার ভেবে ভেবে
স্বপ্ন বুনেছ সোনালি সুতোয়
ওখানে কি সত্যি ছিলাম আমি ?
না কি আমার মতন অন্য কেউ
তোমার হয়েছে
যেখানে আমার থাকার কথা ছিল !
তোমার ক্যামেরায় তোলা নিখুঁত সে দুঃখ আমি নই
সে সুখও আমি নই
আমি তোমার লুকিয়ে রাখা শূন্যতার নাম
ওখানে কি খোঁজ তুমি ?
ওখানে আমি নেই
আমি এই খানে দাঁড়িয়ে আছি
একটা গাছের মতন দৃঢ়, শান্ত
কোনো এক কাঠুরিয়া একদিন কেটে নিয়ে যাবে
আমার চোখ দুটো, আঙ্গুল
বুকের ভেতর কুঠার চালানোর পর চিৎকার দিয়ে
ডাকবো তোমার নাম
শুনতে পেলে, তুমি সেদিন আসবে তো ?
পারবে তো জীবনের সমীকরণ, সকল পিছুটান
অতো আগুপিছু না ভেবেই
যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে নিতে পারবে তো ?
ভালোবাসা তো এক প্রকার যুদ্ধই
কেবল অপলক চেয়ে দেখবার অধিকার আদায় !
আজ সকালে বকুল ফুলের সাথে মহুয়ার গন্ধ
নাকে এলো, এ তোমার সুবাস
আধো ঘুম, আধো জেগে আছি
নক্ষত্ররা জেগে থাকে আমার সাথে
কোনো কোনো তারা আমাকে বলে
আমি নাকি পাগল হয়ে গেছি
বেশি ভালবাসলে মানুষ না কি পাগল হয়ে যায়
কেউ কেউ মরে নক্ষত্র হয়ে যায়
তুমি আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুলে
চুলে হাত বুলিয়ে দিলে
ঘুম ভেঙে গেলো
চিৎকার করে তোমার নাম ধরে ডাকলাম
আর এলে না
পাগলা গারদের লোহার শিকগুলো
ভেঙে ফেলতে পারলাম না
ডাক্তার, নার্স এলো
হাত, পা বেঁধে ইলেকট্রিক শক দেয়া হলো
ক্লান্ত দেহটা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে এলো ।

মেঘ ও বৃষ্টির গল্প

একটা মেঘ ভালোবেসেছিলো ছোট্ট এক নদীকে
মেঘ সারাটাক্ষন ভেসে বেড়াতো ছায়া হয়ে
নদীর জলে
নদীটাও বুক জুড়ে আগলে রাখতো মেঘকে
এভাবেই চলত তাদের খুনসুঁটি —
রোদের ঝিকিমিকি খেলা করতো
রুপোলি মাছেরা পুচ্ছ নাড়িয়ে স্বাগত জানাত
অথচ
কত দূরে তাদের বসবাস
দূরত্ব কাছে পাবার আকাংখাকে
হাহাকার করে তোলে
মেঘ বৃষ্টি হয়ে কাঁদতো
সেই জলে স্নাত হতো নদীর মন
আর বলতো —
এইতো কাছেই আছি, পাশেই আছি
শহরে পাশে বয়ে চলা নদী
মহাজনি ভূমিখোরদের নজরে পড়লো
বড়ো বড়ো যন্ত্রপাতির গাড়ি এলো
বালি, মাটি, ইট, পাথর এলো
কংক্রিটের ইমারত উঠে গেলো তরতর করে
মানুষের কোলাহল বাড়লো
পাখিরা নীড়হারা — সব গাছ কেটে সাফ
ভরাট নদীর উপর সারি সারি দালানকোঠা
মেঘ চিৎকার করে গর্জে উঠলো
বিদ্যুৎ চমকালো আকাশজুড়ে
মেঘ আর কোনোদিন খুঁজে পেলনা
ছোট্ট নদীটিকে
বৃষ্টির থৈ থৈ জলে নতুন শহরের ছাদে
আজও ভেসে বেড়ায় বাতাসের হুহু শব্দে
তুমি নেই, তুমি নেই !


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান