দশটি কবিতা । রজব বকশী
দশটি কবিতা । রজব বকশী

Π বিবেচনা

মশা আর মশারির লুকোচুরি খেলা
এছাড়াও আরও আছে
ব্যাট, স্প্রে ও কয়েল
পথে পথে কত বাধা বিঘ্ন ফণাময়
প্রতিরোধ নাকি প্রতিকারে পা বাড়াও?
বিবেচনায় সোপর্দ সময়ের ঢেউ

Π জল গড়িয়ে সুরের মোহনায়

ডাকে আনন্দ উৎসব বৈপরীত্যে ব্যথার পাহাড়
আমার পায়ের নিচে ঝর্ণাধারা টগবগ ঘোড়া
ছুটছে প্রমত্ত ঢেউ
এই বুকের ভেতর বিক্ষিপ্ত পাথরগুলো জলনৃত্য করে
জল গড়িয়ে সুরের মোহনায়
জলের আগুনে কথা বলি লিখি আঁকি
দীর্ঘশ্বাসের বিচ্ছিন্ন হাওয়া পালক
মনোবীণায় আবহ সঙ্গীতের মত বেজে ওঠে
বরফ থমকে ফ্রিজ হয়ে উঠি
পরিতাপের প্রণয় মোম গলে পড়ে
স্বর্ণালি সময়চূর্ণ কখনো ফিরে না
কেবলি ঝলসে ওঠে
স্মরণবেলায়
Π ইতি

কুয়াশায় ঢাকা ভোর সকাল দুপুর
ফেলে এসেছি অনেক দূর
এখন বিকেল ছুঁই ছুঁই
পতিত রইল কত ভাবনার ভূঁই
কত কথার সুরভি বাতাসে ছড়ায়
মেঘলা আকাশ চোখ রোদ্দুরে শুকায়?
সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে শেষ চুম্বন প্রহরে
এই জীবন নদীর ঢেউ না জানি কখন
ওই দূর সমুদ্রকে আলিঙ্গন করে
Π আত্মজ্ঞান

বন্দীত্ব মানে না কোন জীবনের ঢেউ
ভেঙে উপড়ে অস্তিত্ব প্রজ্ঞাপিত করে
রাতের আঁধার ছিঁড়ে ভোর উঁকি দেয়
মাটি কংক্রিট ফাটিয়ে বীজাঙ্কুর জাগ্রত ফলক
প্রতিটি আঘাত প্রতিঘাতে ফিরে আসে
তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবেক অন্ধের হাতি দেখা
কষ্টের ঝিনুক মনে আরাধনা আলোমুখি করে
গল্পের দৈত্যেরা বারবার ফিরে আসে
ভাঙে স্বপ্ন ভাঙে মন দীর্ঘশ্বাস ফুরাবার নয়
যদিও বা ভাবনার সব কুঁড়ি ফুটতে পারে না
চেনাজানা পথে মতে অন্ধকার ফণা তোলে আছে
অথচ জীবন মানে আলোকিত প্রণয় নির্ঝর
চৈতন্যে আকাশ ডানা হৃদয়ে মাটির ঘ্রাণ সুজলা সুফলা
Π পরিক্রম

একা অথবা তোমার সঙ্গে এই দীর্ঘ পথহাঁটা
চাকায় পাখায় ছোটে বেড়াই সতত
মেঘ আমাকে বৃষ্টির মন্ত্র বলে যায়
বৃষ্টি তো সৃষ্টির উৎস
সৃষ্টিমূলে আলোমুখি জীবনের ঢেউ
সময় আমাকে জন্ম দিয়ে ফেলে যায়
উঠে দাঁড়াই আমিও পূর্বসূরিদের মত
চাহিদা যোগান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি
ক্ষত বিক্ষত অনেক ইচ্ছে আশা স্বপ্ন দীর্ঘশ্বাস হয়ে উড়ে
তবু জীবন গোছাতে পিছপা হই না
জল আগুন ধূয়ায় ধূলিস্রোতে জেগে থাকি শূন্যে উড়ে যাই
Π পরিতাপ

বিস্তৃত আয়না দাঁড়ে সময়ের ঢেউ
আকাশ দেখিয়ে দেয় রোদ জোছনায়
চারদিকে অন্ধমোহ মেঘ কুয়াশার ফণাধর ফুঁসে ওঠে
প্রফুল্ল সময় সীমা লঙ্ঘনের থাবায় তৎপর
অথচ দুঃখের দিন রেললাইনের কথা বলে
সময় ঘোড়ায় চড়ে সঙ্গে চাবুক লাগাম আর সমাদর
রক্তাক্ত হৃদয় নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে অসহায় জনক জননী
নির্লজ্জ কুকুর এই সময়ের চোখে উঁকি দেয়
তবু প্রণয় বিছিয়ে জেগে আছি ভবে অনুভবে
Π মাছ

জলে মাছ
আমি ডাঙায় মনের মধ্যে ডুবে আছি
মাছ আর জলাশয় একাকার হয়ে জেগে থাকে
জোয়ার ভাটার মধ্যে ভিন্নমাত্রা প্রস্ফুটিত করে
নানান ভাবনা নিয়ে গুপ্তলীলায় আমিও থাকতে পারি না
কেননা আমার মধ্যে ভিন্নতর মাছ ডুব সাঁতরে বেড়ায়
যা আমার দেহমন চৈতন্য প্রবাহ হৃৎপিণ্ড স্পর্শ করে
কত সোনালি রূপালি মাছের মতোন স্বপ্নগুলো উঁকি দেয়
আনন্দ বিষাদে থাকা দিনরাত ঘাই মেরে যায়
তিনটি প্রেমের কবিতা।

Π ঝরা পাতার নুপূর

প্রজাপতি দিনগুলো দ্রুত চলে যায়
ময়ূর ময়ূরী নাচ মেঘে ও বৃষ্টিতে
আমরা যে যার মত হেঁটে যেতে পারলাম কই?
ঝরা পাতার নূপুর বাজিয়ে কে কোনদিকে গেল
বাধায় রাধার দশা
প্রত্যহ কৃষ্ণের বাঁশি দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেজে ওঠে
যায় না কদমতলা দিয়ে আর যমুনার তীরে
এই বুকে বয়ে যায় অগণিন ঢেউ
ঢেউয়ে আছড়ে পড়া প্রতিটি জলের ফোঁটা কৃষ্ণ কৃষ্ণ করে

Π সম্রাজ্ঞী

সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলাতে থাকে
নানা প্রকার আগুন জ্বলে ওঠে
জলের বিবিধ রূপান্তর
ধূলিস্রোতে একাকার পদচ্ছাপ
হাওয়ার কারসাজি প্রকৃতির রূপসজ্জা করে
প্রকৃতি হৃদয়ে এসে দোলা দেয়
আমার হৃদয় সিংহাসনে সেই তুমি বসে আছো
জল আগুন হাওয়া এইখানে অভিসার করে
অথচ তোমাকে সিংহাসনচূত করতে পারে না

Π রাত্রি

দিনের ঔজ্জ্বল্য খসে রাত্রি নেমে আসে
রাত্রি আমাদেরকে ঘনিষ্ঠ করে
পরস্পরের আয়না চোখে নেশাঢেউ
চঞ্চল শরীর সেতো উপলক্ষমাত্র
চুমু আর আলিঙ্গনে মনের জংশনে ফিরে কেউ


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান