হাসনাত নাগাসাকির তিনটি কবিতা
হাসনাত নাগাসাকির তিনটি কবিতা

কবি : হাসনাত নাগাসাকি

পোস্টমর্টেম



তাহলে কি লাভ হলো?
ওরা বলছে তুমি মানসিক বিকারগ্রস্থ ছিলে।
রাত আর দিন
তুমি আলাদা করতে পারতে না।
এবং বলছে - ঠাঁই দাঁড়িয়ে
রাস্তায় উপচে পড়া ডাস্টবিনে গোঁজামুখ কুকুরের
কলহ দেখতে তুমি!

তুমি যাকে ভালবাসতে, সে ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক ।

ওরা বলছে -তুমি রাত জাগতে, এটা ষড়যন্ত্রের শামিল ;
কবিতা লিখতে চালের দাম ও পতিতা নিয়ে,
এটা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল ;
তোমার নিজস্ব কোন দর্জিদোকান ছিল না,
অথচ, তুমি ঘুড়ি উড়াতে বাচ্চাদের প্ররোচিত করতে,
বুদ্ধিজীবী আর গোয়েন্দার মতে, তুমি কর্ণেলদের গোঁফ ছেঁটে দেয়ার পায়তারা করছিলে।
ওরা বলছে, তোমার প্রিয় ছিল পাখিদের মুখ,
আর রাখালের উদাম সরল ; আর,
তোমার নির্বুদ্ধিতায় তারা হাসাহাসি করছে যে,
পোট্রেটে তুমি জলহীন নদী আঁকতে!
ওরা বলছে, তোমার মৃত্যু কাঙ্ক্ষিত ছিল।

তাহলে কি লাভ হলো!
পোস্টমর্টেম বলছে, আত্মহত্যা!



জীবনের নামের বানান


পতনের দিকে যেতে আমার আর কোনও বাধা নেই।


কেবল নিশ্চিত হতে চাই - পতনের ঠিকঠাক সংজ্ঞাটা কি?


ভালবাসা অস্বীকার করে যার-তার সাথে শুয়ে পড়া পতনের নাম?

অথবা বাল-পাকনা বুড়োর মুখে ছুঁড়ে দেয়া সিগ্রেটের ধোঁয়া?

কিছুই আর আগের মতো না গড়িয়ে যদি এলোপাথাড়ি ছুটে যায় দমকা বাতাস - কি বলো তাকে তোমরা?


চার-রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে

রাষ্ট্রের মুখোমুখি চিতিয়ে দিয়ে বুক,
নগ্ন হয়ে ঠাটিয়ে ধরে বাড়া - আমি বলবো - এ-ই তোমাদের প্রস্তাবিত জীবনের নাম!

কর্পোরেট কাচের দেয়ালে ছুঁড়ে মেরে মানুষের মল -

দৌড়ে না পালিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো। সাপের লেজের মতো গম্ভির মানববন্ধনের সামনে গিয়ে হো হো করে হেসে উঠবো।

পটল তোলার মতো - একেএকে তুলে নেবো ভালবাসাবাসি।

অস্বীকার করবো চুম্বন, অস্বীকার করবো জৈবিক অতীত।


পতনের দিকে যেতে আমার আর বাধাটা কোথায়?


ফুটপাতে পড়ে থেকে শুনে যাবো মাছিদের গান।
উল্টো করে শিখে নেবো জীবনের নামের বানান।



অই_লোকটা_কে?


অই লোকটা কে?
তোমার কোলের উপর হাত রেখেছে অসভ্যের মতো;
কনুইটা স্পর্শ করেছে  তোমার বামস্তন!
ও এতো দুঃসাহস কোথা থেকে পায়?

অই লোকটা,
তোমার কোলে তার ডামহাত রাখা,
কেমন দীর্ঘদেহী, কেমন সাদাটে বেমানান!
আর তার পেশিবহুল বাহু দানবের মতো অসুন্দর।
(অন্ধরা হয়তো তাকে সুন্দর বলবে!)

আমাকেই দেখো, আমি এতো দীর্ঘদেহী নই;
রঙটাও মহান কৃষ্ণের।
আর তুমি জানো, যোদ্ধা একিলিস খাটো ছিলো,
আর, তুমি জানো, যোদ্ধা একিলিস ভর্ৎসনা করতো অহেতুক উঁচুদের।
তুমিতো জানোই, যুদ্ধের জন্য ‘সাইজ ডাজ'ন্ট ম্যাটার’।

অই লোকটা কে?
ও তোমার পাশে বসেও অতো কাছে নয়,
যতোটা তোমার - আমি।
সে কি শুনতে পায় তোমার হৃদকম্পন, যেমনটা তোমার - আমি?
লোকটার সাথে তুমি শীতকালীন সাপের খোলস
বদল করেছো - রাতের খোপরে?

বড়জোর সে তোমার সন্তানের বাবা হতে পারে।
সে তোমার কোলে হাত রাখতে পারে না, কিছুতেই ;
সে তোমার চোখে চোখ রাখতে পারে না।



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান