সালাহ্উদ্দিন সালমান এর কবিতাগুচ্ছ
সালাহ্উদ্দিন সালমান এর কবিতাগুচ্ছ

 কবি : সালাহউদ্দিন সালমান


 

মানচিত্রের কলিজা ধরে ঝুলে থাকি

সরে যেতে চাইনি বরং জোরেশোরে নিজ হাতে সরিয়ে দিয়েছ

আমি আমার অপরাজিত জবানবন্দিতে বারংবার বলেছি

তুমি আমাকে আপ্রাণ চেষ্টা করেও পুরোপুরি  সরাতে পারোনি

যে বুকে টেনে নিয়েছিলো সেও আমাকে

আপাদমস্তক আপন করে পায়নি

 

নিজের সঙ্গে নিজের বাকযুদ্ধূবকেয়া ভালোবাসাূশ্রদ্ধার উপঢৌকন

সব সুদে আসলে আমাকে অনুবাদ করে যায় রাষ্ট্র ষড়যন্ত্রের মতো

বিভাজন আর বিভক্তির মতাদর্শে আমি বরাবরই জলের মতো অমৃত

শত জুট ঝামেলায় এক তোমাতেই সমর্পিত

 

বিশ্বাস হন্তারকের পৃষ্ঠপোষকতায়

আমার শক্তিমানকে কোণঠাসা করে রাখে কেউ

বিশেষ কোন গোষ্ঠীতে আমাকে টেনেহিঁচড়ে  নিয়ে যায় কেউ

আমি স্পষ্ট দেখি ওটা বিভাজনের ফাঁদ আমাকে আমার মাটি-জল-বায়ু থেকে আলাদা করার আঁতাঁত

তবুও আমি প্রাণান্তকর চেষ্টায় মানচিত্রের কলিজা ধরে ঝুলে থাকি

আমি জানি এই একটি মাত্র কলিজায় লুকিয়ে আছে

তোমার অস্তিত্বূতোমার অফুরন্ত ভালোবাসার আর্তনাদ

 

 

পবিত্র প্রেমের নিনাদ

শরীরে একটা আঁচল থাকে যা দিয়ে বেঁধে রাখি

তোমার আর আমার সম্পর্কের গিঁট

নিমিষে উচ্ছেদ হওয়া ভাস্কর্য নও তুমি

এ বুকের ক্যানভাসে তোমার অবস্থান যেনো

একেকটা মিশরের নয়নাভিরাম পিরামিড

 

তুমি আলো আঁধারিতে অশরীরী ছায়ার মতো স্থির

মান অভিমানে আমার শূন্যপুরীতে অনির্বাণ সন্ধ্যেপ্রদীপ

তুমি নির্ভার শান্তি বিশ্বাস আমার অন্তর্গত সাদা জমি

তুমি ভালোবাসার বিনিময়ে শুধুই ভালোবাসা

বিমুখ হলেই হই মমি

 

আকাশ উচ্ছল রোদ অথবা কান্না কান্না নিঃসঙ্গ মেঘ

বাতাসেও দ্বিখণ্ডিত হয়না যতই আসুক আশনি সংকেত

আড়ালে লোকানো অন্যহাতে চিরপ্রবহমান এ আশীর্বাদ

তৃষ্ণার তীর্থে আলগোছে দাঁড়িয়ে থাকে যে

সেতো পবিত্র প্রেমের নিনাদ

 

 

কবির দিকে আড়েঠারে চায়

আজকাল কোনভাবেই আর কবিতা হয়ে উঠেনা দুহাতে 

একেবারে পাকাপোক্ত সাবলীল কবিতা

যেনো ইস্পাতদৃঢ় হয়ে আছে হাতের আঙ্গুল মাথার মগজ

কবিতা উতপাদনের কোষগুলো

কেমন নির্জীব নিরাশ নিরাশ্রয় হয়ে আছে

বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই যেনো ভুলেই গেছি কবিতা লেখার মূলমন্ত্র

 

অথচ একদিন পুরোদমে পুরোদস্তুর কবিতা লিখতাম এই চাঁদনী রাতে

বিঘা বিঘা সহায় সম্পত্তির চাইতেও

ওজনদার হতো একেকটি কবিতার পংক্তিমালা

চাঁদ আর ফিনিকফোটা জোছনা ছিলো

একাকী চোখের ভিতরে কবিতা লেখার নিখাদ মুদিরা

 

রাষ্ট্রীয় জঞ্জালের ভিতরে নিবিড় পরিচর্যায় বিক্ষিপ্তভাবে দুর্নীতির জন্মোৎসব দেখে

কবিতারা রাতকানা রোগীর মতো ঘুমায় অঘোর ঘুমে

কবি সেতো খেলার পুতুল মাত্র যথাসময়ে কবিতা জন্ম দিতে না পেরে

বুকের কারখানায় কবিতা রেখে রেখে প্রসব বেদনায় হামাগুড়ি খায়

আর অদূরেই রাষ্ট্র তার নির্লজ্জ বেহায়াপনার নোংরা চোখে

কবির দিকে আড়েঠারে চায়

 

 

চোখের নাগরিক আয়নায় তুমি

মনেপ্রাণে তোমাকে আগলে রেখেছি অত্যন্ত সুষম বিন্যাসে

তুমি আদতে জানোই না

কাউকে ভালোবাসে কেউ কি করে অনাবিল আনন্দে থাকে

বিস্তর বয়সী সুখে কি করে কেউ একজনকে অনন্তকাল মনে রাখে

 

অনেকগুলো ভুবনজোড়া স্মৃতির মাঝে একটি স্মৃতি খুব ভাবায়

অনেকগুলো ঠোঁটের মাঝে একটি ঠোঁটের অনুভূতি ভীষণ কাঁপায়

হৃদয়ের স্বপ্নীল ঝুলবারান্দায় তুমি আমার আপন মুক্তবোধ

চোখের নাগরিক আয়নায় তুমি যেনো পুনর্জাগরণের চোখ

 

তুমি সুদূর প্রসারিত শান্তির হাত তলহীন অতলের অথৈ সমুদ্র

তুমি পূর্ণাঙ্গ জ্যোৎস্না আমার ভরা চাঁদের পবিত্র নিনাদ

তুমি জানোূঅথবা জানোই না তোমার জন্য আমার আকুতি মিনতি

তুমি আমার অকালের কাল শ্রী শিল্পিত অনন্তের আর্তনাদ


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান