রোকেয়া ইসলাম । ৫টি কবিতা
রোকেয়া ইসলাম । ৫টি কবিতা

জলে ভাসা দুঃখ


একদিন এই আমি ভেসেছিলাম বেহুলা ভাসানে
পরতে পরতে দুঃখ সাজিয়ে শব শয্যাসনে
সীমান্ত পেরুনো প্রস্তুতি একাকী এক নারী
দুঃখ অভিযানে সঙ্গী হয়েছে,
কে কোনকালে?
শ্রাবণসিক্ত জলে বৃষ্টিরাও ময়ূরাক্ষী খোঁজে
শঙ্খচূড় রোদের দহনে পেতে দেইনি শরীর শিল্প
সমুদ্র চিত্রকর্ম আকাশ ধ্রুপদ -সঙ্গীত আর সূর্য নৃত্যকলা
উজান পেরিয়ে আমি বেহুলা তপোলোকে
সাথে মিহি সেতার বাদ্য
জলঘুঙুর বেজে ওঠে সহস্র যুগের বদ্ধ নাচঘরের বারান্দায়
মেঘমল্লারে ঘুম ভাঙে আগ্নিযুগের কৃঞ্চচূড়ার
অকসাৎ খুলে যায় কাঁচঘরের কাঙ্ক্ষিত দরজা
প্রস্তর যুগের পা দুখান বাজায় বিবর্তন সভ্যতা
বিমুগ্ধ দেবরাজ আপ্লুত মেঘ বর্ষণে
এবার ফিরতি টান মোহন মাটির ঘাটে

পৃথিবীর নদীরা আর জলে ভাসাবে না সোনালি দুঃখ
অপরাজিতা - শোন, কোন এক মাহেন্দ্রক্ষণে
প্রকৃতির অনিবার্য মিথুন মন্ত্রেই জলে ভাসা দুঃখবীজে
জন্ম নেয় বেহুলা সুখ.... 

বাঁশি
 


দিনের জন্য রাত তাড়ানোর গল্প শুনতে শুনতে
বড় হয়েছি
রাতের সাথে সাথে নক্ষত্ররাও যে ঝরে পড়ে;
জানা ছিলো না
তোমার ঝরে পড়া আমাকে আবার ফেরাতে চাইলো রাত্রির দিকে
কিন্তু আমি যে দাঁড়িয়ে আছি কাঠফাটা রৌদ্রের দুপুরে
একখানা চীনামাটির বৈয়াম হয়ে।

জোছনার গান বাতাসে মিলাবে, কিন্তু আমার সুরে কোনো বাঁশি যাবে আর  কতদূর?

তবে থাক



তবে থাক
আমি ফিরে যাই
তোমার আকাশ থেকে ঝরে যাক
মৃত নক্ষত্র এক।

আমিতো বলেছি অক্ষরবৃত্ত ঢং-এ
যা কিছু আমার
এই চোখ এই বুক এই সব চালচিত্রগুলো
এবং নিরীহ নিটোল সেই প্রজাপতি সুখ।

তবু যদি ফিরালেই মুখ
ঝরে যাক চাঁদরাত অনন্ত ধুলায়।

অবধি আবহমান



তুমি বিহীন বসন্তবেলার এই পাট
নিয়মের করাত টানে ভাঙে
এই যে নৈমিত্তিক উদ্ঘাত
ভাংচুরের অভিঘাত
তার অবচেতন কতোটুকু বা কে জানে।

চৈত্রের তিস্তায়
শুকিয়ে যাওয়া অপলাপের নোনতা নিঃসরণ অথবা
ঝরে যাওয়া  টুপটাপ রক্তক্ষরণ
আজ খুব প্রাসংগিক;
বেখেয়াল বাতাসের অনুরনণের অতীত যাপন
বড়জোর এই উদাহরণ....



কেউ জানে না সীমান্ত কোথায়
কেউ চেনে না ধরনী প্রবহন পথ
জোয়ার ভাটার নিরবধি বয়ে চলা জীবনে
মেনে নেই নি অন্যথা...

পথ চলতেই পথের খোঁজ
চমকে উঠি থমকে দাঁড়াই
নির্দ্বিধায় হররোজ।


অবধি আবহমানে
কেউ নেই আশেপাশে
কেউ নেই নিশ্বাসে
সেই একান্ত আপন ;
তবুও অপার আগ্রহেই বয়ে যায় -
নিদারুন অচেনা যাপন....

এপিটাফে নিবেদিতা


নিবেদিতা
অন্তরালে অব্যক্ত জাতিস্মর
আকন্ঠ ডুবে যাই অগাধ জলে
শ্রাবণ ধারাপাত আকাশের স্বপ্নজ্বর
মেঘলোকে শুনিয়েছিলে জোছনার নামতা..

চোখ রাখি জীবনের অসমাপ্ত কাব্যে
দীর্ঘকাল মহুয়া মাতাল আজন্ম পাঠে
সেই চেনাজানা মানুষের গল্প
গোধুলির গায়ে ছিল না আমন্ত্রণ লিপি
তবুও বাড়িয়ে থাকি পা,
সহস্রাধিক প্রাণের অন্ধ বাতাস কাঁদে
শুনেছো নিবেদিতা?

ধ্বনি মেঘ হয়,বাতাস আর কুয়াশায় দূর প্রাঙ্গণে
ভাষা বৃক্ষে নবীন পাতার ঘ্রাণে তৃষ্ণার্ত বৃষ্টি
অনিন্দ্য মুদ্রণ ঠোঁটে ভেসে যায় -স্বপ্ন
নদী তটে সাত সমুদ্রের অজস্র পথরেখা
আইরিশ জল রঙে নিবেদিতার বিষন্ন দৃষ্টি....

জলের উপর আলোর প্রক্ষেপণ -তুমি নিবেদিতা
চিত্রকলায় শুদ্ধ বিলাবল সঙ্গীতে গৌড়ীয়
সাহিত্য মাটিগন্ধা ফাগুন
মেঘ সিক্ত আকাশ ডেকে যায় মনের গহীনে
কি নাম? কি পরিচয়?বাগবাজার ফিরিঙ্গি দুহিতা...


এসো গোলাপ ফোঁটাই
ভারতবর্ষের এককোণে-এই শহর কলকাতায়
এ যেন গত জন্মের বাস
স্পর্শে বিজরিত পথচলা যতটুকু ছিল আত্মায়, ঢেলে দিলে ততোধিক
নিবেদিতার দীর্ঘশ্বাস....

গঙ্গাজলে ধুয়ে গেছে সাবেকি কিছু অভিমান
হ্যালোজেন বাতিতে ভোর নেমে আসে--প্রতিজ্ঞা ধর্মোপসনা
ত্রিভুবন এফোড় ওফোড় খুঁজি বিবেকানন্দ বাণী, আশ্রিতের হাতছানি
মানব প্রেমে পূজিতে অনন্ত ঈশ্বর
ব্যাক্ত, অব্যক্ত পথচলায় -
আজ এপিটাফে নিবেদিতা অজানা....



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান