মজিদ মাহমুদ এর গুচ্ছকবিতা
মজিদ মাহমুদ এর গুচ্ছকবিতা

কবি - মজিদ মাহমুদ

নিষ্কামী

 

তুমি ঠিকই জানো, তোমার তো জানারই কথা

আজ অনেক লিঙ্গের মাঝে বিপন্ন আমি

অথচ এই লৈঙ্গিক পরিচয় ছিল আমাদের খেলা

আমরা যখন পানির পিচ্ছিল ঘাটলায় জেগে উঠছিলাম

যখন আমাদের ছিল প্রোটোজোয়া কাল

তখনো হয়নি শুরু আমাদের হ্যাপ্লয়েড বিভাজন

শরীরের মেয়োসিসগুলো তখনো ছিল মাইটোসিসের সাথে

আপন কোষের আড়ালে আমরা তখন স্বমেহনরত

সেই তো ছিল আমাদের সম্পূর্ণ আনন্দের কাল

তুমি বা আমি; আমি বা তুমি এর কোনো লিঙ্গান্তর ছিল না

তখন আমরা ছিলাম, সম-বিষম-উভকামী

আমাদের শয়ন, উপবেশন কিংবা পদব্রজ

হিমালয়শৃঙ্গের গলিত তুষার-তরঙ্গের সাথে

পতিত হয়ে তোমাকে তুলে নিচ্ছিলাম কোলে

কখনো তুমি নিচে, কখনো আমি

শরীরের ভারে নুব্জ, আবার জরায়ুতে গেছি মিশে

হয়তো এসব তুমুল উত্তুঙ্গু মিলনের কালে

আমার সুপ্ত অহংকার তোমকে হারিয়ে ফেলেছিল

যদিও চন্দ্রিমা রাতে আমরা কাছে এসেছিলাম

যদিও আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম অন্ধকার গুহায়

তবু দিনের আলো আমাদের মিলতে দেয়নি

অথচ এখনো যারা তাদের লিঙ্গকে পারে চিনতে

তারা হয়তো সমকামী, তারা হয়তো এখনো আছে

ঈশ্বরের উদ্যানে

তাদের অযৌনজনন, পক্ষপাতহীন মিলন

কেবল মিলনের আনন্দের তরে

কিন্তু যে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম

হয়তো শরীরের চিহ্ন রেখায় ছিল দৃশ্যত অমিল

সেই তুমি যখন আমার সঙ্গে মিলিত হও

তখনই তো আমি হয়ে উঠি অভিন্ন পূর্ণ মানুষ

তখন আমরা পরিণত হই নিষ্কাম কর্মে

তখন দৃশ্যত কামের আড়ালে পারে না দেখতে

আমাদের বিভাজন রেখা

 


পথ নতুন

 

আমাদের এই যাত্রা হয়তো পুরনো

যেহেতু জরাজীর্ণ পরিধানে বস্ত্রসমূহ

যেহেতু অনেকবার রোদে ফেটেছে আকাশ

গৃহস্থলির কাজে যে-সব বালিকা লাগাচ্ছিল হাত

তাদের মায়েরা হয়তো চলে গেছে বাবার সংসারে

যদিও অনেক সূর্যাস্ত, অনেক রাত শীতার্ত কেটেছে

সরিষার ফুল ঝরে আবার কুসুম এসেছে

কুসুম তোমার কি কেবলই শরীর

মন বলে কিছু নেই

যে সব মৌমাছি এসেছিল ঘাটে

তাদের মধূত্থের ভা- কোথায় রেখেছ

এত-এত মানুষ, পাখিদের বিচরণ

সকল পথ যদিও অদৃশ্য পদভারে ক্লান্ত

তবু স্পর্শের আকাক্সক্ষা উদ্দীপ্ত শরীরে

কোথায় নিয়ে যাবে তুমি

কতটুকু তুলে নেবে হাতের মুঠোয়

তুমিও কি একাকীত্বের ভয়ে জড়িয়ে ধরেছ

কাগজের ঠোঙা থেকে একটি শারস

তোমার পপকর্ন নিয়েছিল তুলে

তবু কি গভীর দেখেছ তার ঠোঁটের বিস্তার

সর্বদা ভয় ও রোমাঞ্চ

ময়ূরের নৃত্য থেকে রেখেছে বিরত

আজ এই ভেবে অনেক কষ্ট সয়েছি

যদিও বা নেমেছিলাম জলে প্রাণকৌড়ির জগতে

তবু কেন বৃষ্টির ভয়ে আশ্রয় খুঁজেছি

যদিও হেঁটেছি পাশাপাশি

যদিও  গন্তব্য বানারস

তবু পথের ভিন্নতা রয়েছে নিশ্চয়

নতুবা কেন এই বারংবার জড়িয়ে ধরা

কেন রয়েছে চুম্বনের ভয়

হয়তো আমরা হারিয়ে যাব সহসাই

হয়তো আনন্দ রয়েছে বিচ্ছেদের গানে


বিদায়-সম্ভাষণ

 

ঠিক আছে, কথা এখানেই শেষ

আমরা যে যার পথে চলে যেতে পারি

যদিও যাওয়ার জন্য সন্ধির নেই প্রয়োজন

হাত-নেড়ে গুডবাই বলে অথবা

অজান্তে চলে গেলে হয়

তবু অনেক অমীমাংসিত কথা

অনেক বিতর্কের হয়নি কো শেষ

আমার চাওয়া কি ছিল খুব বেশি

হয়তো তুমিও সামান্য চেয়েছিলে

হয়তো ঘুম থেকে উঠতে হয়েছিল দেরি

হয়তো বাচনে ছিল মুদ্রাদোষ

এই সব অমার্জিত অপরাধ জানি

অনেক রাত তুমি ঘুমাতে পার নাই

অনেক দিন তুমি কাটিয়েছ একাকি

কতদিন হয়নি কো দেখা

দুটি শারসের মুখোমুখি বসা

আমিও পেয়েছিলাম টের

তোমার একাকীত্বের বেদনা

জীবন যদিও আমাদের বঞ্চিত করে

মেলে না যাচ্ঞার সাথে

বেদনা শেষ হলে, জেগে ওঠে নতুন বেদনা

মনে হয় কোথাও এসেছি ফেলে

দূর গাঁয়ে মাতৃস্নেহের ছায়া

কেউ কখনো আসবে কি ফিরে

মাথায় রাখবে কি হাত

জ্বর কিংবা শর্দি-গরমে

স্তনের উষ্ণতায় জীবন জাগিবে

যদিও আমাদের চলা ছিল

অপূরণীয় আশার ছলনে

আমরা যদিও বসেছিলাম মুখোমুখি

তবু নিজের অবয়ব ছাড়া

কিছু কি দেখেছি কখনো

যদিও মানুষ আদতে একা

তবু তার সঙ্গীর অন্বেষণ

হয়তো বাঁচবার আনন্দের সাধ

জানি না আমাদের বিচ্ছেদের কালে

কেন তবে এই সব কথা

আমরা কি আবার চাই ফিরে যেতে

তবু আমাদের এই বিদায়ের ক্ষণ

না হোক থাকিবার ইচ্ছার প্রকাশ

 

দশম দশা

 

প্রেমের সূচনাতে হারিয়ে ফেলেছি সকল মুদ্রা

তার অনির্দেশ্য ইঙ্গিতে করেছি গৃহত্যাগ

আমাকে ছেড়ে গেছে গোত্রের স্বজনেরা

জানি না ভগ্নস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের আছে কি উপায়

আর কেনই বা তার দরকার

পাড়ার শিশুরাও আমাকে করে না গ্রাহ্য

দুএকটি ঢিলও ছুড়েছে আমার দিকে

পাগলের সাথে সবারই সম্পর্ক মজার

মানুষের পৃথিবীতে সে থাকে অন্য দুনিয়ায়

অবশ্য যার জন্য আমার এই দশা

তাকেও দিই না দোষ

ভালোবাসা তো একান্ত নিজেরই জন্য

যদি আমার আহ্বানে সে দিত সাড়া

যদি পূর্ণ হতো মিলনের সাধ

তাহলে তো এখানেই শেষ প্রেমানন্দের

মল্লিনাথ বলেছেন প্রেমের দশটি সোপান

দৃশ্যের সুখ প্রেমের প্রথম ধাপ

দ্বিতীয়তে রয়েছে মিলবার সাধ

ক্ষুধামন্দা, স্বাস্থ্যহানি এসবও প্রেমের পর্যায়

আমার অবস্থান এখন অষ্টম ধাপে

সংসারিরা যাকে প্রেমোন্মাদ বা মজনু বলে ডাকে

আমি নিজেও ভুলে গেছি এ দশার কারণ

শরীর দিয়ে শরীর ছোঁয়ার ক্ষমতা হারিয়েছি

এখন শুধু পৌঁছে যেতে চাই চরম প্রান্তে

বারংবার মুর্চ্ছা যাচ্ছি, বেঘোরে দেখছি

যুদ্ধে কর্তিত সৈনিকের শিরস্ত্রাণ তুলে নিচ্ছে

এক রোরুদ্যমান রমনী

হয়তো আমি চলে এসেছি প্রেমের চূড়ান্ত পর্বে

যদিও মানুষ তাকে মৃত্যু বলে জানে

তবু পেয়ালা ভরার এই তো সময়

আমি এখন উঠে যাচ্ছি দশম ধাপে...

 

 

 

 

 

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান