জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের গুচ্ছকবিতা
 জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের গুচ্ছকবিতা
অ্যাডভোকেট

আমার কোনো অ্যাডভোকেট নেই।

আমি তখন পঁচিশ।মানে পাগলা ঘোড়ার নাচন।
আইন জানি না।মানিও না।দাদার লয়্যার বি কে বসুর
সগর্ব ঘোষণা,তিনি রক্ষক।আইনের প্যাঁচালো গলিতে
তিনি ছোটেন।বগলদাবা মক্কেল।চারদিক থেকে গুলি
ছুটে আসছে জিগজ্যাগ ফাঁক খুঁজে তিনি আশ্রিত কে
বাঁচান।ফল খায় আশ্রিত,কৌশল জানা যার কাজ নয়
স্রেফ চোখ বুজে ভরসা।ভরসা আর দ্বিধাদ্বন্দ্ব সহাবস্থান।

আমি যখন পঞ্চাশ তখনও কোনো অ্যাডভোকেট জোটেনি।
বাহুমূলের অ্যালার্জি অ্যালার্জি ভুলে কেউ দাবা করে ছুটবে
আর গুলি গুলো  শব্দ করে কান ঘেঁষে বেরিয়ে যাবে......
আশার বারুদ লোনাজলে ভোঁতা আগুন গন্ধ কই?

প্রতিটা গুলি নির্ভুল আমাকে ভেদ করে চলে যায় মাখনকঠিন।
পিতামহ ভীষ্ম হয়ে পড়ে থাকি কুরুজাঙ্গলে তবু নিশির অর্জুন
হয়নি কেউ।শ্রদ্ধার মায়াজল কণামাত্র নেই কেবল আগুন।
আগুন আগুন আর আগুন। 


আকাশ

আকাশের কয়েকটি নক্ষত্রকে আর
দেখা যায়না।তারমানে এই নয় যে
আমি আর আকাশ দেখিনা।
কত ফুলে ভরা ওই সীমাহীন মাঠ
দেখতে দেখতে এখনো আমি সেইসব
প্রিয় নক্ষত্রদের খুঁজি।
হেমন্তে ঝরা নীলফুলগুলির জন্য
কুয়াশার সিঁড়ি বাঁধি।
তারপর হিম পড়ে শীত নামে বাগানে
বার্ধক্য জাগে হারানো গাছে ফুল
ফেরে না জানি ভুল স্বপ্নে জাগি রাত।
নক্ষত্রের ছাই  টাইগ্রিসের হাঁটুজলে
হারানো মন্ত্র নিয়ে নীচু আমার আকাশ।


হোলি রং


হোলিকার বুকে হাসে অপরূপ দানবতনয়
আলো আর রঙ হিংসা বা ভয়ের লেশমাত্র  নেই।
বস্তুত বিশ্বাসে সুকোমল প্রাণ চক্রান্তজয়ী
বাধাহীন পোড়ে রাক্ষসী দেহ ছলনার ছাই.....
খোঁজে পথ পুনর্জন্ম বর্ণময় জালক প্রপাত
যাকিছু অন্যায় সে যে অসাধন সাধন।

রেণুময় গন্ধময় বাউল বাতাস
সে পাড়ায় শব্দ ছিল খুব শব্দ আর গন্ধ
কোশ কলা রক্ত পোড়ার পাগল দুর্গন্ধ
রিক্ততার স্বরলিপি সাধে এক খেয়ালিগায়ক
উপচে ওঠে........আবেগের রস।


সর্পিল 

তুমিতো বুঝেই গ্যাছো অনিদ্রার সুখ
দুএকটি ত্রিকোণ নিয়ে জ্যোৎস্নাবিলাস
সহস্রার চক্র থেকে ছায়াপথে ছোটা
সোনালি মাটির নীচে নবীন ফারাও
কফিনে কফিনে বাজে প্রাচীন তৈজস
অচেনা ভাষায় কোন সা রে গা মা সাধা
চাঁদ ডাকে এসো,শকুনের শিশু যদি তান ধরে,
ক্লান্ত মায়ের চোখে কেবল আগুন
পেশাদার ঠোঁট আর পায়ের মিলন
তামাটে ধুলোর ঝড়ে ঢেকে যায়.......

সুখ হাসে পাকদণ্ডী পথ ঘাতকের বেশে
তার খঞ্জরে মাখা মধু ও মাখন.........


চিত্রকল্প

 
একটি মৃতপ্রায় ঝোপ থেকে তরতাজা দুটি তিতির বের হলে বুঝি সেখানে স্বর্গ ফুটেছে।
আসলে শ্মশান বা কবর থেকে এমন রূপকথা ফুটতে দেখিনি কখনো
আমি জসীমউদ্দিন নই।আমাদের রূপকথাগুলো গরম পিচে পিছলায়.......

একটি মৃতপ্রায় ঝোপ থেকে দুটি প্রাণবন্ত তিতির বের হলে সেই ঝোপে স্বর্গ নামে।
ধু-ধু শোকে যে মাঠ ঝিমিয়ে ছিল তার বুকে কৈশোর কেশের মতো কয়েকটি ঘাস উঁকি দেয়।

কোনো মরোমরো ঝোপের ভেতর প্রাণ জাগলে মরানদীটিও হেসে ওঠে
কিছুটা ফাউ জলে সেও যে যৌবনবতী হবে।

হঠাৎ যত শুকনো গাছে ফুলের প্লাবন জীবনের সংকেত মেলায় সে এক জীবন।
দ্যাখো শিমুলের ডালে লেগে গ্যাছে লাল আর অজানা ফুলের গন্ধে ওড়ে বায়ুর চাদর......


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান