আবু মকসুদ এর কবিতাগুচ্ছ
আবু মকসুদ এর কবিতাগুচ্ছ
দ্রাক্ষার রস টক

দ্রাক্ষার রস টক আমিও
কী জেনেছিলাম!
যেদিন চোখের সামনে
আকবরের বাইকে চড়লে, শাঁ করে
উঠে গেলে সদর রাস্তায়,
আকাশে কান্না দেখলাম।
পড়শির অধিকারে
বার বার গিয়েছি উঠানে,
নির্লজ্জ ভিখারির মত
হয়েছি নজরের কাঙ্গাল।
কৃপা পেলে বর্তে যেতাম
হে কৃপাময়ী!
ছেঁড়া ন্যাকড়ার
প্রতি রাজকুমারীর কোন
আসক্তি থাকে না, বড় কষ্টে
জেনেছিলাম। কষ্টে বুক বাঁধি।
দ্রাক্ষার দোকানে ঝুলানো স্বপ্ন
অধরাই থেকে যায়। দ্রাক্ষার রস
টক এইটুক জীবনের শান্তনা।

বাগানে ফুল চর্চা হচ্ছে, নিত্যনতুন
অত্যাচারে মৃত্তিকা ত্যক্ত হচ্ছে কিনা
জানার উপায় নাই। কোদালের আঘাতে
ক্ষতবিক্ষত করছি মৃত্তিকার রুক্ষ বুক।
আমি মৃত্তিকা বিজ্ঞানী নই, তবে মাটির
সাথে সখ্যতা আছে। কৃষকের সন্তান।
ভাগ্যগুণে কিংবা অভিশাপে পরবাসী।
পরবাসের বন্ধ্যা সময়ে গাঁয়ের জমিন
ডাক দিলে কৃষকের রক্ত নেচে ওঠে,
মনে হয় ধানবীজ হয়ে জমিনে পোঁতে যাই।
কৃষক পিতার উর্বরতা শরীরে বর্তায় নি,
বন্ধ্যা মাটি আমাকে অস্বীকার করে।
অভিশপ্ত জীবনে মাটির সখ্যতা নসিব
হয় না, সৌখিন ফুল অধরা থেকে যায়।
ফুল চর্চায় ক্ষান্ত দিলে কৃষক পিতার
গায়ের গন্ধের জন্য মন আকুলিবিকুলি
করে। অনেকদিন হয় পিতাও পরবাসী,
কান্না ছাড়া কিছু কৃষক পুত্রের নসিবে নাই!

নিঃস্ব হতে হতে যে খুঁজে পায় মাটি
তাকে বাংলাদেশ বলা যেতে পারে।
পতনে পতনে যে উত্থানের স্বপ্ন দেখ
তাকে বাংলাদেশ বলা যেতে পারে।
আড়ি দেয়া বালিকা পুনরায় বন্ধুত্বের
আহ্বান জানান। গোস্বার প্রেমিকা
গোধূলি বেলায় পাঠায় নীলখাম।
মায়ের অভিমানী পুত্র ফিরবে না
প্রতিজ্ঞা ভুলে ফিরে মায়ের আঁচলে।
ঘরে ফিরে সন্ধ্যার কাক, এঁদো ডোবা থেকে
ফিরে পাতিহাঁস। মুখস্থ পাঠ শেষে
মৌরলা ঝোলে তৃপ্তির ঘুম ডাক দিলে
কাঁথাঘুম ইশারাকে বাংলাদেশ বলে।
ভোরের সমুদ্রে জেগে ওঠে সূর্য, আশার
আলো'কে বাংলাদেশ বলা যেতে পারে।
একুশের মাঠে ঝরানো রক্তের নদী
মা ডাক-কে বাংলাদেশ বলা যেত পারে।

আমার আদিগন্ত মাঠে তোমার ঢেউ,
একলা নৈসর্গে উঁকি দিয়ে যাও।
বৈরাগ্য নিয়ে দেখেছি পিছু পিছু
তুমি আছ। জগৎ-সংসার ক্রমেই
তুমিময় হয়ে উঠছে, নিস্তার নেই।
একদা আমার নিজস্ব জীবন ছিল
মাছের স্বাধীনতায় ঘুরে বেরিয়েছি
খাল-বিল। ভাবুক পাখির ডানায়
কতরাত আকাশ ছুঁয়েছি। একলা
জ্যোৎস্নায় মেতেছি ঝিঁঝি খেলায়।
সবকিছুই বিদায় নিয়েছে। বিদায়
নিয়েছে মন খারাপের মেঘ। উদাসী
বাতাস হঠাৎ জেঁকে বসে না।
সবখানেই তোমার দখলত্ব। নিজের
বলে কিছুই রইল না। আফসোস!
না নেই! তোমার সাহচর্যে দিন কাটছে,
মন্দ কাটছে এটা বলা যাবে না।

এই যে ছাপিয়ে যাচ্ছেন,
এই যে পিছে পড়ে রয়েছি,
কষ্ট হচ্ছে! মোটেও না!
আপনার অতিক্রমে মোটেও
ব্যথিত নই।
আপনার সামনে প্রশস্ত সিঁড়ি
ফলবান বৃক্ষ আপনার সহোদর।
অভিজাত পাড়ার ললনারা
আপনার সঙ্গ পিয়াসী। উড়ছেন,
আকাশ প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছেন।
উড়ুন, উড়তে থাকুন,
আপনার ঊর্ধ্বগতি
আমাকে আহত করে না।
শুধু খেয়াল রাখবেন,
ধপাস, পড়ে যাবেন না।
পড়ে গেলে খুব দুঃখ পাবো।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান