নীহার লিখন'র কিছু কবিতা
নীহার লিখন'র কিছু কবিতা

কবি:নীহার লিখন

রাখালের ঘাঁস খেলা

বিস্তারিত জানার পরে ঘাঁসের আড়েতে ফুটিতে চায় না আর অভিমানি ফুল;মেটে কালারের একটা মেয়ের পাশে শালিক কয়েকটা চলে যায় ছড়িয়ে খয়েরী রঙ কলাবতী-অন্ধকার ঝোঁপে।

ঘাঁস কাটারি লোহার পাউন বিদ্রোহ করলে
ভাদ্দরমাসে কুকুরের লেজ খুব লোমশ হয়

ওদিকে হাম্বা হাম্বা ডাকে পৃথিবীকে অফসাইড করে দেয় কামধেনু ঋষির তপস্যা;সন্ধ্যা এসে যাচ্ছে...
এখন টের পাওয়া যাবে ঘাঁসের বিদ্রোহে মানুষ আর গরুদের বাটার্ড সিস্টেমে কতোটা গলদ নিয়ে প্রতিদিন দৌড়ে যাচ্ছে জিডিপির হিসাব

যদিও লালাগ্রন্থি খুব বিটকেলে একটা লজ্জাবতী ফুলের লোভ দেখিয়ে রাখালকে প্রতিদিন মাঠে টেনে আনে;সন্ধ্যার প্রাক্কালে ঘাঁস কাটারি ছুড়ে যে খেলায় প্রতিপক্ষের কাছে সর্বস্ব খুয়ে গোহালের কাছে এসে শুন্য খাঁচায় ফিরেছে, সে কি আর ফিরতে পারবে কোনোদিন!জিডিপি কি এর উত্তর দিবে খুব স্পস্ট করে তাকে!সে বাশি শুনে শুনে একটি খেলায় সন্মোহনের সব ঘাঁসের ডগায় চুমু দিয়ে হেরে গেছে
এ অপরাধের কি সাজা কন্সটিটিউশনে, তা কি সে জানে!

প্রাচীর

আমার এক বন্ধু খুব মিউচুয়ালি আমাকে অবন্ধু করে চলে গেলেন একদিন, বললেন আমাদের বোধহয় অবন্ধু হয়ে যাওয়া উচিত

সেইদিন থেকে আমাদের আর কথাটথা নাই মুখদেখাদেখিও থেমে গেছে
আমাদের প্রাচীরগুলোতে কেউই আর আসি না রোদ দিতে আমাদের খুব চেনা কাপড়চোপড়গুলোয় বা অন্য অনেক শীতলতায়। আমাদের কাছাকাছি রান্নাঘরের ব্যঞ্জনঘ্রান ক্রমেই অচেনা হয়ে যাচ্ছে, এমনকি অভিন্ন ছাদরোদ,উঠানের তারের পাখিগুলোকেও ইদানীং আলাদাই লাগে।আমাদের উভয়ের প্রতিবেশীদের ঘরবাড়িগুলোও যেন আগের মতো নাই, যেখানে প্রায়ই সে এবং আমি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যাই, যেতে হয়।তখন আমাদের দু'জনের ক্রমশ লীন হয়ে যাওয়া সবকিছু আমাদের প্রতিবেশীদের চোখ মুখ আর কথায় সরোব হয়ে যায়, এবং ক্রমশ ঘর থেকে ছড়িয়ে পড়ে, এবং
এভাবেই সেসবকিছুই যেনো আমাদের পৃথিবীর অবন্ধু প্রাচীরগুলোতে বা জমিনে নিত্য আসে যায়, যেহেতু একটা পৃথিবীই আমরা প্রতদিন ভাগাভাগি করে বেঁচে আছি

পঞ্চক

আমার আমিত্বের ভিতরে তুমি একটা প্রবল ঘোড়া
এবং তা প্রায়ই আমি হয়ে ছুটছি ছুটছি, ছুটি
এখানে কোনো পথের সীমায় নেই কাঁটাতার কোনো
দাদারা টিপে না রিমোট, বিরোধীদল ডাকেনা হরতাল, সরকার চাপে না ইচ্ছার টুটি

তারা বলছে, তাদের খামারই প্রিয়
বাগান ভালো না তেমন
উপরওয়ালাও বোধহয় এমনই চায়
তাই এক রংয়ের ফুলই
প্রবলে বাগানের বেড়া খেয়ে যায়

ইদানীং আমার স্মৃতি থেকে তমালের ছায়া খুব নিভৃতে সরে সরে যায়, চুপচাপ পড়ে থাকে করাচের ঝোপ...
বদলে সারাদিন উট এসে লেদায়,
জাবর কাটে বখতিয়ারের ঘোড়ার জংধরা জিভ; এনিমিয়ার মাটিতে ধপাধপ সুর তুলে সামছুর কোপ...

সব কিছুরই দিনে দিনে বাড়ে দাম
সব কিছুই আকাশের উপমায় যায়
কেবল আমারই কোন মার্কেট নাই
সন্ধ্যায় ডাস্টবিনে ফেলে যায় চাষী
কেবল আমারই নেই ভালো কোনো নাম
মোড়কের এ বাজারে খুক খুক কাশি

আমাকে ওরা বলতে দেয় না
পাছে যদি সবটা বলে ফেলি...
তাই গ্যাস,বিদ্যুৎ, জলের হিসেব মাথায় নিয়ে
বউয়ের বুকের সাথে নিজের অপারগতা রাতের আধাঁরে খালি ডলি

আমার বউটা খুব জলি

সুইসাইড

এই যে আয়নার সামনে যাই, ফিরে ফিরে আসি
প্রতিদিন, সেখানে ছোটো ছোটো সুইসাইড নোট ফেলে রেখে আসি।এবং সবচে বড় সুইসাইড নোটগুলো মানুষের চোখেই রাখা, যা চলমান এবং স্বয়ংক্রিয়
একবার মরন্ত বিকালের পড়ন্ত নদীর জলের কিনাড়ায় মুখ রেখে দেখেছিলাম আমার মতো অনেকেরই সুইসাইড নোট পড়ে আছে

প্রত্যেকটা সুন্দরেই এমন সুইসাইড নোট ফেলে রাখা থাকেই, একসময় যা এনোনিমাস কবিতা হয়ে যায়

শশীলজ


জমিদার চলে গেছেন।নাগলিঙ্গম গাছ, পাথর ঘাটলার সব পুকুর ফেলে,অজস্র ফুলতোলা দেয়ালে কমনীয় রমণীর শরীরের ছবিগুলো ফেলে, তার আয়েশী মুদ্রাদোষে আগাছার মতোই জমেছে কতোই না কিংবদন্তি

শহরের আটপৌরে মানুষগুলো এখানে আসেন ,মেলাতে চান অনেক হিসাব, হয়তো মনে মনে খোঁজেন নাঁচঘর,সুরাপোহানো রাতের সুডৌল শরীরের বাঈজিদের কাচুলির হুক

প্রতিদিন তারা আসে বিস্ময় নিয়ে, বিস্ময় নিয়েই ফিরে ফিরে যায়, দিনে দিনে এভাবেই অজস্র জমিদার ফিরে ফিরে আসে, দিনে দিনে এভাবেই বহু শশীলজ পড়ে পড়ে থাকে


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান