আনিসুর রহমান অপু 📘 কবিতাগুচ্ছ
আনিসুর রহমান অপু 📘  কবিতাগুচ্ছ
হয়, এমনও হয়


হয় ,এমনও হয়--
নথি আর নিয়মের বাইরেও থাকে কিছু টান,
মনে হয় মূখ্য নয়, কেটে যাবে আপাত উজান
অথচ গভীরে ফুটিয়েছে দাঁত
অন্তর্গত অনুভূতি করেছে আঁতাত --
গৌণ ভেবে,ভাঙোনি কখনো মৌনতার সিঁড়ি
অথচ অতলে,প্রতিকূলতার স্রোত ঠেলে ঠেলে পেরিয়েছে মরু-গিরি,
চলে গেলে বোঝা যায়,জোয়ারের তীব্র আলোড়ন--
কতো যে-ছিল আপন, কতোটা কাছের--
পাখি উড়ে গেলে, মিলনের মহার্ঘ মুহূর্ত থেকে নিঃস্বতায়
নৈঃসঙ্গ্যের নির্জন পালকে নিংড়ে নামে খরা ক্ষরণ,
কবেকার বলা না-বলা কথার বিনম্র ব্যঞ্জনা তবু 
ছুঁয়ে থাকে ভাঁটফুলের ভালোবাসায়

 

 


বিপন্ন বিস্ময়


তুমি হারতে পছন্দ করো না- জেনেই, ইচ্ছে করে হারি,
জিতেও অথচ, পরে থাকো কাঠিন্যের গাঢ় আবরণ!
সংবেদনে যার ফুটে ওঠে নীল পদ্ম, সুষমা সঞ্চারী
সদা প্রিয়, ‘ বিপন্ন বিস্ময়’, প্রমিত প্রণয় সংকলন। 

 

 

 


প্রাণের পরাগ


মূলত, বিষন্নতার বিরুদ্ধেই আমাদের ব্যাপক বিদ্রোহ--
উড়ে এসে জুড়ে বসা নীলকরদের কাছ থেকে 
আমরা নিইনি কোন দাদন,অথচ 
সর্বাত্মক শোষণের শেকল পরিয়ে রাখে তারা দিনরাত 
দুধভাত দিয়ে পুষেছি অঢেল দুঃখ,
বঞ্চনা-বিভ্রম,নিয়েছে দখল বুকের জমিন যথাসাধ্য--
তৃষ্ণার ত্রিমাত্রা মরু,হৃদয়ের নরম চত্বরে ফলিয়েছে নৈরাজ্যের কাঁটাগুল্ম,
নৈরাশ্যের ধূ ধূ মরীচিকা --
কী আকুলতায়ই-না খুঁজে গেছি শুদ্ধ সহচর,
নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে জোছনার মাধুর্য মঞ্জরি--
এবার, মরুভূমিতে হবে আশার আষাঢ় চাষ,
ধ্রুপদী মুদ্রায় নেমে আসবে বিনম্র মেঘের আল্পনা,
মুঠোভর্তি প্রাণের পরাগ--
এই দুঃসহবাস অথবা গুমোটের অভয়নগরী ছেড়ে 
চলে যাবো ঠিক বুক খোলা অরণ্যের ঠিকানায় ,
খরায় কাটাতে এমন নির্মম, আসিনি ধরায়--
শীতের শুষ্কতা ছেড়ে হারাবো শ্রাবনে, দেখে নিও--
একদিন,
এক বরষায়

 

 

 


একজন টোকন ঠাকুর


রাষ্ট্র যে ভীষণ ন্যায়পরায়ণ সেটি প্রমাণের দরকার ছিল খুব
প্রশাসন এমনকী কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজা হরিশ চন্দ্রের সময়কেও মানাবে হার! ভোটের বাজারে এর বিশ্বস্ততা যে বত্রিশ আনা 
দিনকানা সব সাংঘাতিক আর মান্যবর কমিশনার ইতিমধ্যেই
দিয়েছেন সমস্ত প্রমাণ তার
বাঁশবান্ধব অর্থনীতির উর্ধ্বগতি পাওনি কি উপহার
উড়ালসড়ক আর সেতু বিষয়ক উন্নয়নের উরুও 
দেখানো হয়েছে শনৈ শনৈ
আমেরিকা-কানাডা বা বাড়ির পাশের মালয়েশিয়ার বেগমপাড়ার বাজারগুলো কাদের বদান্যতায় এখন রমরমা,


সে প্রশ্নকে আপাতত দিই না-হয় নিস্তার
রিজার্ভ চুরির ফয়সালা ডিপ ফ্রিজে তুলি রাখি সযতন
নতুবা বেরিয়ে যাবে মহামান্য রথী-মহারথীদের নাম!
- কোটি টাকার ঋণডাকাতগুলো কোথায় বা কার পাশে করে ঘুর ঘুর
সে তো সবারই জানা! শকুনের ডানা কেটে দেয় সাধ্য কার?
এতো এতো গুমের গুমোট গল্প এবং ক্রস ফায়ারের নৃশংসতার পরও 
কোন বুকে বেঁচে থাকে এতোটা হেডম আর


নিশ্চয়ই মিলে যাবে এবার, অল্পের জন্য হাতছাড়া হওয়া শান্তির নোবেলখানা, এই মওকায়
ক্ষমতা সুদীর্ঘ করণের জন্য যদি যাবতীয় অনিয়মই নিয়ম হয়ে যায় ক্রমশ, অথবা--ধর্ষকের শিশ্নের তলায় চলে যায় দেশ
কিংবা একজন টোকন ঠাকুর, এক কোটি ষোলো লাখ টাকার ফুটেজ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়ার পরও গ্রেফতার হন, অনুদানের খুদকুঁড়োয়* সময়মতো সিনেমা বানাতে ব্যর্থ-হওয়ার অপরাধে-
তুমি রাধে পারো না মোটেই দিতে তাতে দোষ
নন্দ ঘোষ শিল্পী-কবি, সাধারণ হাজার বছর ধরে 
স্বৈরাচারের থাবার তলায় হয়েছে বলি বার বার!

* যাবত দেওয়া হয়েছে সাড়ে দশ লাখ টাকা মাত্র! এবং সাড়ে চব্বিশ লাখ টাকা এখনও বাকি তার!

 

 

অথচ অজস্র দিন


ভাবছি, ছেড়েই দেবো হাতটানা পড়েনে তাঁত বুনেছি অনেক!
কী হয়? কী হবে, কবিতা-কবিতা করে আর
জীবনের ক্ষতি-ক্ষত কতটা বা তুলে আনা যায় ভাবে-অনুভবে


হাত ধরে তার, হয়েছে কি কোনো মহার্ঘ সাধন
মিলেছে মাধুর্য, একান্তের অবুঝ-সবুজ সাধ?
নানান অশান্তি আরো দাওয়াত দিয়ে ডেকে এনে বসিয়েছি নিজের দাওয়ায়!
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়িয়েছি ঘুড়ি, দেখেছি মানুষ, কতো সাধারণ
ফানুসের মতো বড় অল্পেই মিলিয়ে যেতে শূন্যের প্রাসাদ
কবিতায় নতুনের আবাদ, হচ্ছে কি তেমন কিছু
নাকি সেই, ‘ থোর বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোর!’
ঘোর চাষ করে করে আলেয়ার পিছু রোজ হন্যে হয়ে ছোটা
বোঁটা থেকে খসে যায় অথচ অজস্র দিন


পংক্তির পার্থক্য যদিও বা থাকে 
বিষয় তো আদ্যন্ত একই তাও আগাগোড়া
শব্দের শাবল আর অনুভূতির গাঁইতি কোদাল চালিয়ে 
খোঁড়াই যদি-না যায় যাপিত সময়
কী-হবে, কী হয়, হাঁটু জলে খেয়ে হাবুডুবু
ইলশেগুড়ি বৃষ্টিতে এমন অঘোর জুবুথুবু বেমানান খুব,
যদি না-পারো অতলে দিতে ডুব-


আলোর আদরে গ্রহের সারাতে অসুখ;
তবে থাক অমেয় আঁধার এই
অন্ধকারে যদি না ফোটাতে পারো জোছনার ফুল 
তুমি হে বেভুল এমনই উপায়ান্তহীন!
তবে আঁধারই অমর-অমোঘ হোক
যতো দূর চোখ যায় ঢেকে যাক, কালো কুয়াশায়

 

 


মুঠোর ভেতর আকাশ


গত আগস্টে আমার ছোট ছেলে চোদ্দ ছাড়ালো, লম্বায় বাবাকেও ছুঁই ছুঁই! পাশাপাশি দাঁড়ালে প্রায়ই বাবা এবং বড় ভাইয়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাপবে কালকের চেয়ে আজ কতোটুক বেড়েছে হাইট! তার কাছে লম্বায় বড়ত্বটাই আপাতত বড় হয়ে যাওয়া! তারপরই মুঠোর ভেতর আকাশ
থাকবো না কো বদ্ধ ঘরে—‘
অথবা বিস্মিত বাতাস সাঁতরে পৌছে যাও অন্য গ্রহে
গ্রহান্তরেনক্ষত্রের ঠিকানায়!
কে আর নাগাল পায় তার


কতো কী বোঝাই তাকে, বাঁকে বাঁকে কতো কাঁটা কাঁকর!
জীবন চলার পথে কতো ফাঁক-ফাঁকি ফোঁকড়-
ভাবো তুমি হয়তো পৃথিবী কেবল ফ্যান্টাসীতে ভরা-
আছে খরা, জরা-ব্যাধি আর বাস্তবতার টানাপড়েন 
মানুষের রকমফের চেনাবে তোমায় মুখ- মুখোশের নানা রঙ!
লম্বা হতে হতে আকাশ ছুঁলেও বড় নয় তুমি, যদি না মানুষ হিসেবেও বড়ত্বের ছাপ রেখে যেতে পারো দুনিয়ায়


দিনভর এই যে ভিডিও গেম কিংবা হাঙ্কিপাঙ্কি মাইনক্রাফটের পেছনে যতোটা সময় দাও রোজ, তার থেকে বেরিয়ে আসতে যদি ব্যর্থ হও ব্যাহত হবেই তোমার জগৎ দেখার উড়ান
কোরান-পুরাণ কিংবা বিজ্ঞানের সূত্ররাও এই সত্যের পক্ষেই গেয়েছে সাফাই বারবার!
এই ছেলেকেই অথচপারফেক্টশনিস্টউপাধি দিয়েছিলেন এলিমেন্ট্রি স্কুলের টিচার তার! এখনও যে নিজেকে একটু পুশ করলেই পঁচানব্বই-নিরানব্বই কিংবা হান্ড্রেড পার্সেন্ট নাম্বার আনতে পারে হেসে-খেলে, সেই ছেলেই আবার আটান্ন বা পয়ষট্টি পাওয়াতেও কিছু মনেই করে-না
আমি বলছি না যে, এই ফলাফলগুলোই রাতারাতি স্বর্গে তুলে দেবে তাকে কিংবা নরকের নিচে সরাসরি খাওয়াবে গড়াগড়ি!


দেখেছি উচ্ছন্নে যেতে তুমুল-তুখোড় বোর্ডে স্টান্ড করা ছেলেমেয়েদেরকেও! ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া বন্ধুটি আমার, তিন বেলা ভাতের বদলে ঘুষ খেয়ে খেয়ে টাকার টাইটানিক আজ! মানুষ হিসেবে মহত্বের কতোটা কী কারুকাজ শিখেছে সে জানা নেইমানা নেই স্বপ্ন দেখতে অথবা মহাকাশে বানাতে প্রাসাদযতো সাধ ওড়ো, যতো বড় হতে চাও, হও


কিন্তু মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়-না যেন শেকড় তোমার, বাপ
জেনে রেখো ছোট-বড় সব পাপ, দিনশেষে রেখে যাবে গাঢ় পরিতাপ- -
যদি জ্বালো আলো কারো জন্য এতোটুকু
দেখাবে সে আলো তোমাকেও পথ
যদি ঢালো অন্ধকার, তুমিও নিশ্চিত পাবে তার হিস্যা
কালের শপথ!


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান