ওয়াহিদ জালাল এর গুচ্ছকবিতা
ওয়াহিদ জালাল এর গুচ্ছকবিতা
ইদ মুবারক
আজ চাঁদকে বুকের খুব কাছে টেনে,
তার পাশে বসে,সবাই গল্প করতে আনন্দে এলোমেলো,
আমি আমার চাঁদকে খুঁজতে খুঁজতে
ইদের দিনটি বুকের খুব কাছে থেকে নীরবে চলে গেলো!
যদি তার সাথে তোমার দেখা হয় হে সন্ধ্যার
আকাশ, তাকে ইদ মুবারক বলে দিও।
চাঁদের মামাবাড়ি নেই
দিনের জন্য আশীর্বাদ চেয়ে রাতের চাঁদ
সুবেহসাদেকের বুকের ভেতর লুকিয়ে গেলো,
চাঁদের মামা বাড়িতে যাবার কোন তাড়া নেই
বলেই সে অন্ধকার খুব বেশি ভালবাসে,
অথচ মানুষের দীর্ঘশ্বাস কতো সহজে নষ্ট হয়
অন্য মানুষের চোখের সম্মুখে!
মানুষের তাড়া থাকে,থাকতেই হয় জীবনের প্রয়োজনে।
আমি সড়কের পাশে বসে অসুখ বোঝাই জীবন গাড়ি
যেতে দেখে হাত প্রসারিত করে ছিলাম,
গাড়িটি এতো ধীর গতির যে পায়ে হেঁটে যেতেও
আমার সামনে পড়ে থাকা বাকি বেলা পেরিয়ে গেলো
অনেক দূরে!অবিকল ভালবাসার মতোন দোল খেয়ে
বুকের ভেতর কোথাও ঘাই মারলো সেই বাউলের গান।
নিজের জন্য সকল প্রাণীর প্রার্থনা থাকে তার মঙ্গল
হউক,ইমানের মায়ের মুরগির কসম,কোনকালে কেউ
নিজের ঘরে দুঃখ আসুক কামনা করে না,
সেই পড়ে থাকা বাতিগুলোর মনের অভিলাষ কী আর
থাকতে পারে যে ঘরে সন্ধ্যার আধাঁর কড়া নাড়ে না!
আমি একবার এক মোরগের সাথে কথা বলার জন্য
দীর্ঘদিন তার কন্ঠের ভাষাকে বুঝতে তার ঘরকে
নিজের ঘর ভেবে কাটিয়েছি দুইজনে বহুদিন,
শেষে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আচ্ছা বলোতো,
তোমাকে মানুষ বাঁচতে দেয় না কেন,কেন তোমার
গলা কেটে দেয়?
মোরগাটি হাসতে হাসতে বললো,তুমি কী জানোনা?
মানুষদেরকে যারা ঘুম থেকে জাঁগায় এমনই হয়
তাদের জীবনে।

সিজদা

নিজের ছায়ার পাশে দাঁড়িয়ে তার দীর্ঘতা
আন্দাজ করি,হিসেব মিলাতে থাকি,
হিসেবে বারংবার গড়মিল হতেই থাকে।
চারপাশের পরিবেশ অবলোকন করছি আর
ভাবছি,শ্বাসতো আমি নিতেই আছি,কেন আমার
শরীরের ভিতরে তার কোন প্রতিকার হচ্ছে না!
পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রবাসী বৃক্ষ,আমি
জানি,কখনো বৃক্ষরা মানুষের মতো আচরণ করে,
তবু জানতে চাইলাম,বলোতো হে বৃক্ষ
আমি যে প্রতিদিন বাতাসের গ্লাস ভরে কষ্ট পান
করছি তা আমার কাছে খুব মিষ্টি মনে হয়,
আজ যদি বিষ পান করতে চাই বেঁচে থাকবার
কৌতূহলে,তার স্বাদ কেমন হবে?

বুকপুড়া আগুন জীবন পুড়ায়

শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে এমন একটি ছবি আমার বুকের মাঝখানে রক্তের দেয়ালে লটকে আছে ।
প্রতিদিন সময় অসময়ে বুকের সদর রাস্তা ধরে তার ছায়া ব্যথিত হয়ে জীবনের শূন্যস্থান পূরণ করার চেষ্টা করে । আমি মমতাকে বেদনার ফিতায় বাঁধ দিয়ে ধরে রাখি পাখীর বুকে লাগা বাতাসের আর্তনাদের মতো, যা কাউকে বোঝানো যায় না ভাষায় ।
হারানোর জ্বালায় এক রকম আনন্দ মিছিল করে যা কিনা চোখের জলে গাল ভাসিয়ে জ্ঞানী হয়ে উঠে মুক্তার ঔরসজাত কঠিন শিলায়, মায়ার আচরণ পরদেশীদের মতোন, নিজের আঙুলের ঘোরপাকে সে সময়কে অসহায় করে দেয় । কবরের মাটি পুরনো হলেও তার উপরে নতুন ঘাস লকলক করে জন্মে সে অসীমের কাছে দৃশ্যমান হবে বলেই বাড়তে থাকে ।
বাবা তোমাকে ছুবার জন্য তোমার কবরগাহে চলে আসি,তোমাকে ডাক দেই, বাবা,বাবা ও বাবা
বাবা তুমি নেই, এই পাগলের বুকের জ্বালা আর কেউ বুঝে না, বুঝবেও না কোনদিন ।
বাবা তুমি ভালো থেকো । সৃজনের চিরস্থায়ী করুণার আলোড়ন সৃষ্টি করে যে বিশ্বাসের মোমবাতি,তার ছায়া তলে আমি চোখের জলে প্রভুর শেখানো আয়াত তোমার মাগফিরাতের জন্য পাঠাই তারই কাছে ।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান