মতিন বৈরাগী'র গুচ্ছকবিতা
মতিন বৈরাগী'র গুচ্ছকবিতা

কবি : মতিন বৈরাগী

নতুন পাঠ
আনন্দের নৈরাজ্য

 

মাথার উপরে আফ্রিকার ভাঙাচুরা চাঁদ;

করোটিতে ইয়েমেনের লালবৃষ্টি

খাশোগীর টুকরায় পাঁচ মিনিট দাঁড়াও

হেঁটে আসতে পারো আশুর কিংবা বানগাজি

ফারাও ফিরে এলো পিরামিড দেশে-

আলেপ্পোর বাড়িঘর প্রেতের মতো শাদা

কী বাতাস আছড়াচ্ছে পারীর রাস্তায়

সুবর্ণচরআতঙ্ক হয়ে নাচে

কারাকাসের সমাজতন্ত্রভাসিয়ে দিচ্ছে হে :

সীমান্ত খুঁজছে পিপিলিকা

আমলাতন্ত্র চিবাচ্ছে মানবতার রুগ্ন ক্লিষ্ট হাড়

দুচার মিনিট চলো ঘুরে আসি গান্ধার

কুরুক্ষেত্রে ঘুরছে শকুনিরা

 

এ্যানিম্যাস আর এনিমার তুমুল দ্বন্দ্বের মানুষ

রূপান্তরীত হচ্ছে কাফকার অদ্ভুত পোকায়

ইডিয়ট ইডিয়ট

ইভান এলিচের মৃত্যুবার্তা কে কাকে দেবে?

মধ্যযুগ লাফিয়ে উঠছে উত্তরাধুনিক মগজে

তামুক টানছে রোহিঙ্গা-

 

খোলা আকাশের নিচে লাফাচ্ছে গলাকাটা স্বাধীনতা

সুকির গানস অব নাফ

গণতন্ত্রের কুমির লাফিয়ে পড়েছে পদ্মায়

সাগরমুখি জলজোয়ারের তোলপাড়

কোথাও অনুকরণের আর কোনো সূর্য নেই    

এসো ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করি আগামীর ভাগ্যলিপি

আমরাই আত্মনের হাতিমতাই

ভাঙতে পারি স্নানাগারের অপার রহস্য

মুক্ত করে দিতে পারি গোয়মর্তের অভিশাপ

 

হাস্যহ্লাদে ত্রিমূর্তি,

চাঁনতারা খসে গেলে অখন্ড তারাপীঠ

ভাঙাপ্লেটের মতো হাটসন পঞ্জরে তামাশার লিবার্টি

কোমরভাঙা ইয়োরোপ

দিশেহারা ক্ষমতা; কেন্দ্রের ছুটাছুটি পূর্বে ও পশ্চিমে

সপ্নের  চাকতি আর গোলটেবিল হয়ে উঠছে সমগ্রের পরিচিতি

পুরানে তার প্রীতি আছে -যিশুর শেষ ভোজসভা

তাও আর মুখোশের  মাওবাদে পিষে যায় উঁইঘুর

উড়াল থেকে আনবিক ফেরিঅলা

এই নাও হাড় কাঁপানো চাবি-

 

মিছিলের রোলমডেল আর কোথাও নেই

প্রস্তরবৎ স্থবিরতায় ডুবে গেছে বৃত্ত

আকাশটা ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরা টুকরা ভাঙ্গা ভাঙ্গা এবং দাঁতালো

এজিয়ান সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে সভ্যতার শেষ  সূর্যপাঠ


 

চেতনার জানালায়


হৃৎপিন্ডের উপর যে লাফায় সে বুঝি ব্রহ্মাণ্ড

একটা মুখ যেনো অস্পষ্ট ছায়া অস্তিত্ব ঘোষণা করে আগামীর

হামুখো কৃষ্ণগহ্বর, শুষে নিচ্ছে যাবতীয় ভাব ও ভাষার বাহুল্য

প্রচণ্ড পদবিক্ষেপ কুচকাওয়াজ হয়ে যদি যায়

ঝলমল করা এক রোদ পাতায় পাতায় খেলা করে রোদাশা

বেবুনেরা পালিয়েছিল সায়গন বন্দর টপকিয়ে

 

রাত্রির কালো যদিও তখনও ঘন

জোনাকীরা জ্বালাবে আলো আরো কতোবার

টেবিল ঘড়িতে রাত বারটা

বিপরীত থেকে বিপরীত শব্দগুলো পাঁপড়ি মেলে নতুন অর্থের

কেন্দ্র বদলে যায়

হেঁটে আসে বৃক্ষগুলো নগরের দিকে সমতাল পায়

মেঘফুল উড়ে বসে প্রিয়তমার নাকে

ধর্মনিরপেক্ষ হও, সাম্যে দাঁড়াও, গণতন্ত্রে বাড়াও হাত

ফেরো রাঙা স্বাধীনতার দিকে-


 

 

লাল শার্টের গল্প


 

একটা শার্ট ছিল আমার লাল টকটকা রঙ তার

লাল দেখলে থামো সবুজ দেখলে যাও হলুদ হলো প্রস্তুতির

কিন্তু একদিন লাল ছিল পথশুরুর উদ্দীপনা যৌবনের প্রতীক

আর হলুদ রুগ্নতার

কিন্তু মাতিস নীল খুব পছন্দ করতেন

আর আমার লালশার্টটা আমি যতœ করে রেখেছিলাম

কিন্তু সে হাওয়া হয়ে গেলো

শেগাল আঁকতেন উড়ন্ত মানুষের ছবি

প্রেমিকাকে নিয়ে উড়বার তার বড় সখ ছিল

আমি কিন্তু লালকে নিয়েই উড়তে চেয়েছিলাম-

 

একদিন

আমি আমার শার্টটার কথা মনে করতেই

শহরের দালানগুলো ফিস ফিস করে বলতে থাকলো

দও কি পাগল ওর কি মাথায়গোল!

লালশার্ট কি কখনও ওয়্যারড্রোপে থাকে ! 

পাখিগুলো আমার বোকামী দেখে হাসল ঈষৎ

আমি বাইরে তাকিয়ে দেখি

কোথাও আর লাল নেই কেবল ভন্ডামী

আমার খুব খারাপ লাগছে আমার শার্টটার জন্য

মিডিয়ার যুগ এটা উত্তরাধুনিকতার হাওয়ায় সবাই

জিনপিং আর পুতিনকে খুঁজছে

লাল আর খোঁজেনা-

কিন্তু আমার মনে হয় লালশার্টটা

কোনো প্রেমিকের হাতধরে ভ্রমেেণ গেছে

সে তরুণ

হয়ত তাদের ঘর হবে কোথাও কোনো এক দিন


 

বাবা উঠে চলে গেলো

 

বিকেলের পড়ে যাওয়া রোদে জলপাই গাছটার নীচে আলো-আঁধারের খেলা

তার তলে বসে আছে আমার বাবা, বাবাইতো-

পিছন থেকে দেখছি তবু কী চিনবনা আমি আমার বাবা কে !

আলো আঁধারের আলোছায়া পাতার ছায়ায় দোলে আমার বাবার শরীর

আমার বাবা; সেই কবে কতো আগে মরে গেছে

অথচ এক বিস্ময় নিয়ে বসে আছে জলপাইয়ের মৃদু আলোয়

তার সামনে নদী, নদীর জলে মরারোদের ছায়া মাছের ঠোঁটে খেলা করে

ওপাড়ে বিস্তীর্ণ আকাশ

 

আমি বাবার কাছে ছুটছি,

ডাকছি, কেবল পথ উঁচুনিচু পাহাড় পাহাড়--অস্ফূট আওয়াজ

তারপর আমার মনে হলো আমি তো উড়তে জানি

বাবা হাত ধরে একদিন আমাকে উড়াল শিখিয়েছিল

ভুল হলে বলতো ওভাবে নয় এভাবে

বাবা উড়তে পারেনি

বাবার ইচ্ছে ছিল আমি যেন উড়তে পারি

যা সে পারেনি আমি যেন পারি...

 

আমি উড়তে পারলামনা, আমার পাখা ঝরে গেছে ভুল আর বেভুলে

আলোটা আরেকটু নেমে এলে জলপাইগাছটা আরো নীরব হয়ে গেলো

বাবা উঠে গেলো বাবার নিয়মে

আর নরক থেকে মেফিস্টোফেলিস উঠে এসে

তুলে নিয়ে যাচ্ছে ফাউস্টের আত্মা-

 


 

মৃত্যু তার নাম

যখন নিস্তব্ধতা শরীরে তাহার নীরব হয়েছিল

থেমে ছিল ঘড়ি জানালার কাচ

শার্শীতে ছিলনা হাওয়ার আওয়াজ

তখন একটা নদীর কথা যদি তার মনে পড়েছিল

সেও বলেনি নীরবতার প্রসঙ্গ হয়ে

কেবল

আঙুলে আঙুলে বাতাস উড়েছিল চোখে চোখে

দুরবীন চোখ

দেখেছিল চাঁদ বুড়ি বুঝি; আকাশ ছায়ায়

আরেক আকাশ-

নীরবতা এখন তার পাশে অবশিষ্ট হয়ে আছে

বৃষ্টি ফোঁটা ঝরে টুপটাপ কোনোখানে হয়তো কোথাও

নীরবে ডুবে থাকে সময়ের ঠোঁট

মৎস্যকন্যার গান আর সাগর সিম্ফনী

কেবল খাজাঞ্চিখানার ঝনঝন নদের চাঁদেরা নাচে

এজগত মায়াময় ; জন্মের পর মানুষের থাকে কিছু বাকী

মৃত্যু তার নাম



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান