সাহিত্যবার্তার মুখোমুখি কবি নীহার লিখন
সাহিত্যবার্তার মুখোমুখি  কবি নীহার লিখন

কবি : নীহার লিখন


মসাময়িক বাংলা কবিতায় নীহার লিখন অন্যতম উজ্জ্বল একটি নামক্রমেই একটি স্বকীয় ভূখন্ডে পরিণত হতে যাওয়া একজন কবি, যিনি তার যাত্রাপথে পারম্পরিক অগ্রজদের যুগ থেকে শুরু করে তার সমসাময়িক কাব্যজগৎ পর্যন্ত বেশ প্রভাব নিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন তার কবিতার বিস্তার, ইতোমধ্যেই তার বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ পাঠক- সমালোচক মহলে বেশ সমাদৃত

 

ব্রহ্মপুত্রের কবি খ্যাত এই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থটি ছিলো ব্রহ্মপুত্র নদকে নিয়ে একটি সিরিজ, অবিস্মরণীয় একটি সাহিত্যকর্ম এই ব্রহ্মপুত্র এবং যা তাকে রীতিমতো খ্যাতি এবং পরিচিতির দ্বারপ্রান্তে এনে দেন বাংলা সাহিত্যে, এর বাইরে তার ' আমি আপেল নীরবতা বুঝি' এবং' ব্ল্যাকহোল ও পড়শিবাড়ি ' বইগুলোও প্রকাশিত এবং প্রকাশিতব্য  উপন্যাস ' মধুপুর' এবং প্রবন্ধের বইনিয়মিত কবিতাই লিখেনপাশাপাশি অনিয়মিত সম্পাদনা করেন ছোটোকাগজ 'উৎপথ'

 

আজ থাকছে সাহিত্যবার্তার সাথে তার কথোপকথন

 

 

আরিফুল- কেমন আছেন? কবিতায় কিভাবে আসলেন, আর তা ঠিক কবে বুঝলেন?

 

নীহার লিখন- ভালো আছি,  কবিতায় আসলাম?! ( এক গাল হেঁসে, তারপর সিরিয়াস হলেন)

আসলে কবিতায় আসার বিষয়টা কিন্তু এখনো ফয়সালা হয়নি, আর বয়েসটা যেহেতু এখনো ৪০ হতে বছর কয়েক বাকিই আছে তাহলে বলা যেতে পারে আসবো আসবো করছি হয়তো, এবং একধরনের বিমুগ্ধতাতেই যা রোমান্টিকদের মধ্যে থাকে সেরকম, একটা কিছুর ভেতর দিয়ে যাচ্ছি বোধহয়... (আবারো হাসি) এবং কবিতায় আসা বলার চেয়ে এই যাচ্ছি বলাটাতে স্বস্তি পাই, ক্রমাগত এই যে নানান ঘটনা প্রবাহ, তার সাথে যাওয়া আর কী...!  কবিতা একটা মাধ্যম হিসেবেই আমি সেখানে প্রকাশিত হওয়ার একটা প্রচেষ্টায় রত আছি, হা হা হা, যা মাঝে মাঝেই ক্যামোফ্লাজ, কারণ কবিতা খুব নিরীহ কিন্তু ভোদাই কিছু না, তবে ভোদাইরা( সমাজে এদের বাড়বাড়ন্তিই, এবং এরা সমাজ রাষ্ট্রের ধারক বাহক বা প্রতিনিধিত্বে ধাবমান, বা আসীন তা) তা বুঝেন না বলেই এই ক্যামোফ্লাজে আমি মাঝে মধ্যেই খুব আরাম পাই যদিও জানি এটাও একধরনের এস্কেপিজম বা কাজের কিছু না...

 

আরিফুল- কবিতা নিরীহ! এটা বলা কি ঠিক হলো! কবিতা কি সমাজ বদলের হাতিয়ার হতে পারে না কবি?

 

নীহার লিখন- দেখুন এ হচ্ছে অতি-আবেগ এবং যা কবিতার উপর এক ইনফ্লিকশনই, দেখুন অনেকেই হয়তো বলবেন... মাহমুদ দারবিশ, বা হিকমত বা অন্য এমন আরো কিছু নাম এবং বলবেন তারা সমাজে বিপ্লব এনেছেন তাদের কবিতায়, এটা কিয়দাংশ ঠিক যে এইসব গ্রেইটরা তার সমসাময়িক ক্রাইসিসকে পাশ কাটিয়ে যান নাই, এবং টেক্সট হিসেবে এসব নির্মিতি পেয়েছে তাদের হাতে এবং যা মানুষের সেন্সুয়ালিটিতে আলোড়িত হয়েছে বৈকি, কিন্তু এখানে কিন্তু সেই স্টিমুলেশন যাকে কবিতায় হয়তো খুব ইশারার মতো বা ইঙ্গিতে বা কখনো একদমই বিমূর্তভাবেই পাওয়া যায়,  সেটা সমাজ ধারণ বা ডিকোড করে আগাতে চাইলে সমাজেরও অমন একটা প্রজ্ঞা বা প্রস্তুতি ছাড়া কি আর হয়! আসলে বলতে চাচ্ছি না যে কবিতা সমাজ বদলে একেবারেই ভূমিকাহীন কিছু, তবে খুব কাজের কিছু কী হবে যদি সমাজের এই ধারণ সক্ষমতাটি না থাকে, বা সেটিকে গড়ার মতো আদর্শিক জায়গাটি না থাকে!

 

আরিফুল- আপনার প্রিয় কবি কারা? কবিতায় কী চান?

 

নীহার লিখন- আমার প্রিয় কবি পাওলো কোহেলহো, ছোটগল্পের রবীন্দ্রনাথ, আর মার্কেজ ( হাসতে হাসতে) আর বিনয় মজুমদার, জীবনানন্দ,  কাফকা এবং আরো অনেকেই, এবং নীহার লিখন, আমি খুব নার্সিস্টিক ( এক গাল হেসে) আর কবিতার কাছে এখন পর্যন্ত কিছু চাই টাই না   ঋত্বিক ঘটকের একটা কথা আমার খুব প্রিয়, তাকে একবার কোনো এক জন প্রশ্ন করেছিলেন, সিনেমা নিয়ে আপনার কী ভাবনা? উত্তরে তিনি বলেছিলেন-

" আমার কোনো তেমন ভাবনা বা প্রেম নাই, এখন পর্যন্ত যা আমি বলতে চাই তার জন্যে যুতসই মাধ্যম এই সিনেমাই ভবিষ্যত যদি এর চেয়ে ভালো মাধ্যম পাই তো লাত্থি মেরে চলে যাবো...

 

আরিফুল- আপনার শৈশব তো কেটেছে শেরপুর জেলায়, এরপর বাড়ি ছেড়ে থাকছেন ময়মনসিংহে, তো ঢাকায় থিতু হলেন না কেন! বা চেষ্টা করলেন না যে!

 

নীহার লিখন-  ঢাকায় রাস্তাঘাট খুব প্যাচানো, চিনতে কষ্ট হয় ( হাসতে হাসতে)

 

আরিফুল- শৈশব নিয়ে কিছু বলেন

 

নীহার লিখন- শৈশব এক কথায় বলা যায় না, মানুষ তার শৈশব সারাজীবন লেখতে পারে

 

আরিফুল- আপনাকে অনেকেই ব্যোহেমিয়ান বলে জানেন, এ সম্পর্কে কিছু বলুন

 

নীহার লিখন- কী জানি, তবে আমার তা মনে হয় নাতবে আমি এক জায়গায় বেশীদিন থাকতে পারি না, তবে স্টেশন হিসেবে বেছে নিয়েছি ময়মনসিংহ, আর কে কিভাবে ভাবে সে ভাবনার ব্যাখ্যা তো তার

 

 

আরিফুল- আপনাকে অনেকেই কোন দশকের বুঝে উঠতে পারে না বলে ধারণা করা হয়, এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

 

নীহার লিখন- কী জানি!( আবারো হাসি)

এই ১০ বছর বছর পরে দশক নবায়নে কেবল দশকই তো যাচ্ছে বলুন তো কবিতার ট্রেসেবল কি বদল হয় তাতে, যার জন্যে অমুক দশম তমুক দশককে আলাদা করে মনে রাখা বা চেনা যায়! সেই ১৯৩০ সালে যে শব্দটি বাংলাকবিতায় এলো তার আগে ২০ বা পরে ৪০ নিয়ে খুব একটা কথা কেন বলেন না? একবার ভাবুন তো!  ৩০ এ বাংলা কবিতার যে শাব্দিক বা টেক্সটগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছিলো তা একটি বিরাট ঘটনা বলেই কিন্তু তা বার বার উঠে আসছে এবং আরেকটু খেয়াল করুন সেই ৩০' ওয়ালদের মধ্যে এক জীবনানন্দ ছাড়া বাকিদের নামও কিন্তু এখন আর কবিতায় খুব একটা যে উচ্চারিত তা কিন্তু না! আসল বিষয়টা ওইটাই দলবেধে তো আর কবিতা হয় না , চর দখল হয় হয়তো!

 

আমি নীহার লিখন একাই আমার কেউ নাই, এমনকি সময়ও বোধহয় নিচ্ছে না, নেয় না... কী করবো বলুন! ( আবারো হাসি)

তবে ২০১৭ তে প্রথম বই হিসেবে হয়তো ২য় দশক ধরলে ধরতেও পারেন, যদিও কবিতা লিখি ১৯৯৯ সাল থেকে, এখন দেখুন কী করা যায় আমাকে নিয়ে

 

আরিফুল- ব্রহ্মপুত্র!  এই বইটি নিয়ে আপনার নিজে কী বলবেন

ময়মনসিংহের কোনো কবির কবিতা বই হিসেবে এটি গগনচুম্বী সফলতা পাওয়া একটি বই, যা ২০১৭ এর মেলায় কবিতার বইয়ের মধ্যে সেরাদের অন্যতম, এবং নিসন্দেহে এই বইটি ব্রহ্মপুত্র এবং ময়মনসিংহের কাব্যাঙ্গনকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে

 

নীহার লিখন- কী বলবো, কী আর বলার আছে, তবে ময়মনসিংহে এই বইটি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা বা উল্লেখযোগ্য  কিছু তো দেখলাম না.

 

আরিফুল- এটা কি জেলাসি?

 

নীহার লিখন- তা তো জানি না, তবে একটি হাস্যকর ঘটনা বলি..

ব্রহ্মপুত্রের অজস্র ভক্তকুল যখন বইটি কিনে সামাজিক মাধ্যমে তারা নানান অভিমত দিচ্ছিলেন তখন সেই সময়েরই কোন এক দিন এক সিনিয়র পোয়েট ( দশক অনুযায়ী হিসেব করতেই হবে, নইলে চেনানোর আর সহজ কোনো কিছু তো পাবো না তাই বলছি ৯০ দশকের সেই মহামান্য কবি,  একই শহরে আমরা থাকি  তিনি একদিন ফোন দিয়ে বললেন, নীহার...  তোর বই( ব্রহ্মপুত্র) বুলে... মেলায় মাগনা মাগনা সবার হাতে হাতে দিয়া দিতাছে! হা হা হা

তো এইরকম অনেক বা অনেকেই তো আছেই...

 

জেলাসি না কী,  তা নিয়ে ভাবার সময় বস্তুত আমার কই!

 

আরিফুল- হাস্যকর !

 

নীহার লিখন- কী জানি...  হা হা হা

 

 

আরিফুল- আপনার উপন্যাসটি কবে নাগাদ আসবে?

 

নীহার লিখন- এখনো বলতে পারছি না, প্রতিদিন অফিস( অনিয়মিত) করার মতো লিখছি, দেখি কি হয়।

 

আরিফুল- সম্পাদনার কি খবর?

 

নীহার লিখন- আমি খুব অলস আর বিক্ষিপ্ত মানুষ, তবে দেখি কী হয়, এখন নিয়মিত ওটা করার ইচ্ছা আছে ।

 

আরিফুল- আপনিতো অনুবাদও করেন, তা হচ্ছে কেমন?

 

নীহার লিখন- অনুবাদ মূলত করি যাদের পড়তে পড়তে মনে হয় করা উচিত,যেমন এখন ইয়াং লি, চৈনিক এই কবির কিছু কবিতা অনুবাদ করছি, এর আগে মিরোস্লাভ হলুভ কে করলাম, অনুবাদ করি, তবে সে বিষয়ে কোন সিরিয়াস চিন্তা নাই ।

 

 

আরিফুল- কবিতা নিয়ে নতুন কি কোনো ভাবনা আছে

 

নীহার লিখন- কবিতা প্রতিদিনই নতুন, বা আজীবনই পুরান

আর চিন্তাভাবনা তো কবিতার সাথেই থাকে একজন কবির ।

 

 

আরিফুল- তা ঠিক, ভালো থাকবেন, ভালো লাগলো আপনার সাথে কথা বলে ।

 

নীহার লিখন- আপনিও ভালো থাকবেন ।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান