স্বাধীনতার গুচ্ছকবিতা - হাসানআল আব্দুল্লাহ
স্বাধীনতার গুচ্ছকবিতা - হাসানআল আব্দুল্লাহ

কবি :হাসানআল আব্দুল্লাহ



বঙ্গীয় উপনিষদ

কৃষক দু’বেলা খেতে পায় না।
আরশের দিকে চোখ তুলে বলে,
কিছু দাও।
মাটি, ঘর, গাছ দোলে।
আকাশ কাঁপানো শব্দ ওঠে: ব।
কৃষক এ ওর দিকে চায়। কর্তা কন, বুঝলা বাঙ্গাল!
সম্মিলিত আওয়াজ আসে, হ হ হ ...
আপনি কইছেন: বায়ান্ন।
কর্তা হাসেন, ঠিকই ধরছো।

আরশের দিকে চোখ তুলে কৃষক আবার কয়,
কর্তা কিছু দাও।
আকাশ কাঁপানো শব্দ ওঠে: ব।
কৃষক খিলখিল হাসে, এ ওর দিকে চায়।
কর্তা কন, বুঝলা কিচ্ছু!
হ হ হ ...
আপনি কইছেন: বঙ্গবন্ধু।
কর্তা বলেন, ঠিকই ধরছো।

আরশের দিকে চোখ তুলে কৃষক আবারো কয়,
কর্তা কিছু দাও।
আকাশ কাঁপানো শব্দ ওঠে: ব।
কৃষক লাঙ্গল নিয়ে মাঠে যায়।
কর্তা কন, বুঝলা জোয়ান!
হ হ হ ...
আপনি কইছেন: বাংলাদেশ।
কর্তা হাসেন, ঠিকই ধরছো।

বঙ্গীয় ব-দ্বীপ থেকে আওয়াজ ওঠে: ব ব ব।
বায়ান্ন, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ।


আমার গন্তব্য

আজ সকালে হাসানআল আব্দুল্লাহর বাড়িতে যাবো।
কবির সাক্ষাত আমার একান্ত প্রয়োজন।
সাদা সাদা বরফ চারপাশে,
ব্যালকনিতে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল, হৃদয়ে অজস্র
কবিতার বুদবুদ; বুক শেল্ফে শুয়ে আছে
বাংলার কবিরা। আজ সকালে হাসানআল আব্দুল্লাহর বাড়িতে
আমাকে যেতেই হবে।

ওখানে আশ্বিন মাস পাওয়া যায়
ওখানে নির্বিঘ্নে বসবাস করে আট-ই ফল্গুন
ও বাড়ির ছাদে ওড়ে বিজয়ের পতাকা; ন’মাস
যুদ্ধ করে রক্তাক্ত ছিনিয়ে আনা লাল সবুজের মিলিত মিছিল।
ও বাড়ি বিশুদ্ধ বাংলার বৈদেশিক আশ্রয়;
আজ সকালে আমাকে পুঞ্জ পুঞ্জ
মেঘমালা আমন্ত্রণ করে গেছে।

ও বাড়ির দেওয়ালে টানানো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি;
বাংলাদেশের শুদ্ধ নাম।
রোয়াকে রোয়াকে, ছাদে ও টেবিলে
শোনা যায় গুঞ্জরণ, “আমার সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালোবাসি।” বাজনার তালে তালে
ধ্বনিত, “চির উন্নত মম শির।” আজ
আমার গন্তব্য তাই হাসানআল আব্দুল্লাহর বাড়ি।


মার্চের কবিতাগুলো

মার্চের কবিতাগুলো আস্তে আস্তে মর্চে ধরে
ঝুরঝুর পড়ে যাচ্ছে আমাদের ছেঁড়াখোঁড়া পকেটের
দরজা জানালা দিয়ে। আমরা আদ্যন্ত হাহাকার
করে উঠছি কখনো। কেউ কেউ বুঝবার আগেই আবার
ধ্বনিগুলো চুষে নিচ্ছে আবাল বাতাস।

কতোদূরে হেঁটে গেলে কবিতারা আসে?
সদুত্তর দিতে গিয়ে
বানিংহাম শিক্ষকের দিকে ছোঁড়ে
তিনবার থুথু, “গো ফাইন্ড এ টিচার
হু হ্যাজ নো অ্যাকসেন্ট!”

মার্চের শীতও আস্তে আস্তে ঝরে যাচ্ছে
রাস্তার ফাটল আর
আমাদের চেনা জানা পোষাকের অতিরিক্ততার
ঘুলঘুলি দিয়ে। হেসে উঠতে চাইছে গাছ—
আমার গাড়ির বাতি ভাঙা
সত্তরের বুড়ো ফাটাচেরা খুনখুনে;
এবং তারও ডালে ডালে আসন্ন সবুজ—
নিয়মিত দোলার আভাস।

কতোদূরে হেঁটে গেলে স্বাধীনতা আসে?
সদুত্তর দিতে গিয়ে
ম্যান্ডেলা, মুজিব আর...
শোনা গেলো বহুবিধ করাতের কাতর আজান।


শকুনেরা ভালো আছে

ছোটো বেলা দু’একটি শকুন দেখেছি।
দু’চারটি শকুন কখনো বসতো গাছের মস্ত উঁচু ডালে।
সচরাচর যেতো না দেখা, ওরা খুব
ওঁচা পাখি কিনা! তাই ওদের বিশাল
খরখরে বাদামী পালক আর লোমহীন লম্বা গলা খুব
বেশী দেখতে পারিনি। তবুও দেখেছি মাঝে মাঝে
রাস্তার ওধারে ফেলে রাখা
মৃত গরু ছাগলের হাড়মাস সাবাড় করতে।
কিছু ঝগড়াটে কাক
শৃগাল এবং ভদ্রচিত মাংসাশী কুকুর─
আহ্লাদে দেখেছি খেতে
মৃত গাভীর ওলান। মুরব্বীরা বলতেন,
“শকুন যখন তখন পাতালে নামে না, পাহাড়ে থাকে
ওরা।” কিন্তু মাঝে মধ্যে
তবুতো আসতো নেমে আমাদের গ্রামে
মধ্যমাঠে কিম্বা উঁচু তাল গাছের ডগায়।
আমরা, গাঁয়ের সমবয়সী বালক
বালিকারা, ভয় ও কিছুটা কৌতূহলে
দূর থেকে দেখতাম বিশাল শকুন।

এখন শকুন দেখি, অনেক শকুন।
আমাদের আশেপাশে সুনসান বসবাস,
খায়দায় ঘোরে ফেরে আমাদের সাথে
হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ বিদগ্ধ শকুন
তরতাজা মোটা মোটা উজ্জ্বল শকুন
শান্ত চেহারার সবুজ হলুদ লাল
গোলাপি শকুন। সুযোগ পেলেই
তুলে নেয় অর্জিত সভ্যতা
ওদের ধারালো ঠোঁটে।
চোখ ঘোরালেই এখন শকুন দেখি।


ঝাঁঝরা গুলির শব্দ

নিশ্চয়ই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন
নিশ্চয়ই তিনি জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন
নিশ্চয়ই তিনি অতির্কিতে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন
নিশ্চয়ই তিনি সেই ভয়াল মুহূর্তে অতর্কিতে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন
নিশ্চয়ই তিনি রক্তাক্ত শরীরে সেই ভয়াল মুহূর্তে অতর্কিতে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন
তার রক্তে লাল হয়ে উঠেছিলো মধুমতির উত্তাল ঢেউ

অদূরে তখনো শোনা যাচ্ছিলো ঝাঁঝরা গুলির কর্কশ শব্দ
আর
মৃত্যুগামী মানুষের নিরন্তর চিৎকার।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান