সুবর্ণ আদিত্য'র ৫টি কবিতা
সুবর্ণ আদিত্য'র ৫টি কবিতা

কবি: সুবর্ণ আদিত্য

সুবর্ণ আদিত্য ঢাকা, বাংলাদেশ প্রকাশিত গ্রন্থ ২টি: দুধ পুকুরের সিঁড়ি-২০১৮ ফারদুন সিরিজ-২০১৯ সম্পাদনা: পান্ডুলিপি- সাহিত্য বিষয়ক ত্রৈমাসিক পেশা: সাংবাদিকতা

 

ফুলেদের আয়ু থাকে না


সমস্ত দুপুর খুলে তোমার কোলের বারান্দায় শুয়ে থাকি মৃত্যুর গরিমায় টালমাটাল ঘ্রাণ ময়দানে ছায়া টেনে তারস্বরে চেঁচায় অবনত বৃক্ষ ফলের শ্বাস ফুলের পতনে হুক খুলে দারস্থ হয় মধ্যরাতের বিস্তারিত গল্প

লাল লাল কোয়া নিয়ে নরম ডালে ডালিম প্রার্থনা করে শীত যেভাবে জেগে থাকে নাগলিঙ্গম, প্রতি ভোরে আমাকে ভালোবেসে নাকফুল পরা মেয়েটা দিন দিন যোগ্য হয়ে ওঠে, ধ্যানে মগজের মনন থাকে, ফুলেদের আফসোস থাকে; আয়ু থাকে না

ফারদুনতোমাকে গোলাপ নামে ডাকা হয়ে উঠবে না?

সবজি মহল

রক্তাক্ত হয়ে যাই ফারদুনযদিও তুমি একটা প্রমাণ সাইজের

টসটসে লাল টিপ আর পরীক্ষাগারে বর্ষাই গোলাপ নাম নিয়ে দুলছো

তোমার ভেতর চলতে চলতে বন-থমকে যাওয়া ঝাঁকঝাঁক অসমতল পাখিবন্দী জীবন

দেশ কাঁধে করে আসা বেদনা-প্রসব

এইরূপ কুয়াশাসমগ্র শীত আর শুষ্ক হয়ে আসে প্রাত্যহিক ঋতু

আরো কিছু খরার আস সংবাদে আঙুলের ছাপ নিয়ে

প্রতিবার তোমাকে লুকিয়ে ফেলি; হারিয়ে ফেলার ভয় জন্ম নিতে নিতেই তোমাকে চাষ করি


ফারদুনকতবার বৃষ্টি এলো তারপর নানাবিধ ফুল- ফল

ঔষধি চারা, পাহাড়িয়া ঢল আর রোদের করাতকল ঘাড়ে চেপে টইটই করে

হেঁটে গেল অনাগত বিধাতা, আরো অনেক অরণ্য

বেডরুমে চিৎকার করছে থকথক ঘ্রাণ

কম্পণ, বুক হাতড়ে আসে উলঙ্গ ছাউনি, যে যাপন! বসবাস করে যাবো জীবন

মেঘ, মৌমাছি আর অন্যান্য সন্ধ্যায় দূরাগত প্রেমিক আনো

খাড়া নহর ফলক আর বীজঃ মই দিয়ে যাই, থোকা থোকা কাঁটায় জন্ম নেয় রক্তালু আত্মজ

সেই নিরঙ্গম শ্বাস, প্রাসঙ্গিক গরিমা আর তুলতুলে সমুদ্রে রোপন করি সুচারু পতন

ফারদুনআমি নিরেট চাষা বলেই তুমিও চমৎকার বীজসুপ্ত সবজিমহল

 

ইনফিনিটি অব লাভ 

ফারদুন এক নিবিড় হাসপাতাল

আমি টলটলে লাল গোলাপ, ভালোবাসা আছে বলে উন্মাদ হয়ে গেলাম


আমিই একমাত্র স্থবির পাগলাগারদ; মানুষের মুখোমুখি সমস্ত শুশ্রƒষা নিয়ে বসে আছি দিকে দিকে

তুমুল পাল আর বাতাসের কানকো ছুঁয়ে

পৃথিবীর সব আলো চকমকি করছে চোখ বরাবর রাস্তায়


আমিই সেই রোগ; যার ধমনির মধ্যে প্রেম বিচ্ছেদ

আমিই সেই বদ্ধমূল সাজা

কারারুদ্ধ করেছি কবিজীবন

আমিই চিরন্তন বিপ্লব-বিদ্রোহ; যাকে পান করে অমর হয় পৃথিবী কাঁপানো বীর

আমিই সেই সত্তা; যাকে ধারণ করে ঈশ্বর আত্মা

 

আমিই সেই দুর্ভোগ; ভালোবাসার ভেতর বাহির এক ধবধবে কবুতর উড়ে যায় আকাশ

আমিই সেই মৌলিক অন্ধকার; ধ্রæপদীর বিপরীতে কারাগার নিয়ে ঢুকে যাচ্ছি তোমার বুকের ভেতর

আমিই সেই ক্ষত; যাকে ভালোবাসলে রোগমুক্তি হয়

আমিই সেই অবিনশ্বর প্রেমিক; গায়ের চামড়া খুলে বেচি ভালোবাসার পাপে

ফারদুনআমাকে ভালো না বেসে এড়িয়ে যাবে এমন সাধ্য কোনো প্রেমিকার নাই


নিরানব্বই নম্বর প্রেমিকা

নিরানব্বই নম্বর প্রেমিকা হারিয়ে গেলে একশ তিন দিন শোক পালন করুন; কিংবা সৎকারে অংশ নিয়ে আপনি চলে যেতে পারেন স্পেনে হ্যাঁ, আপনার খানিকটা আফসোস থাকতেই পারে বরং এভাবেই ভাবুন- আপনি শতকের দিকেই এগিয়ে গেলেন! জানেন তো, ঋতু সংহারে নতুন কলিও ডানা মেলে


আপনাকে চরিত্রহীন বলছি না, বলছি না আপনার চরিত্রে দোষ আছে। বিশ্বাস করুন! আমরা জানি, রুপন্তি আপনার আবেগ-ভালবাসায় আছে। হ্যামিলটনের রাস্তায় ডানহিল টানতে-টানতে আপনি আবার সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন, নাটাইয়ের সুতো ছাড়তে-ছাড়তে আপনি গোত্তা খেতে-খেতে নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন গন্তব্য

 

বান্ধবী হারানোর শোকে আপনি পানশালায় চলে আসুন, বেঢপ মদ্যপবস্থায় আড়ালে খুঁজুন শততম লাবণ্য। যে মেয়ে চলে যায়, ছেড়ে যায়- তাকে চলে যেতে দিন। প্রেমিকা চলে গেলেই কেবল প্রেমিকের মুক্তি

সমুদ্রে লবন চাষে নামতা জানতে হয়, দশের অংকে কয়টা ঘর ফাঁকা রাখলেন তার হিসেবও মানুষ রাখে

 

লাইফটা এনড্রয়েড হলেও বকুলের গন্ধ কিন্তু মলিন হয়না, সার্কাস মডেলের সন্ধাগুলি বোতলজাত থাকুক নেলপলিসে। ঝাঁ চিকচিক সী-বীচ হোক আপনার উদোম যাদুঘর

 

আপনার তেরাশি নম্বর প্রেমিকা-প্রিয়ন্তী, দাঁতের বর্ণনায় ডায়েরীর পাতায়-পাতায় সেকি ঈঙ্গিত! পাতাগুলি পুড়িয়ে কালি না করে কয়লার গ্যারেজে চালান করে দিন। আড়াআড়ি তাকানো জেরিনের চোখের পাঁপড়ি মানিব্যাগ থেকে বের করে দান করুন কোন মাকড়শার খামারে- রয়্যালটি পাবেন

আপনাকে কেউ উন্মাদ বললে অট্টহাসি দিন- জানেন তো! আপনার প্রাপ্তির মতো তারও কিছু প্রত্যাশা থাকে


মিস রহমানের কোকড়ানো চুল দেখে যতবার পরদেহী বাতাসে গা-ভাসিয়েছেন - তাকে বলে দিন, হোমারও এত ভালবাসেনি তার প্রেমিকাকে

নিরানব্বইতম প্রেমিকা চলে গেলে বরং উল্লাস করুন। ভাবুন, আপনি একধাপ এগিয়ে গেলেন

তার কোনো নাম ছিলো না

তেরো গোলাপ নিয়ে প্রতিদিন অপেক্ষায় থেকে থেকে
মেয়েটি আশ্চর্য সময়সূত্রের কৌণিক দূরত্ব শিখে
নয়বছর পেছনে এসে দাঁড়ালো

সেখানে এগারো বছর ধরে তার প্রেমিক কেঁদে কেঁদে এখন পেশাদার ডোম

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান