তিনটি কবিতা ।। সমরজিৎ সিংহ
তিনটি  কবিতা ।। সমরজিৎ সিংহ


১.

বৃষ্টি পড়িতেছে । এই দৃশ্যে, সে নিজেকে ভাবিতেছে, 
স্নাত, তাহার পিপাসা ক্রমে মিটিতেছে ।
এই পিপাসা দেহের । চারিপাশ স্তব্ধ ও নিথর ।
অভ্যন্তরে জলধারা তাহার শরীর
সিক্ত করিতেছে । অথচ কিয়ৎক্ষণ পূর্বে তার
দেহ আতুর হইয়াছিল ।

বসন্ত আসিলে, শরীরের ইচ্ছাগুলি, কেন জানি,
প্রাণ পায় । স্বামীর মৃত্যুর পর, শরীর মরিয়া
গিয়াছিল । ইচ্ছাকেও ধামাচাপা দিতে
কসুর করে না । এই বসন্ত আসিয়া,
এই পলাশ ফুটিয়া ধরাইয়া দিয়াছে আগুন ।

বৃষ্টি পড়িতেছে বাহিরে । ঘরে সে, বিছানায়, ক্রমে,
ভিজিতেছে । এক্ষণে বালিশ ভিজিতেছে ।

২.

ছাই হয়ে যাবার পর যা থেকে যায়  :
ভাঙা কলসির টুকরো, ধান ও দুর্বা, দীর্ঘশ্বাস,
রাত্রি, নদী, স্তব্ধ শ্মশানের গায়ে লেগে থাকা গন্ধ । 

শ্মশানবন্ধুরা ফিরে গেছে তার আগে ।
থাকলে, দেখত, বসে বসে জ্যোৎস্না কাঁদছে  
তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছে অতিপ্রাকৃত
এক অন্ধকার । বলছে, যে গেছে চলে
তাকে গর্ভে ধর দশমাস ।

৩.

এত অপমান, এত সব নুন হজম করেছ, গঙ্গাজল,
একটা বজরা দিয়ে বয়ে নিতে পারবে না তোমার সুষমা ।
এত দরদ উথলে ওঠে নগরের, ও প্রান্তিক, ভেসে যেও
ডিঙি নৌকো করে আলোর অপেরা থেকে বহুদূরে
তোমার পলাশ বনে । চলে যেও, একা, মউতোড় ।
বাউড়ি পাড়ার মেয়ে, নাচ দেখ, বাবুরা এসেছে,
তোমাদের নিয়ে যেতে ছট পরবের ঐ মেলায় ।
চুড়ি কিনে দেবে । তারপর...

তারপর, বাবুদের লিয়ে গল্প হবে, সিনেমাও ।
তুমি ঝরাপাতা, গঙ্গাজল...
নগর শুদ্ধির, বেলুনের তুমি অপু ও দুর্গা ।

এত আলো কি করে সইবে অন্ধকার ?


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান