শামীম আহমদ এর কবিতাগুচ্ছ
শামীম আহমদ এর কবিতাগুচ্ছ

কবি : শামীম আহমদ


বুকের পাঁজরে হোক ইন্দ্র-ধনুক

এবং এখনই সময়
স্ফুলিঙ্গনিশ্বাসে ধ্বসে যাক
পৃথিবীর যতো অনাকাঙ্ক্ষিত অদৃশ্য দেয়াল;

এসো ক্ষুধার্তের বুকের পাঁজরের হাড়ে গড়ি ইন্দ্র-ধনুক ,
সামন্তবাদের বুকে ;

অভ্রবেদী চুড়ায় বসে যারা টিকি নাড়ে আনন্দে
কুলিন ঋষির মতো, তপস্যায় রতো
সারা দিনমান!
দিনের তপোবন ভেসে যায় রাতের রতিমন্থনে
ঝিঁঝি পোকার ক্রন্দন ধ্বনিতে ভাঙে চাঁদের সাত তলা গুম্বজ
মুহুর্মুহু কেঁপে ওঠে লতিকার গতর ।
ধড়ের উপরে মাথার ভারসাম্য রক্ষা করা বড্ড কষ্টের
লোমশ বদলের নিচে যখন নমোস্তুতি গায়
বিশ্ব মোড়ল ।

এ্যালিয়েনের সাথে কথোপকথন 

ভিন গ্রহ থেকে উড়ে আসে ওরা ঊড়ন্ত সসারে ,
আমাদের পূর্বপুরুষের গল্প বলে ,
নিমিষে উধাও হয় বাতাসের ট্যানেলে !
আমরা না-কী মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা ছিলাম এক সময় !
সেখানেও প্রাণ ছিলো,ধান হতো গান হতো নবান্নে ,
গাঙ ছিলো জোয়ার হতো ভাটায় যেতো মাঝি ভাটিয়ালী গানে
ইরাবতির নদীর বুকে পাল তুলে আনমনে ।

কেউ কেউ বলে সেখানে পিরামিডও ছিলো ।

দেশ ছিলো গোত্র ছিলো বর্ণবৈষম্য ছিলো
এখানের মতো, যুদ্ধ- বিগ্রহ হতো
মরতো নিরীহ মানুষ ,আমি জিজ্ঞেস করলাম কাস্মীরের-
মতো ওরাও কি ছিলো তবে নির্দোষ ?
ওরা বললো পরা-শক্তি ছিলো নিঃসন্দেহে
পরমাণু বোমা ছিলো নিশ্চয় ,
নক্ষত্রে নক্ষত্রে যুদ্ধ বেঁধেছিলো এক সময় ;
তারপর কী হলো ?
বলে তারপর আর কী ,সব হলো শেষ
পরমাণু বোমার বিকট শব্দে যত প্রাণ ছিলো
সব হলো নিঃশেষ; যারা বেঁচে ছিলো কোন মতে
প্রাণ নিয়ে নেমে ছিলো এই পৃথিবীতে ;
ওরাই ছিলো পিতা-পিতামহ তোদের,
তোদেরই পূর্বসুরী !

আবার জিজ্ঞেস করলাম এখন মঙ্গলের অবস্থা কী ?
ওরা বলে ওখানে কেবলই বিরান নিঃশব্দ চরাচর
কেউ নেই কিছু নেই মঙ্গল গ্রহ এখন ঘুমন্ত কবর ।

বিদগ্ধ উদ্গিরণ

কেউ কেউ পাথর হয় ,কষ্টে

পাথর ভাষা জানেনা সে নির্বাক

কিন্তু শাবলের আঘাতে তার বুকে সুপ্ত

ভিসুবিয়াস জীবন্ত হয়ে ওঠে,

দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন

বিস্তীর্ণ সমতল ভাসিয়ে দেয় অগ্নিদগ্ধ লাভার স্রোতে

এ যে কষ্টের উদ্গিরণ ,

বিদগ্ধ আক্রোশে

শাবলকে প্রত্যাখ্যান করে বিকট শব্দে ;

শব্দের পথদস্যুদেরকে একমাত্র শব্দবোমাই পরাস্ত করে ,

ওরা পরাজিত হয় একদিন

তিমির অন্ধকারে হারিয়ে যায় পথের বাঁকে

যদিও দৈবক্রমে ওরা সমাজের কুলিন বটে

ওরা পাশার দানে চাল দেয় অন্ধকারে

মানুষ আর মানবতা নিয়ে খেলে প্রতিদিন ।

জীবনের দোকান

মধ্যাহ্নের পর নিঃশ্বাসের টান পড়ে ;

বাদ আছর থেকে ভীড় লাগে জীবনের দোকানে
ক্রেতারা সব ব্যতিব্যস্ত আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে ,
আমরা নিঃশ্বাস কিনে বাড়ি ফিরতে ফিরতে
সূর্য ডুবে অন্ধকার চরাচর ,তারপর
এই ঘর ঐ ঘর আঁধারের মহা প্লাবনে
ভেঙেচুরে সব একাকার ।

বাদশা ফকির মাটির একই হালারে হয় চূর্ণ
সবার মাথার খুলিতে তখন পোকা মাকড়ের বসতি
অবশিষ্ট শুন্য খুলির ডি এন এ কেবলই বলে যাবে
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তার জীবন বৃত্যান্ত ।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান