শাহানারা ঝরনা'র ৭টি কবিতা
শাহানারা ঝরনা'র ৭টি কবিতা

কবি : শাহানারা ঝরনা

অপেক্ষায় থাকি

ক্রমাগত হারাচ্ছে বাঁকাচোরা  বিশ্বাস 
অন্তলীন জীবাণুর ভেতর ভ্রুণের কলস্বরে 
কেউ গুনি অস্থিরতার প্রহর 
কেউ বা দীর্ঘশ্বাসের বাতাসে ভেসে 
পাড়ি দিই সীমাহীন উপলব্ধির সাগর 
পরিত্যক্ত বিষাদ কিংবা নিরুদ্দেশ যাত্রায়ও জ্বলে প্রহসনের আগুন। 
দেখি আর তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে আঁকি
 হীনমন্যতার ছবি    
কতকিছু  হারিয়ে যায়,,,, 
হারানো কারুপণ্যের ভেতর
 মূল্যবোধের ভারসাম্য নিয়ে     
বিশ্বাসের অপেক্ষায় থাকি হাজার বছর। 

 মেঘবতী মেয়ে গাঁথে 


শব্দের যানজটে বসে মেঘবতী মেয়ে গাঁথে স্বপ্নের মালা, সন্ধ্যার উলুধ্বনি শুনে কবিতার বধূ যদি মধুবিলাসি রাতের সন্ধান পায় ক্ষতি কী তাতে!  
মসনদে বসে কেউ সুখ্যাতির সূচি সাজায়, ডিজিটাল বারুদে পোড়ে সভ্যতার চোখ 
তুমি চাইলে বিষাদ সুতোয় গেঁথে নিতে পারো হৃদয়, অণুভাবনার মোড়কে মোড়া দুখলিপিকার নির্যাসটুকু হয়তো অধরাই থেকে যাবে, 
দুচোখে যমুনা বইবে না হয় পরাধীন থাকবে পুষ্পিত সময়, ইচ্ছের মালিকানা চাইব না কোনদিন। 
 আমি নিশ্চিত জানি ইচ্ছেবাড়ির প্রধান ফটকে বসে তুমিই একদিন অনুভূতির গোলাঘর সাজাবে। 
প্রগতির বসতবাড়িতে কতোকিছুই হয়, সৌহার্দ্যের রাশিফলে  যোগ হয় দ্বান্দ্বিক স্বরলিপি। 
বস্তুুত,,,,সুখ দুঃখের প্লাটফর্মেে কোনদিন
 ব্যর্থ জীবনের সমন্বয় হয় না। 

সময়ের সাথে 


সুন্দর ছুঁয়ে থাকে মনের আকাশ 
চোখে ফুটে থাকে স্বপ্নের তারাফুল 
চেতনাসিদ্ধ পুঁথিপাঠ নিয়ে কখনো মিতালিতে মাতি,  পরবাস্তব সময়কে রাখি বুকের ভেতর। 
একদিন জল বর্ষার নূপুর পায়ে মেঘবালিকা আসে, চাতক ঠোঁটে ঢালে তৃষ্ণার জল 
আমার চাতকী মন অমৃত সাগরে ডুবে
এনে দেয় আশাজীবী জীবনের খোঁজ 
চেতনার বৈধতা নিয়ে সৃজনিক বলয়ে ঘুরি 
এভাবেই সময়ের সাথে করি লেনদেন। 
 
অথচ জানি


শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় কাটে ব্যস্ত প্রহর
আমার কোজাগরী রাত কখনো  বন্ধক রেখেই 
সুখের অঞ্জলি দিই সমর্পনের জলে 
দৃষ্টি সীমানার ভেতর স্বপ্নের মায়াবীজ বুনি 
ছুটে যাই দেশান্তরেে 
কখনো আমিত্বকে উজ্জীবিত করে
 কাল মহাকাল,     
অথচ নিশ্চিত জানি,,,,আমি তো আমার নই!! 
অমরত্বের আশায় জড়োয়া বিপনী সাজাই 
কখনো মুঠোবন্দী করি সভ্যতার চাঁদ 
বাসনারা মেঘ হয়ে বশিভূত চেতনায় ঢালে জল। 

অনুভূতির পরমায়ু নিয়ে


দূরত্বের হাত ধরে যায় না আকাশ ছোঁয়া
তবু যদি বলিস কখনো, " চল যাই, মেঘবাড়িতে ঘুরে আসি '" --
আমি তবে রূপোরং মুঠোয় ধরে  
আকাশে উড়িয়ে দেবো ইচ্ছের ঘুড়ি 
অতিথি দিন হয়তো মেলে দেবে ভ্রমণ ডানা
কিংবা আহলাদি কিশোরীর মতো 
খুনসুটি করবে চলমান সময়। 
কিছু ঋণ শোধ হয়না কোনদিন
বসত করে পরম্পরার অস্তিত্বের ভেতর 
খেলাপি ঋণের বোঝা নিয়েই 
ভাবনারা বয়োবৃদ্ধ হয়    
তুইময় ক্যামেরার ভেতর ঝলসানো ছবিগুলো হয়ে ওঠে আভিজাত্যের প্রতীক  
অভিমান জাগে না 
বিষাদ বাড়ে না 
অনুভূতির পরমায়ু নিয়েই খুলি
 মানবিক সভ্যতার অবগুন্ঠন। 

জীবনের ইতিহাস


বৈকালিতে বসে দেখি পড়ে আছে অপার খেয়াঘাট ,
ধীরগতিতে রাত নামে , বন্ধ হয়ে যায় নিয়তির কলাপসেবল গেট ।
অনেক কিছুই কিংবদন্তি হয় , 
 শিরোনামহীন পড়ে থাকে মুর্খামির জীবন পঞ্জিকা ।

হৃদয়ের দূষণ রোধে কেউ যদি হয় মনস্তত্ত্ববিদ 
দলছুট মেঘের মত আমিও হারিয়ে যাব একা 
বস্তুত অধনমিত কোন অপসিদ্ধান্তের কারিক্যুলাম 
হীনমন্যতাকে বর্ধিত করে আজীবন !
ট্যুরিজমবিদ্যার আপগ্রেড পাণ্ডিত্যও ঢেকে যায় খোলসের আবরণে -
লোপ পায় মনিটরিং ক্যাপাসিটি ।

যখন কেউ মধ্যবয়েস পেরিয়ে পৌঁছে যায় বার্ধক্যের ঘাটে 
সুনসান নীরবতায় পোড়ে শেষকৃত্যের পাণ্ডুলিপি 
সংবিধিবদ্ধ নিয়তির বিজ্ঞাপন বারবার পাল্টায় রঙ 
মায়ামঞ্চের উপঢৌকন নিয়ে ভাবের মানুষ চলে যায় অনেক দূর ।
 আমিরি আভিজাত্য ধারণ করে দেখি 
মননের সেন্সর বোর্ডও দুর্নীতির আওতামুক্ত নয় ---!
লেখা হয় তবু জীবনের ইতিহাস 
পুরোহিত আবহেই করি সেলফি সমাবেশ !

বোধনের  চিঠি


অতিথি পাখির ডানায় আকাশের নীল ভাসে
চপল বাতাসে ওড়ে রূপকথার ভেজা মেঘ |
আজকাল মেঘেরাও নীল শাড়ি পরে নায়র যায়
কখনোবা বৃষ্টির পালকি চড়ে  নেমে আসে আমাদের উঠোনে ;
 দৃষ্টিতে এঁকে দেয় কাদামাটির জলছবি !

যখন ওরা জলের পিঁড়িতে বসে .
পদ্ম-পুরাণ গল্প শোনায় ....রূপশালি ধানভানা
কিশোরি মেয়ের গলায় কেউ একজন 
পরিয়ে দেয় বন্ধনের সীতাহার ! 
পায়ে তার রুমুঝুমু নূপুর বাজে...শোনা যায় .
অতীত. বর্তমান ও ভবিষ্যতের সুরধ্বনি..!
বদল-নামতা পড়তে পড়তেই কিশোরি একদিন
যুবতি হয় , হয় গৃহিনী কিংবা পূর্ণবয়স্ক রমনী |
রমনী শৈশব- ভালোবাসার নক্ষত্র টিপ পরে
হেঁটে যায় দূর .....বহুদূর...! 
 ব্রতচারী ভাবনার প্রত্যয়ী  মূহুর্তগুলো কখনো নিবিড় হয় ...
জোছ্নার হাত ধরে আঙিনায় আসে নবোঢ়া চাঁদ
সে মমতায় খুঁজে পায় হারানো চারুকারু দিন..|
ব্যবচ্ছেদের ভাঁজে ভাঁজে শোনা যায় 
 অন্তর্দৃষ্টির কোলাহল...
রমনীর অহমী প্রহর হয় আরো বিস্তৃত .!
অতঃপর বোধনের চিঠি নিয়ে আসে বেহুলা মেঘ..
সচকিত রমনীর দুচোখের পাতায় নাচে 
চিরায়ত বাসনার প্রজাপতি..
শুচিতার পাঠঘরে চলে সুহৃদ পাখিদের 
অবাধ অভিসার ..! 
অবশেষে...একদিন
রমনীও নীল শাড়ি পরে  ,  নায়র যায় .....
পিছনে পড়ে থাকে তার কাদামাটির শৈশব.!



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান