সাক্ষাতকার : তৃষ্ণা বসাক - আরিফুল ইসলাম
সাক্ষাতকার : তৃষ্ণা বসাক - আরিফুল ইসলাম

তৃষ্ণা বসাক এই সময়ের বাংলা সাহিত্যের একজন অত্যন্ত জরুরি কবি ও কথাকারগল্প, উপন্যাস, কবিতা, কল্পবিজ্ঞান, মৈথিলী অনুবাদকর্মে তিনি প্রতিমুহুর্তে পাঠকের সামনে খুলে দিচ্ছেন অনাস্বাদিত জগৎজন্ম কলকাতায়শৈশবে নাটক দিয়ে লেখালেখির শুরু, প্রথম  প্রকাশিত কবিতা সামগন্ধ রক্তের ভিতরে’, দেশ, ১৯৯২প্রথম প্রকাশিত গল্প আবার অমলরবিবাসরীয় আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯৯৫অনলাইনে সাহিত্যবার্তা সম্পাদক আরিফুল ইসলাম এর সাথে দীর্ঘ সাক্ষাতকারে

 

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.ই. ও এম.টেক তৃষ্ণা পূর্ণসময়ের সাহিত্যকর্মের টানে ছেড়েছেন লোভনীয় অর্থকরী  বহু পেশাসরকারি মুদ্রণ সংস্থায় প্রশাসনিক পদ, উপদেষ্টা বৃত্তি,বিশ্ববিদ্যালয়ের  পরিদর্শী অধ্যাপনা, সাহিত্য অকাদেমিতে আঞ্চলিক ভাষায় অভিধান প্রকল্পের দায়িত্বভার- প্রভৃতি বিচিত্র  অভিজ্ঞতা তাঁর লেখনীকে এক বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে

প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- পূর্ণেন্দু ভৌমিক স্মৃতি পুরস্কার ২০১২, সম্বিত সাহিত্য পুরস্কার ২০১৩, কবি অমিতেশ মাইতি স্মৃতি সাহিত্য সম্মান ২০১৩, ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ) ২০১৩, ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার ২০১৫, সোমেন চন্দ স্মারক সম্মান (পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি) ২০১৮, সাহিত্য কৃতি সম্মান (কারিগর) ২০১৯ ও অন্যান্য আরো পুরস্কার

 

প্রকাশিত গ্রন্থ

 

কবিতা

 

বেড়াল না নীলঘন্টা?, একুশ শতক, ২০০২

উলটে মেলো,  একুশ শতক, ২০১৩

অজাতক সমগ্র থেকে, কলিকাতা লেটারপ্রেস, ২০১৭

গোপন ট্যাটু, কৃতি, ২০১৮

লাইব্রেরি শার্ট খোলো, কৃতি, ২০১৯

 

অনুবাদ কবিতা

 

অজিত আজাদের কবিতা, নবারম্ভ প্রকাশন, ২০১৮

মূল মৈথিলী থেকে অনুবাদ- তৃষ্ণা বসাক

 

 

গল্প

ছায়াযাপন,  একুশ শতক, ২০০৯

দশটি গল্প, পরশপাথর, ২০১১

নির্বাচিত ২৫টি গল্প,  একুশ শতক, ২০১৪

ইয়াকুবমামার ভারতবর্ষ, প্রশাখা প্রকাশনী, ২০১৮

গল্প ৪৯, কৃতি, ২০১৯

 

উপন্যাস

 

বাড়িঘর,  একুশ শতক, ২০১১

অনুপ্রবেশ, এবং মুশায়েরা,২০১৭

এখানে টাওয়ার নেই,  একুশ শতক, ২০১৭

স্বপ্নের শিকারা, এবং মুশায়েরা, ২০১৯

 

প্রবন্ধ

 

প্রযুক্তি ও নারী- বিবর্তনের প্রতি-ইতিহাস, গাংচিল, ২০১০

 

প্রযুক্তি ছাপাখানার অ-আ-ক-খ, শিশু কিশোর আকাদেমি, ২০১০

সহলেখক- সৌমেন বসাক

 

সম্পাদনা

 

ভারতীয় ভাষার গল্প, এবং মুশায়েরা,২০১৭

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প, এবং মুশায়েরা, ২০১৭

 

 

 

সাক্ষাৎকার

 

আরিফুল ইসলাম : আপনি মূলত কবিতার মানুষআপনার কাছ থেকে কবিতার কথা জানতে চাইকবিতা আসলে কী?

 

তৃষ্ণা বসাক : কবিতার আগেও আমি লিখেছি নাটকতখন বয়স আটতারপর কবিতা এবং কবিতাপরে গদ্যের জগতে আসাতাই এখন কোন জগতের লোক বলা খুব শক্ততবে যাই লিখি না কেন, আমার পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু কবিতাই

কবিতা আমার কাছে বিস্ফোরণ সেই আদি বিগ ব্যাংসমস্ত সৃষ্টির মূল বীজ এই কবিতাতেই নিহিতআমার অনেক গদ্য রচনার আগেই একটি কবিতা থাকেসেই আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়আবার কোন ছোট গল্প থেকেও আমি কখনো কখনো কবিতা লেখার কিক পাইএই নিয়ে আমার একটা কবিতাই আছে

 

যখন ডাক আসে, আমি একটা ছোটগল্পকে আশ্রয় করি

নির্জন করিডরের মতো একটা ছোটগল্প

যেটা ধরে ভেতরে, আরও ভেতরে পৌঁছে যাওয়া যায়

যেটা দিয়ে আমি শুধু দুপায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারি,

হ্যাঁ এও একরকমের হাঁটা, শুধু পৌঁছনোর জায়গাটা আলাদা

 

 

আরিফুল ইসলাম : কবি হলেন কেমন করে? মানে আপনার কবিতা লেখার শুরুটা কীভাবে সেই প্রসঙ্গে একটু বলুন

 

তৃষ্ণা বসাক : কবি না হয়ে আমার আসলে কোন উপায় ছিল নাএক জন্মগত জটিল অসুখ, তার ফলে অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা, শৈশবের স্বাভাবিক খেলা থেকে, বন্ধুদল থেকে বিচ্ছিন্নতা, জানলা, বই আর কবি বাবার সান্নিধ্য- এরাই বাধ্য করল কবি হতে

জানলা আমার জীবনে খুব গুরুতবপূর্ণ জিনিসঅনেকদিন আগে লেখা একটা কবিতা মনে পড়ছে-

 

লেখার তাগিদ

 

লেখার তাগিদ আসে প্রথমে জানলার কাছ থেকে,

তারপর বেলা বাড়লে ঘরে ঘরে রোদ ঢুকে পড়ে,

রোদের পায়ে পায়ে ঝুরঝুরে কমলা বেড়াল...

 

আমিও সময় নিই, বাক্স সাজাই

রাজকন্যা গুলিসুতো খেয়ে নীল, আর পঙ্খীরাজ ঘোড়া’-

সবুজ কাচের মতো চোখদুটো, হাই তোলে

 

লেখার তাগিদ আসে প্রথমে জানলার কাছ থেকে

বৃষ্টির মতো নগণ্য উপমা

এরাও জানলা দিয়ে ঢুকে পড়ে বুকের ভেতর...

 

বাবার কবিতার খাতায় লাল পেন্সিল দিয়ে কিছু লিখেছিলাম, বাঁদরের সঙ্গে চাদর জাতীয় মিল দিয়েমনে হয়েছিল এইটা এক  অবিস্মরণীয় কীর্তি হয়ে থাকল! তবে তারও আগে  মুখে মুখে রচনা করতাম একটি মনে আছেবছর ছয়েক বয়সএকতলার বারান্দার লাল টুকটুকে মেঝেতে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে শীতের রোদ এসে পড়েছেআলো আর ছায়ায় ভারি মায়াময় দৃশ্যসেটা দেখে মুখে মুখে বানিয়ে ফেললাম-

আলো ছায়ার সঙ্গে রে ভাই

 খেলা আমার খেলা,

 আলো ছায়ায় পা ফেলে রোজ

কাটিয়ে দিই যে বেলা

 

আরিফুল ইসলাম: আপনার ছোটবেলার কথা জানতে চাই?

 

তৃষ্ণা বসাক : আমার জন্ম কলকাতায়, লেডি ডাফরিন কলেজেকাছেই বউবাজারে ডঃ জগবন্ধু লেনে বাবা মা  থাকতেন, সঙ্গে সেজকাকাআমার জন্মের চার মাস পর বারুইপুরে চলে আসাশান্ত মফস্বলসবুজশ্রী চৈতন্য, মাইকেল মধুসূদন, বংকিমচন্দ্র, রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িতসেখানে শাঁখারিপাড়া বলে একটি জায়গায় একবছর ভাড়াবাড়িতে থাকার পর রাসমাঠে বাড়ি করে বাবা মা চলে আসেনএকদম গায়েই বহু প্রাচীন রায়চৌধুরী জমিদার বাড়ি, রাসমঞ্চ, রথএই রথে বসে জীবনের প্রথম গদ্য বাক্য লিখেছিলাম- সিমেন্ট কিনে আমাদের এবছর খুব লস হয়েছেবছর আট বয়সদোতলা উঠছিলসিমেন্ট, বালি এইসব আলোচনা কানে আসতমধ্যরাতে রাসমাঠে পাণ্ডুয়া থেকে বালির লরি এসে থামত 

বাবা ছিলেন পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, নেশায় কবিঅক্ষরপরিচয় হবার আগেই তিনি আমাকে মুখে মুখে বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত করান, চেকভ, মঁপাসা, টলস্টয়, রবীন্দ্রনাথের জীবন ইতিহাস বলে বোঝাতেন  যন্ত্রনা ছাড়া শিল্প হয় নাএসব তিনি করতেন যাতে আমি আমার শারীরিক যন্ত্রণাকে অতিক্রম করতে পারি

মা ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী, মাতামহ বিষ্ণুপুর ঘরানার ধ্রুপদী গায়ক, তাঁর রক্তে যদু ভট্টের ধারা ছিলমা সারাদিন রান্না বা অন্য কাজ করতে করতে গান করে যেতেনলতা মংগেশকরের গান অসাধারণ করতেনঅনেকদিন সন্ধে থেকে আরম্ভ হয়ে বহু রাত্রি অব্দি গান চলত, অনেকে আসতেনঅনেক গান ছিল যা বাবার লেখা, সেজকাকার সুর দেওয়াআবার ছুটির সকালে অন্য একদল আসতেন বাবার কাছেরাজনীতি, খেলা সিনেমা নিয়ে তুমুল আড্ডা হতবাড়ির এই মুক্ত পরিবেশ আমাকে অনেকটাই নির্মাণ করেছে

 

আরিফুল ইসলাম : শোনা যায়, ক্ষেত্রবিশেষে কাব্যরচনা চ্যালেঞ্জ? এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

 

তৃষ্ণা বসাক : সেটা নির্ভর করছে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর চ্যালেঞ্জ কেন হবে?  লেখা তো আর যুদ্ধ নয় সব শিল্পই তো বাধার মধ্যেই এগোয়

 

আরিফুল ইসলাম : কবি চরিত্রটি সমাজের চোখে রহস্যময়, এই রহস্যম্যতার গোপন রহস্যটা আসলে কী?

 

তৃষ্ণা বসাক : নিজেকে সব ধরনের প্রলোভন  থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার মধ্যেই রহস্যম্যতার চাবি   সব কিছুই করতে হবে, কিন্তু মোহ নয়বরং মায়া থাককবিকে নিজের কাছে একলাটি থাকতে হয়, একেবারে নির্বসন

 

আরিফুল ইসলাম : আপনি কি মনে করেন একজন কবির সামাজিক স্বীকৃতি দরকার?

 

তৃষ্ণা বসাক : স্বীকৃতি কে না চায়? কিন্তু মুশকিল হল যখন কোন প্রতিষ্ঠান কবি লেখককে স্বীকৃতি দেয়, তার একটা অলিখিত শর্ত থাকে  যেকোন পণ্যে যেমন খুব খুদে হরফে লেখা থাকে শর্তাবলী প্রযোজ্য, যেটা অনেকসময় বোঝা যায় না, আর বুঝতে না পেরে অনেকে ফাঁদে পড়েনস্বীকৃতির বদলে প্রতিষ্ঠান চায় আনুগত্য, তার সব অন্যায়ে সমর্থনসভাকবি করে রাখার মতো ব্যাপারতাই এই মধুর বিষ গিলব কি গিলব না- সেটাও ভেবে দেখার বিষয়

 

আরিফুল ইসলাম : কবি হচ্ছেন শব্দশিল্পীঅন্যান্য শিল্পীর থেকে কবির পার্থক্যটা কোথায়?

 

তৃষ্ণা বসাক : শব্দশিল্পী তো গদ্যকারও  কিন্তু তাঁর একটা সুবিধে হল তাঁর কাছে একটা কাহিনী বা কাহিনীর আদল থাকে, অনেকসময় দুর্বল শব্দ দিয়েও শুধু কাহিনীর টানে তিনি পাঠককে মোহিত করে রাখতে পারেনকিন্তু কবির তা হবার যো নেইশব্দই তাঁর হাতের তাস

 

আরিফুল ইসলাম : একজন কবি সব থেকে মহৎএতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

 

তৃষ্ণা বসাক : সব কবিই কি মহৎ? আমার মনে হয় যিনি অন্যের ক্ষতি না করে নিজের কাজটা ভালভাবে করে যান, এবং ভাবীকালের জন্য কোন একটা কিছু রেখে যান, সে তাঁর কবিতা হতে পারে বা সরল জীবনযাপন বা সুন্দর ব্যবহার, তিনিই মহৎএকজন জুতো সারাইওলা বা সব্জিমাসীর মধ্যেও আমি মহত্ত্ব দেখেছিএকবার অনেক বছর আগে দক্ষিণ শহরতলির অনেক রাতের ট্রেনে রেল পুলিশের লোলুপতা থেকে আমাকে বাঁচিয়েছিলেন যে সব্জিমাসী, তিনি কি মহৎ নন?

 

আরিফুল ইসলাম : ইদানীং শোনা যাচ্ছে প্রবীণ কবিদের চেয়ে নবীন কবিরাই অনেক ভালো লিখছেব্যাপারটা আপনার কাছে কী মনে হয়?

 

তৃষ্ণা বসাক : শরীরের বয়সে নবীন প্রবীণ হয় না, মনের বয়সে হয়  নব্বই পার করা মণীন্দ্র গুপ্তের কবিতায় আমি বিস্ময়কর তারুণ্য দেখেছি, আবার কুড়ি বাইশ বছরের কবির লেখায় মান্ধাতার ধারণা 

 

আরিফুল ইসলাম : বিচ্ছিন্নতা কি একজন কবির জন্য অপরিহার্য? আপনার মূল্যায়ন কী?

 

তৃষ্ণা বসাক : অবশ্যইতবে মানুষ থেকে কখনো নয়বিচ্ছিন্নতা দরকার অর্থহীন কোলাহল, পণ্যায়ন, ক্লিশে চিন্তা, মৌলবাদ থেকে

 

আরিফুল ইসলাম : শিল্পের মধ্যে জীবন থাকে, জীবনে অভিজ্ঞতা থাকে- আপনার কবিতায় অভিজ্ঞতার কথা কতটুকু?

 

তৃষ্ণা বসাক : দই পাততে গেলে পুরনো দইয়ের সাজা বা দম্বল লাগেঅভিজ্ঞতা সেটাইকিন্তু দুধটি টাটকা হতে হবেতাই অভিজ্ঞতা যেমন দরকার, তেমনই দরকার টাটকা চিন্তা, মুক্ত কল্পনাএই দুটোর সঠিক মিশেল জানলে তবেই তো লোকে হাত চেটে খাবেযেকোন রান্নার রেসিপিতে যেমন শেষে থাকে নুন আন্দাজমত, এটাও তেমনই আন্দাজমত বুঝে নিতে হয়কেউ শেখাতে পারে না

 

আরিফুল ইসলাম : সঙ্গীত নিয়ে আপনার ভাবনা... এ স ম্পর্কে কিছু জানতে চাই

 

তৃষ্ণা বসাক : আগেই বলেছি, গানের মধ্যেই বড় হয়েছিকখনো কখনো এই শরীরকেই গান মনে হয়েছেনিজে প্রথাগত তালিম নিতে শুরু করলেও শেষ অব্দি টানিনি, লেখার মধ্যেই ডুবে গেছি, তবে গান জানলে ছন্দটা আপনি আসেআমি সবধরনের গান শুনে বড় হলেও এখন টান ক্লাসিকাল আর ফোকে  গানের ংঃৎঁপঃঁৎব আমাকে উপন্যাস লেখাতেও সাহায্য করে

 

আরিফুল ইসলাম : একজন কবি ও দার্শনিকের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায় বলে আপনি মনে করেন?

 

তৃষ্ণা বসাক : দার্শনিকের অনেক দায় থাকেঅনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে হয়কবি সেদিক দিয়ে ঝাড়াহাতপাসে শুধু দেখে আর নিজের মতো করে লেখেছোটবেলার ক্লাসের উত্তর লেখার  মতো করে বলা যায় সব কবিই দার্শনিক কিন্তু সব দার্শনিক কবি নন!

 

আরিফুল ইসলাম :কবির স্বাধীনতাআপনার মূল্যায়ন কী?

 

তৃষ্ণা বসাক : সমাজ বা প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাধীনতা পেলেও কবিতা থেকে স্বাধীনতা তো অসম্ভব আর তা কাঙ্ক্ষিতও নয়যদিও প্রতি মুহূর্তে আত্মক্ষয়, অমরতা নামে এক কুহকের টানে নিজের জীবনকে রক্তাক্ত করাতবুও

 

আরিফুল ইসলাম : এপার বাংলার কবিতার ভাষা এবং অপার বাংলার কবিতার ভাষার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?

 

তৃষ্ণা বসাক : স্থানিকতার কিছু তফাত আছে, ভাষা খুব আলাদা নয়ওপারেও ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বাড়ছে দেখিআর অপার কবিতার দিকে তো সাগ্রহে তাকিয়ে আছি

 

আরিফুল ইসলাম : অনেক তরুণ কবিই গদ্য কবিতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেগদ্য কবিতাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? গদ্য কবিতার ভবিষ্যৎ কী?

 

তৃষ্ণা বসাক : অত্যন্ত জরুরি একটা ফর্মভালো কবিতা থাকবে, সে গদ্য বা পদ্য

 

আরিফুল ইসলাম : কবিতায় ছন্দ ও উপমার প্রয়োজনীয়তা স ম্প র্কে বলুন

 

তৃষ্ণা বসাক : গদ্য বা পদ্য সব কবিতাতেই ছন্দ জরুরি আর উপমা দিয়ে  তো কবি প্রতিভাকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারিপুরনো উপমাকে নতুন ভাবে ব্যবহার বা একেবারে অভাবনীয় উপমা, এসব জাত কবিকে চেনায়

 

আরিফুল ইসলাম : সমসাময়িক কবিদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

 

তৃষ্ণা বসাক : নাম করে বলতে পারব নাঅনেকেই ভালো লিখছেন  এইটুকু মনে রাখতে শুধু অনুরোধ করব, কবি মেডিকেল রিপ্রেসেন্টেটিভের মতো ঢাউস ব্যগ হাতে ওষুধের দোকানে যান নাকবিতাই কবির এক এবং একমাত্র পরিচয়নিজের একটা কবিতা এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে-

 

‘..কবিতা লেখার জন্যে মামা বা পিসেমশাই,

কিংবা তিন নম্বর টেবিলের লাল ফাইল-

কিচ্ছু লাগেনা!

শুধু আমি,

আর আমার পিঠের নিচে চমৎকার লাল কাঁকড়ার পিঠ!

 

আরিফুল ইসলাম :  আধুনিক কবিতা বলতে মূলতঃ গদ্য কবিতাএর উৎপত্তিটা কোথায়?

 

তৃষ্ণা বসাক : এইটা বাংলাসাহিত্যের অধ্যাপকরা ক্লাসে বোঝাবেনআমার সে যোগ্যতা নেই

 

আরিফুল ইসলাম : একজীবনে- বহু জীবন যাপন করাআপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

 

তৃষ্ণা বসাক : যেকোন শিল্পীকেই তো তাই করতে হয়, হবেওকারণ জীবন একটাইঅন্য মানুষের জীবন যাপন কেউ হাতে কলমে করতে পারেন, কেউ অনুভবেআসল কথা হল সমানুভূতি  পাশে বসা কারো গায়ে কেউ চড় মারলে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ যেন নিজের গায়ে ফুটে ওঠেঅনুভতিহীন অসাড় মানুষ কবিতা লেখা তো দূরের কথা,   বাঁচতেই শেখেনি!

 

 আরিফুল ইসলাম : সাহিত্যবার্তাকে সময় দেবার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

 

তৃষ্ণা বসাক : আপনাকেও ধন্যবাদ সাহিত্যবার্তার পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান