তমিজ উদ্‌দীন লোদী'র গুচ্ছকবিতা
তমিজ উদ্‌দীন লোদী'র গুচ্ছকবিতা

কবি : তমিজ উদ্‌দীন লোদী


গালগল্পপ্রিয় মানুষেরা


গালগল্পপ্রিয় মানুষেরা একত্র হয়েছে

তারা উদগীরণপ্রবণ  জ্বালামুখের ধোঁয়ার গল্প করছে

লাভার প্রবাহ ও ঢালুপথ ভাসিয়ে নেবার আসন্ন খবরে

তারা দেখছে কাদামগ্ন চাঁদ ,ডুবোপাহাড়ের পাদদেশ ।


তারা প্রকাশ্যে নিয়ে আসছে ধর্মভীতি , নারীবিদ্বেষ কিংবা রেসিজম ,

খুব নির্লিপ্তভাবে বর্ণনা করছে প্রান্তজনের কেচ্ছা

ভাঙা একোয়াল্যাঙ

গড়িয়ে যাচ্ছে ফাটা পাইপ থেকে নোংরা পানীয় জল


সরু গলি থেকে বিস্তারিত ধো্যাঁ ও অগ্নির উদগীরণ

রাসায়নিকের ভয়াবহ অনল প্রবাহ , সার সার লাশ

মানুষের ফোঁপানো , চাপা কান্না আর্তনাদ

কয়লা হয়ে যাওয়া বাঁকানো কঙ্কাল , যেনবা ফসিল ।


তবু মানুষ গোল হয়ে বসে আধভাঙা চাঁদের গল্প করে

ঈশ্বর ও অলৌকিকের গল্প ফাঁদে

তারা ধৈর্যের পাথর খোঁজে - নির্লিপ্ত , অভিব্যক্তিহীন ।

লোকাচারের আঁধারের ভেতর মুখ গুঁজে পরিত্রাণ খোঁজে ।



দহনকাল


দহনকালে কে আর খোঁজে চাষমগ্ন দিন
লাঙ্গলের বদলে ট্রাক্টর
কিংবা গরুর বদলে মাড়াইকলের গল্প
কে আর খুঁচিয়ে তুলতে চায় আগুনে পোড়া ক্ষতের দাগ ?

যদিও আমাদের লোকজ দিন ঘন অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে দ্রুত
তবুও আমরা ভরা ভাঁড়ার আর ভরা জ্যোৎস্নার কথা বলে যাচ্ছি অবিরত
বলছি বিলাসী স্বপ্নের প্যাশন আর বদলে যাবার ইতিবৃত্ত ।

বলছি আগুন পেরিয়ে আসা মুক্তডানা পাখিদের গল্প
বিত্ততস্কর ও আত্মতায় লীন যারা তাদের আমরা জ্ঞানত উপেক্ষাই করছি
উপেক্ষা করছি বিয়োগান্ত মানুষের ব্যর্থ অভীপ্সা আর স্বপ্নসমূহকে ।

দহনকালে আমরা খুঁজে ফিরছি ভস্মিভূত পুস্তকের ছাই ।

একটি স্যুররিয়ালিষ্ট কবিতার মতো


 

দেখো কী অনায়াসে প্রতিবিম্ব কথা বলছে আয়নার ভেতর

পাতাগুলো উল্টে যাচ্ছে

উল্টে যাচ্ছে পলেস্তরা খসা ইট,এপিটাফ থেকে খসে পড়ছে

বাঁধানো অক্ষর । ইচ্ছেমাফিক সাজানো হচ্ছে ইট, মাল্টিষ্টোরেড ।

 

ছড়িয়ে পড়ছে কবরের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ।

জানি না আড়ালে একটি সজল চোখ অশ্রু নামালো কিনা?

বৃষ্টি থেকে উবে গেলো কিনা বাষ্পের কণা

কিংবা একটি দাঁড়কাক উড়ে গেলো কিনা এই ঘোর সন্ধ্যায় ?

 

 

কোনো বিশ্বাস নয় তবু এক বিষণ্ণ মাদুলি দ্বিধা ও সংস্কারের

মাঝখানে দোলে । শাদাপ্যাঁচা উড়ে যায় ।

গমের শিষের মতো মাথা তোলে আহত ঋত্বিক আর

ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে আমার রক্তের সাথে তোমার রক্তের লাল-  

গোত্রের আড়াল থেকে নেমে আসে একিভূত শিরার মতন।

 

পৃথিবী মৃত্যুফাঁদ ।

নিধনের খেলা চলে তীব্র ঘৃণা হয়ে

কে ধরবে বলো এখন স্যুররিয়ালিষ্টদের চাঁদ ?

যতোই স্মৃতির শরীর জুড়ে আঁচড় কাটুক নিসর্গ ,বৈশাখ

কালো কাঁকড়ারা তবু হেঁটে যাবে শিরদাঁড়া বেয়ে ।

 

যতোই মুখোশ খুলুক

উন্নাসিক হেঁটে যাবে,যাবেই তোয়াক্কাহীন নাক উঁচু করে ।


দৌড়োচ্ছি অন্ধের মতো


কে যেন বলছে ,'পালিয়ে যা, পালিয়ে যারে তুই'

 

আমি পালাতে চাই না, তবু পালাতে পালাতে সমুদ্র কিনারে ,

দৌড়োচ্ছি অন্ধের মতো , পেছনে হিহিংস্র হাউণ্ড

পালাতে পালাতে আমি কোথায় যাব, কতদূর যাবো ?

 

জানি না এখন আর , স্বপ্নপথ বেয়ে কোনোকিছু নেমেছিল কিনা

দুর্জ্ঞেয় অন্ধকারে বাতি হাতে কোথাও কেউ দাঁড়িয়েছিল কিনা

নাকি ভরিয়ে তুলেছে কেউ অনুমানহীন অবহেলার পলি ।

ক্রান্তি ও ক্লান্তির শেষে টুকরো কোনো স্বপ্ন কিংবা

টপ টপ ঘামের শেষে ভিজেছিল জামার দু'হাত ।

কিছুই স্মৃতির ভেতর প্রচ্ছন্ন নয় আর ।

 

না, কোনো প্রশ্নই উচ্চারিত নয় , নয় কোনো বিরোধাবাস

শুধু মনে হয় কোথায় যেন এক সময়ের সাঁকো ধরে রেখেছে অদৃশ্য দু'পাড়

সেলুলয়েডের ফিতের মতো সবুজদৃশ্যের ওম

স্তব্ধতার ওপারে প্রিয়জাগরণ।

 

তবুও আমাকে পালাতে হবে, পালাতেই হবে?

পালাও, পালাও শব্দের ভেতর দৌড়তে হবে নিশিদিন !

 

 

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান