
কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদা আজিজ চৌধুরী ,পিতাঃ শফিকুল হক চৌধুরী, মাতাঃ সৈয়দা ফয়জুন্নেসা খাতুন ,স্বামীঃ এ.এম.আজিজুর রহমান খান, জন্মস্থানঃ সিলেট (ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা)
জন্ম তারিখঃ ৭ ডিসেম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) পেশাঃ শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত) ,সাহিত্য চর্চাঃ ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনঃ তিনি একজন রত্নগর্ভা মা। তাঁর এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান। সবাই বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রিধারী ও স্ব স্ব অবস্থানে উজ্জ্বল তারকা।
তিনি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। আমেরিকা, ইংল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
তাঁর রচিত মোট গ্রন্থ সংখ্যা ৭।
গ্রন্থ সমূহ—১.অবন্তিকা, ২.ভালোবাসার লাইবেরী, ৩.শতাব্দীর চুম্বন, ৪.চিরকুট ও নাকছাবি,৫.প্রেমের সন্ধানে দাঁড় টানি, ৬.জাফরান সিঁদুর(গল্পগ্রন্থ), ৭.For An Innocent Rose(English Poetry Book)
কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদা আজিজ চৌধুরীর অংশগ্রহণে প্রচুর যৌথ কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।
তিনি প্রবন্ধ, নিবন্ধও লিখে থাকেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কবির লেখা কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
সম্মাননাঃ তাঁকে বিভিন্ন সাহিত্য প্রতিষ্ঠান থেকে আজীবন সম্মাননা ও আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হয়।
গ্লোবাল স্টার কমিউনিকেশন,বাংলাদেশ থেকে তাঁকে Global Star Award 2024 দেশী ও আন্তর্জাতিক সাহিত্যে অবদানের জন্য আওয়ার্ড প্রদান করা হয়।আন্তর্জাতিক সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দৈনিক ঐশী বাংলা পত্রিকা তাঁকে পদক প্রদান করে। এছাড়াও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম-জয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি পদক পেয়েছেন।
তিনি সমাজ পরিবর্তনে কবিতা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত।
তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশের সাহিত্য গ্রুপের সদস্য এবং লেখালেখি করেন।
আমেরিকা থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত প্রডিজি ম্যাগাজিন ও স্পেন থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত আজাহার ম্যাগাজিনের তিনি একজন নিয়মিত লেখক। কবির লেখা বর্তমান সিরিয়া বিষয়ক ইংরেজি প্রবন্ধ আরবি ভাষায় অনুদিত হয় এবং তুরস্কের বিখ্যাত Awtaad Cultural Magazine এ প্রকাশিত হয়।
আমেরিকার Prodigy Academy থেকে তিনি Certificate of honour অর্জন করেন।কবিতার জন্য ইকুয়েডর থেকে তিনি গোল্ডেন পেন সার্টিফিকেট অর্জন করেন।
তাঁর রচিত কবিতা আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর এবং স্পেন থেকে স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে আলজেরিয়ার স্থানীয় ম্যাগাজিনে কবির ইংরেজি কবিতার আরবী অনুবাদ প্রকাশিত হযেছে।
চিরকুট ও নাকছাবি
চিরকুটে লিখে দিলে ভালোবাসার নিবিড় বাণী
নিগুঢ় পাশা খেলায় দিনের পর রাত
বেহিসেবী সময়ের পালকে উড়তে থাকা জীবন
তারপর অস্তাচলের ময়ূখে চুম্বন তুলে
অনাকাঙ্খিত প্রস্থান অকস্মাৎ।
বৈশাখী ঝঞ্জায় রোরুদ্যমান কবরী
সপ্তমুখী জবা ধূলোয় লুটায়
শেষ স্পর্শটুকু চুলে চিবুকে সর্বত্র।
প্রাণপণে আঁকড়ে থাকা বাহু শিথিল হলেও
চাঁদির অক্ষরে সিলমোহর হৃদয়ের চতুষ্কোণে
আপন ঐশ্বর্যে প্রজ্জ্বলিত নক্ষত্র
সবটুকু দায় বহন করে চলেছি।
হীরেবিন্দু অনিন্দ্য নাকছাবি হৃদয়ের স্বাক্ষর
কারা যেন নাকছাবি সানন্দে খুলে
আমৃত্যু বিরহ-তিলক এঁকে দিলো সর্বাঙ্গে
সযত্নে তোলা আছে মোহরযুক্ত নাকছাবি।
খন্ড খণ্ড অন্ধকার ঘিরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোকবিন্দু
বুকের ‘ পর আছড়ে পড়া উদ্দাম সিন্ধু।
বোধ আর নির্বোধের সীমানায় সূক্ষ্ম অদৃশ্য প্রাচীর
ব্যারিকেড অতিক্রমে মৃত্যুবরণ বিপুল সময়
অন্তর্লীন আগুন প্রলয় ও সৃজন
সদ্যফোটা প্রভাতী ফুল রেখে দিলাম সীমান্ত বরাবর।
স্বত্ব সংরক্ষিত
১৫/৫/২০২৫
তৃষ্ণা অতলান্ত
অমোঘ তৃষ্ণার ঘোরে পথে পথে চলি
শব্দের মিছিল শুনি হৃদয়ের ঢাকনা খুলি
ক্ষয়ে যাওয়া প্রান্তরে চূর্ণ হাওয়ার ধ্বনি
মাঝপথে থেমে রয় তাল লয় শিম্ফনি।
বিক্ষত অতীত শুকনো গোলাপ বিন্দু বিন্দু শিশির
ঝনঝন করা বিস্মৃতির তলানিতে
কুড়িয়ে পাওয়া ফুল পাথর
ক্ষুৎপিপাসায় বেজে ওঠা বাঁশি নিরোর।
অনন্তে মিশে যাওয়া মুহূর্তগুলি
নিবিড় নিবিষ্টে মুদ্রিত শব্দগুলি
মধ্যরাতের প্রণোদনা জীবন আচ্ছন্ন করে তবুও
ভুলে যাওয়া সহজ নয়,সবাই চায় যদিও।
অর্ফিয়াসের ভালোবাসা আহা দেয়ালের ওই প্রান্ত
অপ্রাপ্তির তৃষ্ণা অতল আদিগন্ত
অগ্রাহ্য প্রাচীর টপকে ছুঁয়ে দেখা দিগন্ত
আহা তৃষ্ণা অতলান্ত !
ছুটতে থাকি নাভিশ্বাসে,মেঘের পালে সরে দিগন্ত
ঘুম থেকে জাগি স্পর্শ দোলাচলে
দূরের আকাশে নক্ষত্র হাসে
অগাধ অসীমে মিশে যেতে বলে
সেতু পার হলেই স্বপ্নময় সুন্দর
প্রেমের সন্ধানে দাঁড় টানি জন্ম জন্মান্ত
আ- - হা তৃষ্ণা অতলান্ত !
স্বত্ব সংরক্ষিত
১৫/৫/২০২৪
ছায়াতাড়িত পাখি
যেদিন অশনি সংকেতে ঘরখানি উজাড় হলো
কুয়াশার শূন্যতায় সব পাখি উড়াল দিলো।
পাতালপুরাণের নিরুদ্দিষ্ট সম্রাজ্ঞী এথেনা
নদী কান্তার গোবি কালাহারি আরো কত
জমাট বরফের হিমশীতল দেশ
দূরত্বের পরিমাপ হয়নি জানা।
শত শত যোজন দূরে আলো অন্ধকারের ধ্বনি
পাহাড়ের হৃদয় ফেটে গড়িয়ে পড়া নুড়ির দল
ঘর-হারা পাখিরা পাথরের শব্দ শুনে
এক দুই তিন করে হাজার হাজার
অন্ধকারের বুক চিরে মৃদু চিৎকার
ওই শোনো জল কোলাহল।
তুমুল সাইমুমে বাতাসের গায়ে হেলান দিয়ে
হারিকিরির মতো সেই ছায়াতাড়িত পাখি
ইকারুসের মোমের ডানায় অশান্ত উদ্বেগে
কালো শাদা মেঘবাদাড়ের কার্নিশ ছুঁয়ে।
ছায়ার নীচে অগাধ সমুদ্রের জলকেলি
থামলে ডানা তরঙ্গে তলিয়ে যাবে।
স্বত্ব সংরক্ষিত
১৫/৫/২০২৫
জেগে উঠুক রোমিও-জুলিয়েট
তাপিত প্রাণে যদি ফোটাতে পারো ফুল
মৃদু হাওয়ায় ঝরাও সুগন্ধি বকুল
তাহলে এসো,এলোমেলো মানুষদের এই জনপদে
বিস্তৃত তরঙ্গ আঁচলে মুছে ফেল সব ভুল ।
এসো, মরুবালুর তপ্ত বুকে ব্রহ্মপুত্র বয়ে যাক
কোমল ভেজা আঁচলে ঢেকে দাও
নগরীর সীসা- কংক্রিটের দগ্ধ মুখ
জ্যোৎস্নার পোশাক পরে জলপরী আসুক।
স্বপ্নবাজ রমণীর চোখ,দৃষ্টিতে নক্ষত্র সংলাপ
পারো তো এসো,ফোটাও ভালোবাসার গোলাপ।
স্বর্গের গন্ধমাখা টকটকে গোলাপ।
বুকের জানালায় হল্কা বাতাস কাঁদে
সমুদ্র-সুরে ভালোবাসার কলধ্বনি
মৃন্ময়ী প্রেম মহাশূন্যে বেনুনি বাঁধে।
জোড়ায় জোড়ায় সুর নিমগ্ন পাখির ডুয়েট
জেগে উঠুক প্রেম-বিদগ্ধ রোমিও জুলিয়েট।
স্বত্ব সংরক্ষিত
১৫/৫/২০২৫
তোমার জন্য প্রিয়ন্তি
ভালোবাসা চাষ হয় পাহাড় খুঁড়ে
শহর ছেড়ে দূরে কাঁচা সোনা পুকুরে
ঝলমলে রোদ-ওঠা দুপুরে
সাঁতার কেটে তীর খুঁজে পাবে নির্জনে।
সুরম্য স্থাপত্য নেই,নেই পরিপাটি পুষ্প কানন
মালি,ঝাড়বাতি,বয় বেয়ারা নেই
আঙিনার কোণে স্বর্গীয় পারিজাত
সদ্য ফোটা অর্ঘ্য স্বপ্নভেজা আঁচল পাতায়।
দেহের খাঁচায় নীলাকাশ
বিস্তার করো স্বপ্নডানা সেই নীলিমায়
জ্যোৎস্না গলে গলে পড়ে
চিবুকে কপোলে রঙমাখা চুলের ভাঁজে।
হৃদয়ের কানায় কানায় ভালোবাসার কম্পন
কিছু না-বলা গল্প— লুটে নিতে পারো
পাহাড়ের বুক জুড়ে মেঘের বাসর
নীল পাহাড়ের চূড়ায় আনমনা হতে পারো।
আছে বিষাদ গ্লানি,পরাজয়
সুখ-আহ্লাদ বেদনাশ্রু
খানা-খন্দ গলিপথ পেরিয়ে লোকালয়
হেঁটে হেঁটে ঘর্মাক্ত অবসন্ন
জল থৈ থৈ আকাশতলে কাদামাখা আমি
পারবে তো প্রিয়ন্তি ধনিক তনয়া তুমি !
কুয়াশা ভেজা ঘাসফুল,ঘাস ফড়িংএর দল
কত শত অভিলাষ,উচ্ছ্বাস
জোয়ার-ভাটার পালা বদল
হৃদয়ের গনগনে উত্তাপ,আলতো হাতে ছোঁয়া
মেঘলা আকাশ,ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জল—
সবই তোমার জন্য প্রিয়ন্তি।
স্বত্ব সংরক্ষিত
১৫/৫/২০২৫