কবিতাগুচ্ছ । চন্দনকৃষ্ণ পাল
কবিতাগুচ্ছ । চন্দনকৃষ্ণ পাল

১.

বিষণ্ন তিথিগুলো-২

ঘরপোড়া মানুষেরা দুপায়ে ধুলো মেখে ধলাই নদীর পাড়ে কমলপুরের মাটি আঁকড়ে ধরে আর জল ফেলে দুচোখের,সব লোনা জল।মন্দিরে পুরোহিত অসহায়,তার চোখেও বিষণ্নতার হাতছানি।নাট মন্দিরে কতো মানুষের হাহাকার সকাল সণ্ধে থেকে রাত্রি অবধি।রেশনের লাইন দেখে হতাশ শিশুটিও করুণ আর্তি রাখে দুচোখের কোণে।মন্দিরে বোমা ফেলে উদ্বোধন হয়ে গেছে সেই সে সকালে।সিএসডি গুদামেরও দরোজাটা খোলা।যার যা ইচ্ছে তুলে নেয় হাতে।আনন্দ উৎসব আহা এমন দিন কী আসে যখন তখন!
শুকনো দুচোখে,ক্লান্তির মেঘ নিয়ে মাঠের কোণের এক ইটের চুলোয় রুটি সেঁকে মধ্যবিত্ত নারী।মলিন কাপড়ে,ততোধিক মলিন দুচোখে,থমথমে শহুরে আকাশ দেখে দীর্ঘশ্বাস রাখেন বাতাসে।বাস্তুচ্যুত শরণার্থী কালতিথি গুনে গুনে চোখ বুজে আগুন দেখেন।

২.
বিষণ্ন তিথিগুলো-৩

তোমাদের মুখের রেখায় ক্যামোফ্লেজ-
বুঝতে পারিনি আগে,এখন তো বুঝে আর লাভ নাই কোন!

স্বপ্নরা ডুবে গেছে কোন সে অতলে
বুকের ভেতরে শুধু আছে বুদবুদ
তারাও মিলিয়ে যাবে,মিলিয়ে যাওয়াই ভালো
কষ্টের বুদবুদ কষ্ট দেয় আরো
নীলের পরিধি বাড়ায়,আনন্দ তিথিতে রাখে অমাবশ্যা রঙ।

তোমাদের হাসির রেখাগুলো
অন্য এক মানচিত্র তৈরী করে শুধু
আমি তো সেইখানে ছিটমহলই দেখি
আমার প্রকৃত ভূ-খণ্ড আজ গৃহবন্দি বিষ নজরের কাছে
আহা পবিত্র ভেবে ভেবে অর্ঘ্য দিয়ে সারাদিন
সন্ধ্যায় এসে দেখি চাঁদের অগস্ত্য যাত্রা!
তিথি ভুলে হেঁটে যাই আঁধারের পানে।

তোমাদের মুখের রেখায় শুধু হাসি ফোটা দেখি
আমার সর্বনাশে তোমাদের হাসি আরো প্রস্ফুটিত হয়।

মা ও বাবার স্পর্শ নাই, তাই সব আঁধারে বিলীন।

৩.
বিষণ্ন তিথিগুলো-৪

সব দানা খুটে খুটে তুলে নিয়ে শূন্য করো অনন্তের মাঠ।

পাখিদের বিষণ্ন মুখ চোখে ভাসে
দীর্ঘ পরিক্রমার পর স্বপ্ন ভেঙে গেলে
বাষ্প জমে বুকের গভীরে-
সে বাষ্প অদৃশ্য হতে হতে ক্ষত আরো বাড়ে,
রক্ত ক্ষরণ হয় বেশি।

তোমরা যারা ভবিতব্য জানো
তারা তো সংকেত রাখোনি কোথাও
কী করে তাবৎ ঘটনার সমাপ্তি ঘটে
এই জ্ঞান শূস্য হলেকোন রেখা এঁকে আমি নিজেকে
প্রস্ফুতি করি?

ছকের বাইবে সব চলে গেলে
থাকে শুধু শৈত্য প্রবাহ
উষ্ণতার অভাবেই হৃদস্পন্দনের গতি নেমে আসে নীচে
সবাই তাকিয়ে দেখে রক্ত প্রবাহ-

সীমাহীন ক্ষরণেও কাউকে পাবে না তুমি
যে উষ্ণতার বন্ধনে তোমাকে জড়াবে!

৪.
বিষণ্ন তিথিগুলো-৫

খুব ছোট ছোট ছোট ভুল দেখে আজ তুমি
বড় শব্ধে পৃথিবী কাঁপাও।
আমি তো অবাক হই,প্রতিবেশিরাও-
তারা তো দেখেছে ক্রান্তিকাল
তারা তো দেখেছে উত্তরণ
কী করে মহীরুহে ফিরে এলো পত্র-পল্লব
সাক্ষী থেকেও তারা নিরবই থাকে
ব্যক্তিগত লাভালাভ না থাকলে আজকাল
বন্ধনে জড়ায় না কেউ।

সেই দিন ফিরে গেছে অনন্ত কালের কাছে,
দূর থেকে দেখে তার অশ্রুমোচন-
আমিও ভাবি আজ
ভুল দরোজায় কতো রেখে গেছি ফুল
অর্ঘ্যকে পাওনা ভেবেছে-
উপভোগ করে গেছে সকল উষ্ণতা
আজ শীতল দিনে দেখো সে কাছে নাই।

ভবিতব্য না ভাবলে ভবিষ্য তহবিল শূন্যই থাকে।

৫.
বিষণ্ন তিথিগুলো-৬

ফুল জল বিল্বপত্র আর অন্য সব উপাচারও সংগ্রহ করেছি
তালিকার সব কিছু জড়ো করে রেখে দেখি পুরোহিত নেই!

তিথি তার পথে চলে-
আমি থাকি হাহাকার নিয়ে
আয়োজন পড়ে থাকে অবহেলার সঙ্গী হয়ে
নব তিথি নিয়ে মাতো তোমরা স্বজন
পুরাতনে বিশ্বাস নেই
জেনে গেছো পুরাতন ভঙ্গুর,প্রাণশক্তিহীন
ঝুরঝুরে করে গেছে শতঘুণ পোকা
শুধুই কাঠামো আছে,ভেতরটায় শূন্য হাহাকার।

প্রাণ পাখি থাকলেও
ডানা মেলে চলে যাবে উড়ে,তারও প্রস্ততি সারা
কে দেবে এক ফোটা জল
ওষুধের শেষ ফোটা গলাধকরণ আর হলো কই বলো?

উৎসব শেষ,ঘন্টাধ্বনির রেশ শোনা যায় না তো
আলো ঐ পড়ে এলো
আঁধার ঐ এলো বলে শীত সন্ধ্যার।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান