সাইমন নজরুল এর গুচ্ছকবিতা
সাইমন নজরুল এর গুচ্ছকবিতা
পথ

 

দিন শেষে হিসেবের খাতা খুলে দেখি

পূর্ণতার ঘরে শুধুই শূন্যতার হাহাকার...

 

সুখ-সমুদ্রের যতটুকু পথ আমরা হেঁটে-

এসেছি, বেলাশেষে ঢেউ এসে ছড়িয়ে দিল

মন জুড়ে বিষাদআমি কেবল চেয়ে চেয়ে

দেখেছি বিষণ্নবিকেলে নীলাকাশে নীলের

করুণ আর্তনাদ - আর মেঘের অভিমানে

ঝরে পড়া বৃষ্টির মতো স্বপ্নগুলো এক এক

করে ঝরে যাচ্ছে যেন নিয়তির বিরান পথে

 

পথ রাখে না মনে কখনও কোন পথিকের ছায়া!

 

তাই বলে স্বার্থপরের ন্যায় অজুহাতে দীর্ঘকরা

অভিমানের ক্যানভাস জুড়ে গোধূলির বিষাদ-

সত্যি মেনে নিতে কষ্ট হয়! এ জীবন জানে...

কী হারালাম কী পেলাম - তবু করছি যুদ্ধ

নিজেই নিজের সাথে এ পথ হতে ও পথে

 

 

ঘোর


 

আবার তোমার কাছে ফিরে যেতে চাই!

মনোরম কোন এক মগ্ন স্মৃতির সন্ধ্যায়

 

ধূপের সৌরভে মৌ মৌ করা চিলেকোঠায়

যেখানে মুখোমুখি হতাম দু'জন ম্রিয়মাণ

মোমের আলোয় - পরম সান্নিধ্যের স্পর্শে

 

পৃথিবীর তাবৎ গল্পগুলো ঘুরে ফিরত আমাদের

দু'ঠোঁটের প্রস্ফুটিত আঙিনায়- বকুল, হাস্নাহেনা

ও মালতীর মতো পবিত্র উষ্ণতায় ভরে যেতো

হৃদয়ের পাললিক জমিন - কেবল তুমি আর

আমি তুমুল নিশ্বাসের ঘোরে উড়াতাম স্বপ্নঘুড়ি

 

একদিন আমাদের সুখের মত্ত ঢেউগুলো

নদী থেকে সাগরে কিংবা মহাসাগরে মিশে

গেলো বিহ্বল উচ্ছ্বাসে- যে প্রিয় সময় গেছে

জীবন থেকে হারিয়ে, তাকে আজও খুঁজি একা-

একা মগ্নতার ঘোরে - তবু বিরহ ছাড়ে না আমারে

 

আবার তোমার কাছে ফিরে যেতে চাই!

মনোরম কোন এক মগ্ন স্মৃতির সন্ধ্যায়

 

যদি ভুল করে একবার ডাকতে প্রিয়তম বলে

 

আলাপ


 

চুমুতে রেখো না বিষের ছোবল

শঙ্খিনী - এসো মুখোমুখি হই

মুখস্ত সংলাপের মতো ঠোঁট নাড়ি

 

বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই,

জিভের জড়তা কেটে গেলে

রচিত হবে সময়ের মিলনকাব্য

 

শঙ্খিনী - এবার শান্ত হও!

থামাও তোমার রসের আলাপ

 

 

অবগাহন


 

অন্ধকার নিমজ্জিত হলে ঋত্বিক পৃথিবীর অবশিষ্ট-

আলোটুকু খেলা করে শিশুসুলভ জ্যোৎস্নার চরাচরে

 

আগমনী মিথ্যের অবগাহনে কেউ কেউ

বুনে যাচ্ছে স্বপ্ন তস্করের ন্যায় রাজকীয় হালে;

 

দেখা হতে পারে আবার কোন একদিন, এই

মরুময় পৃথিবীর পাঠশালায় - থেকো তৈরী

 

আসুক যত আলোড়িত বৈরী পরিবেশ,

চৈতন্যের ভালেবাসায় বেঁধে নেব প্রত্যাশার ঘর,

 

যদি হয়ে যাও রাজি, না হয় চোখ বুজে

খুঁজে নেব - সাড়ে তিনহাত পবিত্র মাটি

 

এই এক জীবনে কিছুই চাইনি, তাই নেই আর

হারানোর কোন ভয় - এসো মুখোমুখি দাঁড়াই!

 

আবারও উজানে যাই ভাটিয়ালী গানের মূর্ছনায়,

পরাণের বধূয়া কাঁদে পথ চেয়ে- আজও করুণ সুরে

 

 

পাপী


 

এক জোড়া চোখ বড় মায়াবী বিস্ময় নিয়ে

ফেটে পড়ছিল - কেউ দেখেব না বা কেউ

জানবে না, চাঁদের মতো লাস্যময়ী সেও-

কোটি ক্রোশ দূরত্ব বজায় রেখে লুকিয়ে যাচ্ছে

কলঙ্কের দাগতবে কে তুমি কলঙ্কঢাকা

লাবণ্যময়ী রমণী! ভুলে যাচ্ছি নগ্নতায় কতো কী...

 

গতরাতে তাসের আসরে, মদের রঙিন গ্লাসে

জমানো ছিলো তাবৎ জ্যোৎস্নামাখা বরফকুচি;

ভুল বশত: অস্থির নক্ষত্রের আলোয় হয়ে গেছি

অচেনা রমণীর বুকের পাটাতনে ধরাশায়ী

 

ক্ষমা করো পৃথিবী! সোনারূপা ভিজানো

গোলাপ-দুগ্ধজলে, কাঁচাহলুদ গায়ে মেখে পবিত্রবুলি আওড়িয়ে সেরে নেব পাকস্নান

 

আতরমাখা সুগন্ধি-রুমাল শোঁকে ফুরফুরে মন

নিয়ে, সন্তর্পণে দাঁড়িয়ে যাব জায়নামাজে ঈমামের

পেছনেএকামতের সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে

দেব ডুব- বেহস্তী মধু আর দুধের বিস্তীর্ণ নহরে

 

আহা! সেখানেও দুনিয়ার ধূর্ত পাপীদের জন্য

মিলনের প্রতীক্ষায় বসে আছে কাঙ্ক্ষিত হুরেরা


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান