অনু ইসলামের পাঁচটি কবিতা 
অনু ইসলামের পাঁচটি কবিতা 

১.
দেহের গুঞ্জণে ফুটুক আনন্দধ্বনি 

রাতের অন্ধকার ভাঙছি; বের হয়ে আসছে লাল টুকটুকে একটা প্রাতঃমুহূর্ত ৷ শীত-প্রস্থান শেষে ফাল্গুনের হাওয়ায় কাঁপছে তীব্র প্রেমাখ্যান৷ সন্ধ্যা, প্রদীপ জ্বলে উঠছে মনে!
এ বসন্তে কামের সোহাগ সাজিয়ে রেখো; দেহের গুঞ্জণে—
ফুটুক আনন্দধ্বনি৷ প্রথম মানব-মানবীর সুখের মতো!

প্রত্ন-সংসারে ঝুলে থাকে আগামীর সম্ভাবনা এবং রোদ্দুর
শ্যাওলাখচিত জীর্ণ দেয়ালিকার মুখেও তখন নেচে ওঠে
প্রেমমুদ্রা৷ এভাবে যাপিত বসন্ত আসে বার বার শিমুলরঙে 
প্রত্ন-সংসারে জেগে থাকুক ভালোবাসার ঐতিহাসিক ডানা!

একদিন— যাপনের সহস্র সময় ভেঙে ভেঙে বিনির্মিত হবে যৌথ প্রেমসৌধ

২.
মুহূর্তমগ্ন কবিতা 

প্রতিটি মুহূর্ত সুন্দর নয়, কিন্তু মুহূর্ত সুন্দর; জীবনও সুন্দর৷ 
মানুষ, মুহূর্তের আবেদন নিয়ে বেঁচে থাকে—
জীবনকে অর্থবহের স্রোতে ভাসায়... দীপ জ্বালায়!

মা, সন্তানের কপালে যখন চুমু আঁকে মুহূর্ত জান্নাত হয়ে ওঠে
বাবা, সন্তানের পিঠে যখন হাত রাখে মুহূর্ত প্রেরণা হয়ে ওঠে৷

প্রতিটি সন্তান পৃথিবীর পথে যুদ্ধে নেমে যায়!
যুদ্ধ— জীবনব্যাপী একটা সংগ্রাম মাত্র৷ কৌশলে টিকে থাকা৷

ভিখারির থালায় যখন ভাত ওঠে অই মুহূর্তে ভিখারির হাসি
পৃথিবীর সুন্দরতম হাসি হয়ে যায়! অই মুহূর্তটুকু বেঁচে থাকে!
বেঁচে থাকে আগামীর জন্য; সুন্দরের জন্য৷

বাবার অন্তিমশয্যা মুহূর্তের মুখ; মায়ের চোখের গভীরে ঝুলে থাকে নিদারুণ এক করুণ আলোর মতো৷ সেই আলো—
রূপান্তরিত এক শক্তি হয়ে উঠে বেঁচে থাকার! 

গরম ভাতের গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে চারিদিকে পৃথিবীও সুন্দর৷

৩. 
আলোটুকু, দূরে সরে যাচ্ছে 
উৎসর্গ: কবি মাসুদ অর্ণব

তথাপি, দৈনন্দিন নিজেই নিজের কাছে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি!
মোমবাতির জীবন; যন্ত্রণা এবং দুর্বিষহপ্রবণ—
কেউ কেউ মোমবাতির গায়ে রঙের নান্দনিকতা খোঁজে
এসব এখন উদ্ভট; দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দুরূহ কোলাজ!

মাঝে-মধ্যে দেখছি; আলোটুকু, দূরে সরে যাচ্ছে!

আলো-আঁধারের খেলায় আলোই মুখ্য; আলো স্বপ্নকে ডাকে
আঁধার— জীবনকে পোড়ায়; 
জীবন, আঁধারের তাপে পুড়তে পুড়তে শূন্যে মিলিয়ে যায়

একদিন, বর্ণচোরা আঁধারের গহিনে ডুবে যাবে শেষ প্রণয়
জেগে উঠবে— দূরের ইশারা এবং দূ-রে-র আলো!

৪.
তাসের ঘর 

গল্পগুলি অন্যরকম হতে পারতো; কিন্তু সবটাই ব্যর্থতার গল্প! আনন্দযোগ নেই, জীবনের তেমন একটা উত্থান-পতন নেই— গড়-পড়তায় সবকিছুতেই নাটকীয় ব্যর্থতা৷ কোনোকিছু এখন অবশ্য স্থিতিশীল নেই; উর্ধ্বগতিতে উঠছে যাপনের গ্রাফিতি৷

ব্যক্তিত্ব, সমাজ কিংবা রাস্ট্র সবই এখন নিম্নমুখী অবগাহনে ছুটছে৷ ব্যক্তিত্বে আর ব্যক্তিত্ব থাকছে না! সমাজ ঘুণেপোকায় 
খেয়ে নিয়েছে! রাস্ট্রের মুখাবয়ব এখন বিমূর্ত এক শিল্পকলা! 

মানুষের এখন অতিমাত্রায় অর্থের ক্ষুধা; তীব্র প্রতিযোগিতা—
বেলাশেষে, ব্যর্থ গল্পের উপসংহার!

একদিন— মানুষ অবশ্য তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে!

৫.
গৎবাঁধা একটা জীবন 

গৎবাঁধা একটা জীবন; কোনো তারতম্য নেই—       সরলরৈখিক পথে হেঁটে যাচ্ছে নির্বোধের অভিধায় 
পথেরও তো কত বাঁক; চেনা-জানা হলো না এ বিজননে৷ অথচ কত না পথের নাম টুকে রাখতে হচ্ছে জীবনসমগ্রে৷

একদিন, অন্ধকারে আলোকফুল ফুটবে হয়তোবা
এমন মায়া-মুহূর্তে বিদ্যুৎবিভ্রাটের নাটকীয়তা! 
দরিয়ার জল উত্থলে উঠছে হয়তোবা৷ হয়তোবা—
আমরাও ডুবছি আঁধারআলোয়৷ এ জীবনের খসড়া খাতায় হয়তোবা অলিপিকৃত থেকে যাবে শূন্যতার 'আড়াল'!

আজকাল 'আড়াল' বড়ো বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠছে
তুষের ভূমিকায় পোড়াচ্ছে সারাক্ষণ! পুড়ছি এবং পুড়ছি...

গৎবাঁধা জীবনের স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দেখার কৌতূহল জাগে!
কিন্তু, নিয়মতান্ত্রিক যাপনে তা কী সম্ভবপর?
অসীমে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে দেখেছি; উত্তর মেলেনি! 

সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান