গুণী সাহিত্যিক ও অর্থনীতিবিদ ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৫৯ সালের ৩ জুন ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ইফ্ফাত আরা দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যের কাগজ দ্বিতীয় চিন্তা।

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন এবং ১৯৯৭ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে অধ্যয়ন করেছেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ডিকিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কিছু সময়ের জন্য পাবলিক পলিসি অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচ) যোগ দেন। অতঃপর সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কাজ করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ও আংকটাডের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তিনি কূটনৈতিক পদে বেলজিয়াম, সুইজারল্যাণ্ড ও লুক্সেমবুর্গ এ দায়িত্ব পাল করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক এই মহাপরিচালক অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা ও অপারেশানস্ও বিজনেস রিসার্চ ইত্যাদি বিষয়েরও অধ্যাপক।

কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর গবেষণার অন্যতম অধিক্ষেত্র। তার বই Corrupt Bureaucracy and Privatization of Tax Enforcement সরকারি দপ্তরে দুর্নীতির তত্ত্ববিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশের ওপর। অভিধান বহির্ভূত ১ হাজার শব্দের সংকলন প্রণয়ন করেছেন। রবীন্দ্রনাথের চিত্রসাধনার কালপঞ্জী বের হবে আগামীতে। ১৭৭৮-এ প্রকাশিত হালেদের বাঙলা ব্যাকরণের দ্বিতীয় সংস্করণ সম্পাদন করেছেন। তার অন্যতম গবেষণা ‘পূর্ব পশ্চিমের চটি সাহিত্য’।

এক কথায় ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সক্রিয় অবস্থানে কাজ করে চলছেন। সাহিত্য গবেষণা তাঁর প্রিয় ক্ষেত্র। তিনি জীবনানন্দ দাশের কবিতা ও অন্যান্য রচনা নিয়ে প্রায় তিন দশক যাবৎ গবেষণা করে চলেছেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তিনি জীবনানন্দ দাশের স্বহস্তে লিখিত পাণ্ডুলিপির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের সঠিক পাঠ নিরূপণ করেছেন। বিশেষ করে রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের বর্জিত অংশ পুনরূদ্ধার করেছেন ও সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত শব্দাবলী বর্জন করে বিশুদ্ধ পাঠ তৈরী করেছেন।

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী একটি নাম। সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজের রুচিসম্মত চিন্তার একজন অসাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সাহিত্য ইতিহাসের যে কোন জটিল সমীকরণের সমাধানে বিজ্ঞ মানুষটি আন্তরিকতায় সদ্য উজ্জ্বল আভা ছড়াচ্ছেন নীরবে!