কবি ও আইনজীবী ইসমত শিল্পীর একান্ত সাক্ষাতকার : আরিফুল ইসলাম
কবি ও আইনজীবী ইসমত শিল্পীর একান্ত সাক্ষাতকার : আরিফুল ইসলাম

কবি ও আইনজীবি ইসমত শিল্পী

 এ সময়ের কবি ও আইনজীবী ইসমত শিল্পী। ১৯৭০ সালে তিনি মেহেরপুরের জেলার গাংনী উপজেলার মানিকদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।


তিনি বাংলাভাষা ও সাহিত্যে বিএ (অনার্স) এবং একই বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর।
কবিতা লেখেন ছোটবেলা থেকে । মেহেরপুরের সাপ্তাহিক পরিচয়ে ১৯৮৫ সালে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়।


১৯৯০ এর স্বৈরাচার আন্দোলনের সময় সম্পাদনা করেছেন আন্দোলনের কবিতা নিয়ে ‘দংশন’ সাহিত্য পত্রিকাসহ  একাধিক ছোটকাগজ।


প্রকাশিত গ্রন্থ:

১০টি ৮ টি কাব্যগ্রন্থ, ২টি পত্রকাব্য

সম্মাননা:

অপরাজিত সাহিত্য সম্মাননা- ২০১৫, কোলাহল- সেরা লেখক পুরষ্কার- ২০১৫, শিল্পায়ন নাট্যচর্চা সম্মাননা- ২০১৮ ।

কবি ও আইনজীবী ইসমত শিল্পীর একান্ত সাক্ষাতকার গ্রহন করেছেন কবি ও সাহিত্য বার্তার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ।


 

আরিফুল: একজন কবির সাক্ষাৎকার শুরুর জন্য যথার্থ প্রশ্ন কী হতে পারে? আপনি কিভাবে আলাপ-সালাপ শুরু করতে পছন্দ করেন?

 

ইসমত: আমি খুব সহজভাবে কথা বলতে এবং শুনতে পছন্দ করিযেহেতু এখানে প্রশ্ন তো থাকবেইযদি প্রশ্নটা এমন হয়: কবিতা কেনো লেখেন ? এটাই হওয়া স্বাভাবিকউত্তর: না লিখে থাকতে পারা যায় না বলেই লেখি

 

আরিফুল : আপনার কবিতা লিখতে শুরু করার সময়টা জানতে চাইছি , মানে কবি হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পেয়েছেন?

 

ইসমত: ক্লাস নাইন থেকেআমি হাটবোয়ালিয়া হাই স্কুলে ক্লাশ টেন পর্যন্ত পড়েছিওই স্কুলে কাশেম স্যার আমাদের সময় নাইন-টেন এ বাংলা পড়াতেনখুব ভালো লাগতো স্যারের বাংলা পড়ানোক্লাশে কবিতা পড়তেন চমৎকার ! কোনো ক্লাশ বাকি থাকতো না যে উনি কয়েকটা কবিতা পড়তেন নাসেটা ক্লাশের পড়ার বাইরেওআমি মুগ্ধ হয়ে শুনতামশুনতামই না শুধু ভেতরে এক ধরনের সাড়া অনুভব করতামসেই সময় আবৃত্তি উপস্থাপনাও করতামসেটাও বলা যায় কাশেম স্যারের অনুপ্রেরণাতেইতখন থেকেই লেখার ইচ্ছেটাও তৈরি হয়তখন কবিতা কেমন হয়? কীসে হয়?  কীভাবে হয়? ওসব বুঝতাম নাযেভাবে মনে আসতো ডাইরিতে লিখতামসেগুলো কিছু মিল, কিছু অমিলের শব্দগাঁথা; যা মগজে আসতোআমি এখনো ওটাই করি, চেষ্টা করে লিখতে পারি নামানে লেখি নালেখা যখন আসে তখনই কেবল লেখি

 

আরিফুল : কবি পরিচয়ের বাইরেও আপনার আরেকটা বড় পরিচয়, আইনজীবির পরিচয়একইসঙ্গে এ দুই পরিচয়ের ভারসাম্য রক্ষা করেন কিভাবে?

 

ইসমত: আমি আগে কবি, তারপরে আইনজীবিমানে বাংলায় অনার্স মাষ্টার্স করেছিলাম আগেঅনেকদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছিচাকরির পাশাপাশি এলএল.বি করে বার কাউন্সিল করলামপরে আইন পেশাতে, জীবনের তাগিদে না বলে জীবিকার তাগিদে বললে ভালো লাগবেব্যক্তিগতভাবে পেশাগত জায়গাটা কবি স্বত্বা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখিএকটা বড় ব্যাপার আইনজীবী হিসেবে আমার প্র্যাকটিসটা সিভিল বা ক্রিমিনাল সাইডের নাশুরু থেকেই ইনকাম ট্যাক্স এবং কোম্পানি ল নিয়েএখানে কোর্ট কাচারি সংক্রান্ত বিষয় নেইসবই কর্পোরেট সাইড তবে আইনিভাবেকোর্ট প্র্যাকটিসটা আমার ঠিক ধাতে আসে নাযদিও সব ধরনের বিষয়ের উপরে পরামর্শ দিতেই হয় প্রায়ইআমার মনে হয়, ওই সাইডটা করলে খারাপ করতাম নাকিন্তু ওসব জটিলতা ভয়ংকর মনে হয়আমার পেশাটা খুব ঝুটঝামেলারএর মাঝে লেখাটা চালিয়ে নেয়াটা বড্ড কষ্টের হয়ে পড়েকিন্তু ওই যে, নেশাসব মানুষেরই একটা না একটা নেশা তো থাকেইসেটা আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায়কবিতা আমার প্রধানতম আশ্রয়আমার পরম স্বজ¦

 

আরিফুল: আপনার কবি জীবনের কিছু স্মৃতি জানতে চাই

 

ইসমত: স্মৃতি তো কতই থাকেওসব বলতে গেলে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব নাস্মৃতিই কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে একজন  লেখকের জন্যেস্মৃতি কে আমার পুস্তক ও শিল্প মনে হয়

 

আরিফুল: একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছে করছে, সেটা হলো কবিতা লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার কতটা প্রভাব থাকে বলে আপনি মনে করেন?  নাকি আদৌ কোনো প্রভাব তার থাকে না?

 

ইসমত: শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি সার্টিফিক হয় তবে আমি সে যোগ্যতাকে মোটেই কবি হওয়ার যোগ্যাতা হিসেবে ধরিনাশিক্ষা আসলে তো ভেতরের চর্চানিজেকে নিজেই অনেক কিছু শেখাতে হয়, চর্চা করতে হয়এই চর্চা ও শেখার কোনো শেষ নেইআমৃত্যু শিক্ষাসেটা নিশ্চয় গতানুগতিক শিক্ষাগত যোগতার মাপকাঠিতে বিচার্য হবে নামানসিক উন্নয়ন এবং উদারতা তো বই অথবা খাতায় লেখা থাকে নাওটা বোঝা যায়কবি উদার হতে জানতে হয়এবং সহজ সাবলীল

 

আরিফুল : কবিতা বারবার বাঁক বদল করে বদলায়। এই বদলটা আসলে কিসের ওপর ভিত্তি করে হয়? সামনে কি কোনো আদর্শ থাকে? আপনার বেলায় বদলটা কীভাবে ঘটেছিল?

 

ইসমত: হ্যাঁ প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে কবিতার বাঁক বদলায়পরিস্থিতি সময়এটাই তো কালকাল থেকে যুগসময় একটা বড় বিষয়; এ থেকেই সৃষ্টি হয় জীবনবোধজীবনবোধ সবরকম সৃষ্টিতেই খুব গুরুত্বপূর্ণএই ই তো---- 

 

আরিফুল : সমকালীন কবি কবিতা ও সাহিত্য বিষয়ে আলাদাভাবে কিছু বলুন

 

ইসমত: কবি কবিতা সবই পাচ্ছিসাহিত্য মনে হয় কম পাচ্ছিকোথায় একটা অপূর্ণতা চলছেকিছু অপূর্ণতা থাকা ভালো কিন্তু সাহিত্য তো সমাজের একটা ভরসার জায়গাভরসা মানে অভিভাবকআশ্রয় যদি বলি, সেটাও খুঁজছি

 

আরিফুল : প্রচারকাঙাল কবি-সাহিত্যিক সবসময়ই থাকে। তাদের ডামাডোলের আড়ালে হারিয়ে যান প্রকৃত লেখক। লেখক-পাঠকের দূরত্বের সূত্রপাত কি এ কারণেই ?

 

ইসমত: হয়তো বা

 

আরিফুল : বর্তমানে কবিতার স্বর্ণযুগ চলছে বলে অনেকের দাবি এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি?

 

ইসমত: স্বর্ণযুগ চলছে; এটা আমার তো মনে হয় নাযদিও প্রচুর কবিতা লেখা হচ্ছেতবে কোনো কিছুর মানদ- তো সংখ্যা দিয়ে বিচার করা চলে নাগুনগত মান বিচারে কি স্বর্ণযুগ বলা যাবে ? আমার প্রশ্ন আছে এ ব্যাপারে তবে হতাশ নইএটারও ভালো দিক আছে

 

আরিফুল: বর্তমানে বাংলা কবিতা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

 

ইসমত: বাংলা কবিতা ছিলো, আছে, থাকবেতবে কিছু অঢেল কবির লেখালেখি কবিতাকে অল্প হলেও হালকা হরছেতা করুকএকসময় সঠিকটাই ঠিকমতো থাকবেআমি কোনোকিছুতেই নেতিবাচক মনে করি নাচলমান থাকাটা বড় জরুরি; চলছে তো

 

আরিফুল: দর্শন, কবিতা ও রাজনীতির সম্পর্কটাকে আপনি কিভাবে দেখেন ? এই দিক থেকে কবিতার তাৎপর্য কী?

 

ইসমত: কবিতা সবার উপরেকবিতায় কিছু দর্শন তো আছে, থাকে

 

আরিফুল: কবিদের একটা দশকওয়ারি পরিচয় থাকে যে অমুক আশির দশকের কবি তো তমুক নব্বইয়ের দশকেরসেই বিবেচনায় আপনাকে কোন দশকের কবি বলা যায়?

 

ইসমত : আমি এসএসসি করেছি ১৯৮৫ তেহাইস্কুল থেকেই লেখার অভ্যেস এবং স্কুলে থাকতেই একবার লেখার উপরে পুরষ্কার পেয়েছিলাম ইসলামিক ফাউ-েশন থেকে- ২১ খানা বইসে খুব আনন্দের ! এসএসসি তো যখন ১৯৮৫ সাল; তখন মেহেরপুরর সাপ্তাহিক পরিচয়এ নিয়মিত আমার লেখা ছাপাতোসেই হিসেবে যে দশক হয় আর কী

এই হিসেবটায় নিজেকে পরিচয় করাতে বড় সংকোচ লাগেআর ওভাবে দশকওয়ারি পরিচয় পাবার জন্যে আমার কবি পরিচয়কে ব্যবহার করতে নারাজ আমিলেখার সাথে লেখা থাকাটা অনেকটা নিষ্ঠার ব্যাপারএখনও লেগে আছি এটাই অনেক

 

আরিফুল : বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা কবিতায় কিছু মৌলিক পার্থক্য খুঁজে পান?

ইসমত: কিছু পার্থক্য আছেপাই ই তো

 

 

আরিফুল:  কবিতার ভালোমন্দ নির্ধারণটা কীভাবে হয় বলে মনে করেন?        

 

ইসমত: কবিতার যেমন কোনো সংজ্ঞা হয় নাতেমনি ভালোমন্দ নির্ধারণের ব্যাপারটাও সেভাবে করা সম্ভব নাতবে কবিতা সুখপাঠ্য তো হতেই হয়আমার মনে হয় কী, শুধু ভারি এবং কঠিন শব্দ দিয়ে কবিতার গুণগত মান নির্ধারণ হয় নাঅর্থবোধক, শ্রুতিমধুর ও মুগ্ধতা থাকাও জরুরি

 

আরিফুল: একজন কবির লেখালেখির পূর্ব প্রস্তুতি কি হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন ?

 

ইসমত: নানারকম অনুশীলনের মাধ্যমেই তো কবিতায় আসতে হয়যা মনে আসে তাই ই তো আর কবিতা হয় না !

 

আরিফুল: সবশেষ প্রশ্ন, একবাক্যে আপনার প্রিয় কবি কারা?

 

ইসমত: এরকমভাবে বলা শক্তকোনো কবির একটা কবিতাও খুবই ভালো লাগেআবার অনেক বড় কবির কিছু কবিতা খুব ভালো লাগে, সব কবিতা তেমন লাগে নাতাহলে কি প্রিয় কবি বলা টা ঠিক ? তবে আবুল হাসান, মহাদেব সাহা, বর্তমানে হেলাল হাফিজ নির্মলেন্দু গুণআর বুদ্ধদেব বসু, সুনীল, শঙ্খ ঘোষ, ওখানকার আরো অনেকের লেখাই ভালো লাগেবাংলা ভাষার অনেক কবির কবিতাই বেশ ভালো লাগে পড়তে

 

 



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান