অবরুদ্ধ বালিকার উপলব্ধি ।। মনজুরুল ইসলাম
অবরুদ্ধ বালিকার উপলব্ধি ।। মনজুরুল ইসলাম

একটি কোমল হাত। শ্বেত পাথরের মতো শুভ্র হাতটি। আঙুলগুলিতে হরিণের কোমলতা। প্রতিটি নখে খয়েরী নেলপালিশ। নখের গাঁটের প্রান্তের দাগগুলি আবছা। মধ্য গাঁটের দাগগুলি সুবিন্যস্তভাবে সজ্জিত। একেকটি রেখা যেন নৌকোর দুপ্রান্তের ছইয়ের মতো ঈষৎ বাঁকা। পুরো আঙুলজুড়ে নেই লোমের অস্তিত্ব। ধবধবে সাদা চাদরের ওপর শুয়ে আছে হাতটি বরফের মতো শীতল হয়ে এসেছে আতংকে। তুলোর মতো নরম হাতটির উপর এবার এসে পড়লো আরেকটি হাত। মিশমিশে কালো। মোটা আঙুল। আঙুলগুলির শরীরজুড়ে শক্ত লোমের তৃণভূমি। প্রতিটি নখেই মেহেদীর ছাপ। গরম হাতের স্পর্শে শিহরিত হলো কোমল হাতটি। হাতটি সাথীর। কুড়ি বছরের শিক্ষার্থী। শিহরণের অনুভূতিটি অর্জনের সাথে সাথে বুজে গেল ওর  অনুভব। চোখের পাতা ভ্রুর মাঝখানে লাগানো রূপোলী শ্যাডো দেখতে পেলো ইকবাল। বয়স পয়ত্রিশ। দেখলে মনে হয় পঁচিশের আশেপাশে। অল্প শিক্ষিত হলেও স্মার্ট। স্বাস্থ্যবান শরীরটি কৃষ্ণবর্ণের। উৎকণ্ঠিত চোখ দিয়ে দেখতে থাকলো সাথীর টানা টানা চোখ, প্রশ্বস্ত কপাল এবং নীল টিপটি। অনিমেষ মুগ্ধতা নিয়ে দেখতে দেখতে এবার উষ্ণ ডান হাতটি স্পর্শ করলো সাথীর গলার পেছনের অংশে। শরীরের শিহরিত কম্পনের সাক্ষী হয়ে রইলো যেন গলার হারটি। কাশফুলের মতো শুভ্রতা ছড়ানো সাথীর মুখখানি দেখে আর স্থির থাকতে পারলো না ইকবাল। সাথীর নাকের সাথে স্পর্শ করালো নিজের লম্বা নাকটি। প্রতিবাদ করলো না সাথী। এবার মোটা কালো ঠোঁটটি দিয়ে সাথীর তুলতুলে নরম ঠোঁটে চুমু দিতে উদ্যত হলো ইকবাল। সাথীর ঠোঁটের কাছাকাছি এলো ইকবালের ঠোঁট দুটি। কিন্তু ব্যর্থ হলো। বাম হাতে ইকবালকে সরিয়ে দিয়ে নিজের ঠোঁট দুটি রক্ষা করলো সাথী। একটু দূরে গিয়েই অনবরত হাসতে থাকলো। ওর হাসির শব্দগুলি প্রতিধ্বনিত হয়ে ইকবালের কানে সৃষ্টি করলো ব্যর্থতার এক গ্লানির। আবার এগিয়ে এলো ইকবাল। অন্তত একটি চুম্বন দিয়ে অভ্যর্থনা জানাবে সাথীকে তার জীবনে। কিন্তু দ্বিতীয়বারও ব্যর্থ হলো। পুনরায় ইকবালকে সরিয়ে দিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সাথী। ইকবালের দিকে তাকিয়ে থেকেই আবৃত্তির মতো করে উচ্চারণ করলো-

রাত্রির গভীরতা

যখন মেলে ধরবে নীরবতা,

যখন ঘুমিয়ে পড়বে শহর,

শহরের প্রতিটি মানুষ এবং প্রকৃতি।

নিস্তব্ধ হয়ে যাবে

সমস্ত অট্টালিকা,সড়ক কুঁড়েঘর।

যখন রুদ্ধ করে দেয়া হবে

ঘরের প্রতিটি দরোজা জানালা,

তখন আমি আসবো, আসবো তোমার কাছে।

চাঁদের কোলে বসে

গল্প করবো তোমার সাথে।

আর মেলে ধরবো

আমার সৌন্দর্যের গভীরতা।

 

এখন যাও, যা যা কিনতে বলেছি নিয়ে এসো।লজ্জার ভাব নিয়ে বললো সাথী। সুবোধ বালকের মতো মাথা নেড়ে সাথীর দিকে তাকিয়ে থাকলো ইকবাল। দেখতে থাকলো লিপস্টিকের ছোঁয়ায় গোলাপী রূপ ধারণ করা ওর জলজলে ঠোঁটের দিকে। আবারো হাসতে থাকলো সাথী। এগিয়ে এলো ইকবাল। সাথীর একদম কাছাকাছি। সাথীর হাতের সাথে জড়িয়ে নিলো নিজের হাত। আলতো করে চাপতে থাকলো। পুনরায় আবেগকে সংবরণ করে ইকবালের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো সাথী। আবারো উচ্চারণ করতে থাকলো আবৃত্তির মতো করে-

যাও প্রিয়তম, যাও।

সংগ্রহ করো,

শহরের পথে প্রান্তরে, অলিতে গলিতে ছড়িয়ে থাকা

সমস্ত ভালোবাসা।

আর নিয়ে এসো

আমার জন্য।

এই শহরে যত গ্লাডিওলাস ফুটেছে,

তার সবকটিই নিয়ে এসো আজ,

গুজে দাও আমার খোঁপায়।

যতটি বকুল জন্ম নিয়েছে আজ

এই লাবণ্যঘেরা প্রকৃতিতে,

তার সবকটিরই সুঘ্রাণ

নিয়ে এসো আমার জন্য আজলা ভরে।

আর আমার সমস্ত রজনীকে করে তোলো

তাজা গোলাপের মতো টকটকে লাল।

যাও, চলে যাও কবুতরের শুভ্রতা নিয়ে,

ফিরে এসো

মানবিক ভালবাসার কলি নিয়ে,

বপন করো আমাদের মাঝে,

স্থায়ী করো আমাদের ভালোবাসাকে।

যাও, চলে যাও প্রকৃতির মতো কোমল হয়ে

ফিরে এসো, ফিরে   এসো,

অশ্বারোহীর মতো শক্তি নিয়ে।

যাও, বন্ধু যাও,

শহরের সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে এসো আমার জন্যে,

অনিঃশেষ প্রহর ধরে অপেক্ষা করবো আমি তোমারই প্রতীক্ষায়।

 

আজ আর কবিতার কোনো প্রত্যুত্তর দিলো না ইকবাল। অনির্বাণ মুগ্ধতা নিয়ে শুনে গেল সাথীর কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত পংক্তিগুলি। অতীতে অজস্র কবিতায় মোহাচ্ছন্ন করেছিলো সাথীকে। অর্জন করেছিলো সাথীর ভালোবাসা। তার কবিতার উত্তর দিতে দিতে কখন যে কবি হয়ে উঠেছে সাথী বুঝতে পারে নি আজো। রুম থেকে বেরুলো ইকবাল। দরোজা সাবধানে বন্ধ করে অপেক্ষায় রইলো সাথী।

অপেক্ষা সৃষ্টির সূত্রপাত আজ থেকে এক বছর পূর্বেই। দুজনের মাঝে পরিচয় ফেসবুকে। ফেসবুক মেসেঞ্জারেই ভাব বিনিময়, কবিতার মাধ্যমে ভালোবাসার আদানপ্রদান, ভিডিও কলে একে অপরকে দেখাদেখি এবং আজকের এই হৃদ্যতা। সরাসরি সাক্ষাৎ হয়েছিল দুবার। তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল পার্কে সময়ে কাটানো আর রেস্তোরার মাঝেই। আসতে চায় নি সাথী।  সামনের সপ্তাহেই ফাইনাল পরীক্ষা ওর। সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ে। ইকবালের জোরাজুরির পাশাপাশি নিজের উতুঙ্গ আবেগের কারণে ইকবালের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পারে নি ও। অধিকাংশ মেয়েই পারে না এই দুবর্লতা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে।  দুজন আজ একত্রিত হয়েছে হোটেল ড্রিমল্যান্ডের এই রঙিন কক্ষে। কোনোদিনও এভাবে দেখা হয়নি। ব্যবসায়ী হলে দোষ কোথায়? সে যে বড্ড ভালোবাসে সাথীকে। প্রকৃত ভালোবাসাই তো জীবনে সুখ সৃষ্টির পাথেয়। তাছাড়া ইকবাল তো শিক্ষিত, আধুনিক, ধনী ব্যবসায়ী। ওকে নিয়ে সারাজীবন কাটানো হবে অসাধারণ ব্যাপার। এমন ভাবনা নিয়ত ইকবালের প্রতি দুবর্ল করে তুলেছিল সাথীকে। ইকবালের লেখা কবিতা এবং ভালবাসার প্রতিশ্রুতিগুলি সাথীর মনোজগতে সৃষ্টি করেছিল একটি প্রবল আস্থার। পৌঁছে দিয়েছিল ওকে স্বস্তির অন্তিম চূড়ায়।

অবশ্য অপরিচিত এই আবহে এই মুহূর্তে অস্বস্তি বোধ করছে সাথী। কিছুটা ক্লান্তিও কাজ করছে ওর শরীরজুড়ে। বাথরুমে গেল। ক্যামেরা আছে কিনা যাচাই করলো। ক্যামেরার অস্তিত্ব দেখতে না পেয়ে নির্ভার হলো অনেকটাই। ফ্রেশ হয়ে এসে হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে  শুয়ে পড়লো বিছানায়। মুহূর্তেই চোখ দুটি বুজে এলো ওর। মোহনীয় সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠা মুখখানি দেখতে থাকলো এবার হোটেল ড্রিমল্যান্ডের এই কক্ষটি। প্রতিদিনই কত ধরনের নারী- পুরুষ আসে ওর কাছে। কিন্তু কেউই তাকায় না ওর দিকে। ওর কথা ভাবে না একবারও। ভয় পাওয়া তো দূরের অতীত। ওরও যে দুটি চোখ আছে সেটি বোঝার চেষ্টা করে না কেউই।  ইচ্ছেমতো ভোগে মত্ত হয়ে উঠে সবাই। কেন জানি সাথীর ওপর মমতার সৃষ্টি হলো আজ কক্ষটির। গতানুগতিক দৃশ্য যেন এই মেয়েটির ক্ষেত্রেও  দেখতে না হয় সে কামনাই করতে থাকলো ও। অপেক্ষা করতে থাকলো সাথীর মতোই রাত্রির আগমনের।

হোটেল থেকে বেরিয়েই ফুলের দোকানে গিয়েছিল ইকবাল। সাথীর পছন্দের ফুলগুলি কিনে কিছু প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনলো ফার্মেসি থেকে। উপকরণগুলো ক্রয়ের অভ্যস্ততা থাকলেও আড়ষ্ঠতা বোধ করলো। লজ্জার কারণে অনেক কষ্ট করে জিজ্ঞেস করতে পারলো উপকরণটির নাম। এবার খাবার ক্রয়ের পর্ব। প্রবেশ করলো হোটেলের একদম গা ঘেঁষে অবস্থিত দ্বিতলবিশিষ্ট শহরের জনপ্রিয় চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। বসলো এক কোনের ছোট্ট একটি টেবিলে। দেখতে থাকলো পরিপাটি রেস্টুরেন্টেটির চারপাশ। মৃদু রঙিন আলোয় পরিবেশটি অনেকটাই মনোলোভা। পুরোনো দিনের রোমান্টিক গান যোগ করেছে ভিন্ন মাধুর্য। ওয়েটার আসামাত্রই দুপ্যাকেট ডিনারের সাথে কফির অর্ডার করলো ইকবাল। ক্ষণিকের মধ্যে চলে এল কফি। কফিতে চুমুক দিতে দিতেই ভাবতে থাকলো সাথীর কথা। ভাবতে ভাবতেই প্রফুল্ল হয়ে উঠলো ওর মন। দীর্ঘ সময়ের প্রতীক্ষায় ওকে পেয়েছে আজ। প্রফুল্লতার এই ভাবটি মুহূর্তেই দ্বিগুণ হলো যখন পাশের টেবিলে বসে থাকা মেয়েটির দিকে দৃষ্টি পড়লো ওর। সাথীর চেয়েও যেন অপরূপ সুন্দরী মনে হলো মেয়েটিকে। সাদা গোলাপের মতো মুখের লাবণ্য। মুখ থেকে অনবরত ঝরছে নিঃশব্দ হাসির ফল্গুধারা। থুতনিতে পড়া টোলটি ভীষণভাবে আকর্ষণ করছে ওকে।

এবার মেয়েটির পুরো শরীরের দিকে নিবিড়ভাবে তাকালো ইকবাল। মুঠোফোনে অনরবত আসতে থাকা কলও রিসিভ করলো না। খুশীর ভাব নিয়ে কথা বলছে পাশে বসা এক বয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে। ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হলেও দেখতে ঠিক যেন তারই মতো। কৃষ্ণ বর্ণ, পুরু গোঁফ, লোমশ হাত, স্থুল শরীর, পুরুষ্ঠ ঠোঁট দেখে ভেবে নিলো ইকবাল- চিন্তাভাবনাও হয়ত তারই মতো হবে। এমন ভাবনা স্বস্তির বোধ সৃষ্টি করলো তার মাঝে। এবার কান পাতলো ওদের দিকে। গভীর মনোযোগ সহকারে অনুধাবন করতে চাইলো ওদের কথোপকথন। কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না ইকবাল। উপায় না দেখে অত্যন্ত সাবধানে চেষ্টা করলো ওদের অঙ্গভঙ্গি পর্যবেক্ষণের। এরই মাঝে বন্ধু বিক্রমের সমস্যা থাকায় ফোন করলো আরমানকে। টার দিকে আসার কথা থাকলেও ওকে আসতে বললো এখুনি। চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনেই। থাকলে ভদ্রলোকের মুখোমুখি হওয়া একটু হলেও সুবিধে হবে- ভাবলো মনে মনে। আর মুগ্ধতা নিয়ে দেখতে থাকলো মেয়েটিকে। ভেতরে ভেতরে অনুভবও করতো থাকলো উত্তেজনা। ইতোমধ্যে ডিনারের প্যাকেট এসেছে। বিলও পরিশোধ করেছে ইকবাল। কিন্তু টেবিল ছেড়ে উঠছে না। অপেক্ষা করছে নতুন জুটির উঠবার অপেক্ষায়। একটানা কোনো টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকা বিপজ্জনক। ভদ্রলোক যে বুঝতে পেরেছেন তা একবার তার মুখভঙ্গি দেখে বুঝতে পেরেছে ইকবাল। উপায় না দেখে উদ্দেশ্যহীনভাবে মোবাইল টিপতে থাকলো। কিছুক্ষণ পরপরই চোখ রাখলো ওদের উপর। এবার টেবিল ছেড়ে উঠলো ইকবালের দৃষ্টিতে নতুন জুটি। দ্রুত টেবিল থেকে উঠে ইকবালও বাইরে এসে রইলো দাঁড়িয়ে। মেয়েটিকে রিকশায় তুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ভদ্রলোক। রেস্টুরেন্টের সামনে প্রশ্বস্ত বারান্দায়। সিগ্রেট টানছেন আর সিগ্রেটের ধোঁয়াগুলি ছুঁড়ছেন আকাশের দিকে। ভদ্রলোকের কাছাকাছি আসলো ইকবাল। 

আপনার সঙ্গে কি একটু কথা বলা যাবে? হাসোজ্জ্বল মুখে বিনয়ের ভাব দেখিয়ে বললো ইকবাল।

সিউর, সিউর, বলুন না। ভদ্রলোকের মাঝেও আগ্রহ স্পষ্ট হলো।

না, আসলে বলছিলাম কি, একটু সিক্রেট কথা। সংকোচের ভাব ফুটে উঠলো ইকবালের চোখেমুখে।

তা চলুন না সামনের ফাঁকা মাঠটায় যাওয়া যাক। কথা বলতে বলতেই এগুতে থাকলো দুজনই। প্রকৃত পরিচয় প্রদান করলো কিনা বোঝা গেল না। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কেউ কারো প্রকৃত পরিচয় প্রদান করে না। এরা যে প্রদান করবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। শহরের বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠটিতে এসে দাঁড়ালো উভয়ই। আশপাশে নেই কোনো ঘরবাড়ী। ব্যস্ত শহরের চঞ্চলতার রূপ একদমই অনুপস্থিত। সন্ধ্যের প্রকৃতির সাথে মৃদু বাতাস ফুরফুরে আমেজ তৈরী করলো ওদের মাঝে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুটা সময়।

এভাবে তাকিয়ে থাকলে হবে ইয়াংম্যান? কী বলবেন বলে ফেলুন, সমস্যা নেই। ইকবালের মাঝে সংকোচ ভেঙে দেবার লক্ষ্যে বললেন ভদ্রলোক।

এবার অনেকটাই সহজ হয়ে এলো ইকবাল। সাবলীল ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলো-বলছিলাম কি, আজকে একটা অপারেশন ছিল আমাদের। আমরা তিন বন্ধু প্রায়ই ধরনের অপারেশন করে থাকি। আজ এক বন্ধু আসতে পারবে না। যদি আপনি আমাদের সাথে যোগ দিতেন, অবশ্য আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে।

তা অপারেশনটা কি ধরনের আর আমাকেই বা সিলেক্ট করলেন কেন, বলুন দেখি? ইকবালের কাছে এসে বললেন ভদ্রলোক।

ভদ্রলোকের এই কথায় প্রবল আগ্রহ লক্ষ করা গেল ইকবালের মাঝে। উৎসাহ নিয়ে বলতে শুরু করলো-এই ধরুন, ফেসবুকে সুন্দরী কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করলাম। অতঃপর তাকে ভিডিও কল করে দেখার পর পছন্দ হলে তার পেছনে সময় ব্যয় করা শুরু করলাম। সাধারণ মেয়ে হলে দুএকদিন রেস্টুরেন্টে খাইয়ে কিছু উপহার প্রদান করলেই স্বার্থ উদ্ধার হয়ে যায়। হোটেল অথবা নিরাপদ কোনো জায়গায় নিয়ে গিয়ে তিন বন্ধু মিলে এনজয় করা যায়। মেয়ের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা হলে ব্লাকমেইলের ভয় দেখাই। তবে মার্জিত, মেধাবী এবং উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের ম্যানেজ করতে একটু কষ্ট করতে হয়।

কষ্টটা কি রকম একটু বলবেন কি? অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিয়ে ইকবালের দিকে তাকালেন ভদ্রলোক।

খুব যে কষ্ট তাও অবশ্য না, সাজিয়ে গুজিয়ে চিঠি লেখা, ভালোবাসার বিদেশী কিছ অনুবাদ কবিতা নেট থেকে সংগ্রহ করে মেসেজ করা, নিজের ছবি সেন্ট করা আর মাঝে মাঝে তার ঠিকানায় গিফট পাঠানো। অবশ্য যদি খুব বাঁকা হয় তাহলে বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়ে রাখা। আর হ্যাঁ, অবশ্যই সপ্তাহে একদিন একটু বেশী কথা বলে, ভিডিওতে নিজের শরীরখানা দেখিয়ে নীরব থাকতে হবে। এমন ভাব নিতে হবে যাতে প্রেমিকা মনে করতে পারে আমি ভীষণ ব্যস্ত। তাতে করে হবে কী, সময়ও বাঁচবে আর আমার প্রতি মেয়েটির আগ্রহও সৃষ্টি হবে। বুঝতে পারলেন তো।

এত সুন্দর করে বোঝালে কি আর না বুঝে থাকা যায়। কিন্তু, এতে করে যে মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে সেটা কি কখনো ভেবেছেন?

জীবনটাকে এনজয় করতে চাইলে কি আর এত কিছু ভাবলে চলবে মশাই?

কিন্তু আপনার বোনকেও যদি কেউ এভাবে এনজয় করে তাহলে কেমন লাগবে?

কিছুটা হোঁচটা খাবার মতো বোধ করলো ইকবাল। অতঃপর স্বাভাবিক হয়ে বললো, বললাম তো, দার্শনিকের মতো ভাবলে তো আর জীবনকে এনজয় করা যাবে না। 

আচ্ছা, কিছু মনে করবেন না। আজকের অপারেশনের বস্তুটি কি সাধারণ না উচ্চ শিক্ষিত? ইকবালের মুখের কাছে এসে দাঁতগুলি বের করে হাসতে হাসতে বললেন ভদ্রলোক।

এই তো লাইনে এসেছেন। সে দেখলেই বুঝতে পারবেন। ওই যে রেস্টুরেন্টের সামনেই হোটেলটা আছে না ড্রিমল্যান্ড, ওখানেই। ম্যানেজারের রুমের পাশেই দক্ষিণ প্রান্তের রুমটিতে। ব্যক্তিগত নিরাপদ জায়গা না থাকলে এখানেই আসি আমরা।

আচ্ছা, আপনার সাথে যে সুন্দরীকে দেখলাম সে বুঝি খুব ভালোবাসে আপনাকে? সাহসের বৃত্তে দাঁড়িয়ে বললো ইকবাল।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, খুব ভালোবাসে। আমিও কিন্তু মন প্রাণ দিয়ে  ভালোবাসি ওকে। একটু থেমে থেমে বললেন ভদ্রলোক।

মেয়েটি কিন্তু দারুণ। আপনি আসুন না আমাদের গ্রুপে পার্মানেন্টলি জয়েন করুন। প্রতি সপ্তাহেই একটা না একটা মেয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। সরাসরি প্রস্তাব করে ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো ইকবাল।

সে দেখা যাবে। আজকের অপারেশনটাতে আগে যোগ দিই। তারপর ভেবে দেখবো। চলুন, হোটেলের দিকে যাই। একটি আশ্বাসের বার্তা প্রদান করে ইকবালের কাঁধে হাত রাখলেন ভদ্রলোক।

অবশ্যই, চলুন যাওয়া যাক।

হাঁটতে হাঁটতে দুজনই চলে এলো হোটেলের সামনে। দেখতে পেলো পুরোনো লালরঙের ইয়ামাহা মোটরসাইকেলে বসে আছে মধ্যবয়সী ছিপছিপে শ্যামবর্ণের লম্বা বন্ধু আরমান। মাথার ক্যাপ, চোখের সানগ্লাস এবং হাতের ব্রেসলেট দেখে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে তার মানসিকতা। তিনজনই মিলে আজ একটা দারুণ মুহূর্ত উপভোগ করা যাবে-মনে মনে ভাবতেই পুলক বোধ করলো ইকবাল। মোটর সাইকেল থেকে নামলো আরমান। ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে ঠিক মুহূর্তেই মুঠোফোনের কলসুরটি বেজে উঠলো ভদ্রলোকের। দ্রুত রিসিভ করে কথা বলা শুরু করলেন ভদ্রলোক। দুবন্ধুই তার কথোপকথন শুনতে লাগলো।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, তোমার মেয়ে ভালো আছে। চাইনিজে খাইয়েই একটু আগে রিকশায় উঠিয়ে দিয়েছি। কোনো চিন্তা কোরো না।

বাঁচতে চাইলে তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট কর।ভদ্রলোকের কথা বলার মাঝেই ওয়ারলেস ফোনে সংকেত বেজে উঠতেই ফিসফিস করে বন্ধু আরমানকে বলে উঠলো ইকবাল। এত লম্বা সময়েও লোকটিকে বুঝতে পারলাম না-আফসোসের সুরে নিজেকে নিজেই বলতে থাকলো ইকবাল। মোটরসাইকেল স্টার্ট করতেই ভদ্রলোক মোবাইল রেখে ওদের ধরার চেষ্টা করলেন। দৌড়োনোর মতো করে ছুটলেন। কিন্তু পারলেন না। নিমিষেই দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল ইকবাল ওর বন্ধু। 

শালা, শুয়োরের বাচ্চা। গাড়ী থাকলে আজ তোদের দুটোরই হাড় গুড়ো করতাম। ভদ্রলোক পুলিশ অফিসার। কোতোয়ালী থানায় কর্মরত। মেয়ে পড়ে রূপপুর সরকারি কলেজে। হোস্টেলে রেখে পড়াচ্ছেন। পরিবার থাকে গ্রামে। হোটেল ড্রিমল্যান্ড, দক্ষিণ প্রান্তের সর্বশেষ রুম। মেয়েটিকে বাঁচাতে হবে। আহারে! কত মেয়ে যে এভাবে প্রতারিত হচ্ছে। আফসোসের সুরে উচ্চারণ করতে থাকলেন অফিসার। প্রবল উত্তেজনা নিয়ে হাঁটতে থাকলেন হোটেলের দিকে।

আডাই ঘণ্টা পেরিয়েছে। এখনো ফেরেনি ইকবাল। অনবরত কল করেছিল সাথী। রিসিভ করে নি ইকবাল। এই মুহূর্তে সুইচড অফ। অস্থিরতা বেড়ে চলেছে ওর মাঝে। বুঝতে পারছে-প্রতারিত হয়েছে ও। পরিচয়, প্রেম আর বিয়ের প্রতিশ্রুতি। এত কিছুর পরও একজন মানুষ এতটা প্রতারক হতে পারে। ভালোবাসার এত প্রতিশ্রুতি দিয়েও! বুঝতে পারলেও বিশ্বাস করতে পারছে না ও। এত উচ্চমার্গীয় কবিতা লিখে কীভাবে একজন মানুষ প্রতারণার ফাঁদ নির্মাণ করতে পারে! আপনাআপনি ইকবালের লেখা কবিতার চরণগুলি চোখের সামনে প্রতিফলিত হতে থাকলো-

’তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা

একটি বৃত্তের মতো

এর কোনো শুরু নেই

নেই কোনো শেষ

আমাকে যদি বলা হয়

আমার শ্বাসকে আমি পছন্দ করবো নাকি তোমাকে?

তবে আমার অন্তিম শ্বাসটুকু ব্যবহার করেই

আমি বলবো

তোমাকেই ভালোবাসি আমি।

আমি আমার চোখের অশ্রু ফেলবো

সমুদ্রের মাঝখানে

এবং যখন সে অশ্রু তুমি খুঁজে পাবে

তখনই আমি তোমায় ভালোবাসা বন্ধ করবো।

তুমি একটি পৃথিবী পাবার যোগ্য আমার কাছে

কিন্তু আমি জানি যে,

তা আমি দিতে অক্ষম।

কিন্তু এরপরের সর্বোত্তম জিনিসটিই আমি তোমাকে দিতে পারবো

আর সেটি হলো; আমার পৃথিবী।

আমি যদি তোমাকে বারোটি ফুল উপহার দিই

এবং সে বারোটি ফুলের মধ্যে যদি একটি ফুলও অপবিত্র হয়

তবে সে অপবিত্র ফুলটির মৃত্যু না হওয়া অবধি

আমি তোমাকে ভালবাসবো

এই পুরো পৃথিবীকে আমি জয় করতে পারবো শুধু একটি হাত দিয়েই

যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য হাতটি ধরে থাকবে তুমি।’’ (জ্যাসন মোটটা)

আমি আমার সকল স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছি তোমার পদতলে

কোমলভাবে ভেসে বেড়াও

কারণ সেই স্বপ্নের উপরই ভেসে বেড়াও তুমি।’’(ডব্লিউ বি. ইয়েটস)

‘‘আমি তোমার সাথে তাই- করতে চাই

যা শীত করে চেরী বৃক্ষের সাথে।’’ ( পাবলো নেরুদা)

‘‘শোনো,

আমার আত্মা কথা বলছে।

সেই শুরু থেকেই

যা আমি দেখেছিলাম

আমার আত্মা কি তোমার ভালোবাসায় উড়েছিল’’ (শেকসপিয়র)

‘‘আসো,

আমার সাথে বাস করো

এবং আমার ভালোবাসার সাথেও

এবং আমরাই প্রমাণ করবো তৃপ্তির অসীম উপাদানকে।’’(জন ডান)

 

মুহূর্তে হোস্টেলে পৌঁছানোও সম্ভব নয়। গ্রামের বাড়ীতে যাওয়াও অসম্ভব। সন্ধ্যে সাতটায় বন্ধ হয়ে যায় বাস। কী করবে ? বুঝতে পারছে না। রুমভাড়া পরিশোধ করবে এমন টাকাও নেই ওর কাছে। উদ্বিগ্নতা আচ্ছন্ন করেছে ওকে। তবুও বের হতে উদ্যত হলো। শব্দ না করে খুললো দরজা। কেউ না থাকলে পালিয়ে যাবে। স্থির করলো। এক পা বাড়াতেই  শুনতে পেলো ম্যানেজারের ককর্শ কণ্ঠস্বর। চারপাশে লোকজনের যাতায়াতের শব্দে ভারী হয়ে এলো সাথীর বুকের চারপাশ।  

কিরে দবির। আজকে তো প্লে বয়েরা এখনো আসলো না। দশটা বাজার সাথে সাথেই দরোজা বন্ধ করবি, আর মেয়েটিকে কড়া নজরে রাখবি, বুঝলি। প্লে বয়েরা না আসলে আজ আমরাই ভোগ করবো মালটিকে। ককর্শ স্বরে হোটেল বয় দরিবকে বললো ম্যানেজার।

জি¦, আচ্ছা। আপনি যা বলবেন তাই হবে। মৃদু স্বরে বললো দবির।

আমি কী ভুল করলাম। এখন কী করবো আমি? ম্যানেজারের কথাগুলি তীব্রভাবে তীক্ষ্ন তীরের মতো বুকে এসে বিঁধতে থাকলো সাথীর। একটি চরম আতংক সৃষ্টি হলো ওর বুকের ভেতর। উত্তেজনায় চোখদুটি যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইলো। দরজা বন্ধ করে জানালার পাশে এসে ভাবতে থাকলো অবিরাম। বান্ধবীদের কল দেবার কথা ভাবলেও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো। কল করলো বন্ধু বিপুলকে। বিপুল ওর খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সম্পর্কটি অনেকটা ভাইবোনের মতো।  প্রথমবার কল রিসিভ না হওয়ায় দ্বিতীয়বার আবারোও করলো। কিন্তু যথারীতি কলটি রিসিভ হলো না। পরিবারের কথা  ভাবলো। অনুতপ্ত হতে থাকলো ভীষণভাবে। যদি কোনো বিপদ ঘটে তবে কোন মুখে দাঁড়াবে ওদের সামনে গিয়ে। ফুলের মতো ওর সুন্দর জীবনের এমন পরিণতি ঘটবে কল্পনাও করতে পারে নি ও। নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনবরত অশ্রুপাত হতে থাকলো এবার। অশ্রুপাতের মাঝেই নেট অন করে ফেক আইডি ডিলিট করলো। ভুয়া সিমটিও বের করে ফেলে দিলো। পাতলা সিমটি চারতলার করিডোর থেকে পড়তে থাকলো নিচে। পড়বার সাথে সাথে মনে হলো যেন ওর মনের ময়লাগুলিও ঝরে পড়লো। এরই মাঝে দরজায় শব্দ শুনতেই আঁতকে উঠলো সাথী। দরজা খুলবে কি খুলবে না নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলো। এমন দ্বিধার মাঝে আবারও দরজায় শব্দ হলো। চুপ করে থাকলো সাথী।

দরজা খোলেন আপুমনি, কোনো সমসা হবে না? একটি অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো সাথী। দরজার কাছে এসে বুঝতে পারলো একের অধিক লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবার দরজায় হেলান দিয়ে ইকবালের মোবাইলে কল দিলো। প্রতারকটা আছে কিনা আগে যাচাই করে নিই- মনে মনে ভাবলো। যথারীতি মোবাইলের সুইচড অফ পেয়ে নিশ্চিত হলো নেই। যা হয় হবে। নিঃশব্দ উচ্চারণ করেই দরজা খুলে দিলো।

স্যার, এই যে আপু। এনাকে নিয়েই উনি এসেছিলেন। ম্যানেজার সাথীকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে পুলিশ অফিসারকে ভেতরে   বসতে বললেন।

মামনি কোনো ভয় পাবে না। আমি পুলিশ অফিসার। তোমাকে উদ্ধার করতে এসেছি। সাথীর মানাসিক অবস্থা উপলব্ধি করে ওর কাছে আসলেন ভদ্রলোক। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বললেন ওকে

ইকবালের বায়োডাটা নিয়ে কাল থানায় আসবেন। আমি মেয়েটিকে নিয়ে যাচ্ছি। দাঁড়িয়ে থেকেই ম্যানেজারকে বলে সাথীকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন পুলিশ অফিসার।

কোনো কথা না বলে অনবরত কেঁদে চলেছে সাথী। বুঝতে পারলো যাত্রায় বেঁচে গেলো ও। জীবন থাকতে কখনোই আর এমনটি করবো না। সৃষ্টিকর্তাকে মনে মনে স্মরণ করলো। এবং একটি অলিখিত প্রতিশ্রুতিও প্রদান করলো। হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ালো পুলিশ অফিসার। দুএকটি গাড়ী চলাচল করলেও কোনো রিকশা চোখে পড়ছে না এই মুহূর্তে। সোডিয়াম লাইটের আলোয় চিকচিক করছে রাস্তার কালো পিচগুলি। প্রকৃতিতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। সাথীর কান্নাজড়িত মুখাবয়বটি দেখে অপ্রসন্নতা অনুভব করছেন পুলিশ অফিসার। আপনাআপনি নিজের মেয়ের প্রতিচ্ছবিটি ভেসে উঠছে তার মননে। কোথায় চলে গেছে সমাজ! তার মেয়েটিও যদি এমন ফাঁদে পড়ে কী হবে তখন। ভাবতেই বিস্ময় নিয়ে সাথীর দিকে তাকালেন তিনি।

সাথী মামনি, কেঁদো না। আমার দিকে তাকাও। আমি বুঝতে পারছি তো তোমার কোন দোষ নেই। তুমি প্রতারিত হয়েছ। এটি শোনার পর পুলিশ অফিসারের মুখের দিকে তাকালো সাথী।

যেভাবেই হোক প্রতারকগুলোকে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। এদের উচিত শিক্ষা না হলে হাজার হাজার মেয়ের জীবন এভাবেই নষ্ট হবে পুলিশ অফিসারও সাথীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রতিশ্রুতির সুরে বললেন। 

এই তো মিষ্টি মেয়ে। তোমার মতো আমারো একটি মেয়ে আছে জানো। তোমার যে কিছু হয় নি এটিই তো সৌভাগ্য। আজ থেকে নতুন জীবন শুরু করবে। এত উচ্চ শিক্ষিত হয়েও কেন যে তোমরা এমন ভুল করে বুঝি না?’’ সাথীর কান্না কিছুটা কমে এলে বললেন পুলিশ অফিসার। আর ভেতরে ভেতরে আক্ষেপের যন্ত্রণায় পুড়তে   থাকলেন।

এ্রই মাঝে একটি রিকশা এসে ওদের সামনে দাঁড়ালো। রিকশায় উঠে একবার মেয়ের কাছে রাখার কথা ভাবলেও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেন পুলিশ অফিসার। সিদ্ধান্ত নিলেন পুলিশের মহিলা মেসে যাবার। দ্রæ গতিতে এগুতে থাকলো রিকশা। মাথা নিচু করে রিকশায় বসে আছে সাথী। বিরামহীনভাবে উপদেশ দিয়ে চলেছেন পুলিশ অফিসার। স্বল্প সময়েই রিকশাটি চলে এলো পুলিশ মহিলা মেসের সামনে। হেঁটে হেঁটে একজন মহিলা কনস্টেবল আসছে ওদের কাছে। রিকশা থেকেই নেমেই দেখতে পেল। কনস্টেবলকে সব বুঝিয়ে দিয়ে সাথীর দিকে তাকালেন পুলিশ অফিসার।

সাথী মামনি, আর কোনো চিন্তা নয়, তুমি এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ।বলেই কনস্টেবলের কাছে সাথীকে রেখে চলে গেলেন পুলিশ অফিসার। মহিলা কনস্টেবলের পেছন পেছন হাঁটতে থাকলো সাথী। অনবরত ইতিবাচক ভাবনার পলি যেন জমতে থাকলো ওর চিন্তার জগতজুড়ে।

আঁধারের সৌন্দর্যও বর্ণিল হয়ে ওঠে

যদি সে আঁধার হয় মসৃণ।

চাঁদেরাও সে আঁধারের আঙিনাকে

ভরিয়ে দেয় অবারিত আলোয়।

 

আর তীব্র ঝলমলে আলোর আয়োজনও

হয়ে উঠতে পারে  ম্রিয়মাণ

যদি সে আলোর উৎসমুখ হয় অমসৃণ।

 

পৃথিবীর সকল আধারই হয়ে উঠুক মসৃণ

পৃথিবীর সকল আলোরই উৎসমুখ হোক অমলিন

মসৃণ আঁধার আর অমলিন আলোর নীড়ে

বেড়ে উঠুক তারুণ্যের স্বপ্নগুলি।

 

গল্পকার: শিক্ষক, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান