মাহবুব বারী ।। পাঁচটি কবিতা
মাহবুব বারী ।। পাঁচটি কবিতা
নারী

আমাকে ভোলাতে চায় নারী, রূপে লাবণ্যে।
ভুলি কিন্তু ভুলিনা, তবু তার
সমস্ত অপরূপ দিয়ে ডাকে, যেন আমি
তার চরণের নিচে ঘাসের মতো জন্ম নিই,
মৃত্যুবরণ করি, আবার জন্ম নিতে থাকি -
এইভাবে
কিন্তু আমি যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি
তাকে প্রতিদিন কল্পনায় আমি নিজেই রচনা করি-
আর একজন আছে, যার জন্ম এখনো হয়নি।

বিথী

বিথী, কনের মতোই সেজেছিলে, অন্যের সমস্ত অলংকার পরে
বিকেল গেছে সজ্জায়, সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে কোনো
মন নেই, বইয়ের ওপর যখন হাত, তখন আরেকজনের হাতে
হাত পড়ে, কেঁপে উঠেছিলে, বাইরে তখন উথাল-পাথাল বাতাস
বাতি নিভে গেছে, অন্ধকারে এমন সময় কার না বুক কাঁপে
শিহরনে এক শীতল উত্তাপ বুকের উপর থেকে নিচের দিকে.....
কাঁপছিল দূরের গাছপালাও, হু-হু করে বাতাস ঢুকছিল ঘরে,
তোমার কালো চুল অন্ধকারে বিদ্যুতের মতো গন্ধ ছড়ায়—
এখন বাতাস নেই, সবকিছু শান্ত, পড়ার টেবিলেও কেউ নেই,
যে কম্পন এতক্ষণ কম্পাসের কাঁটার মতো ঘুরছিল এদিক ওদিক
এখন তা স্থির হয়ে গেছে, উত্তরে দক্ষিণে ।

সময়

১. সময়ের সঙ্গে ধরি না পাঞ্জা, বন্ধু
সে তো হাওয়ার মতো
কোথা দিয়ে যায় সে
আর কোথা দিয়েই বা আসে, জানে না কেউ
তারে দেখি না উপরে-নিচে সামনে-পেছনে কোনোখানে
সময়, সে তো চলে সময়েরই সাথে।

২. জীবনের ক্ষত যায় না বন্ধু, কোনোদিন
শত জীবনের হিসাব কষো,
দেখবে, একটি ক্ষত সারিয়ে,
এই সময়ই আবার সৃষ্টি করে নতুন ক্ষত ।

৩. সময়ের কাছ থেকে কোথায় পালাবে বন্ধু,
কোনখানে কোন সুদূরে, যেখানেই যাও
আবার ঘুরে-ফিরে আসবে সে সময়েরই কাছে একদিন
এই লুকোচুরি মানুষ তো করে জানি নিজের সঙ্গে চিরদিন।

৪. সময়কে তুমি ছুড়ে দিয়েছ একটি বলের মতো,
তারই খেলা দেখছি সকাল-বিকাল।
হে ঈশ্বর, সময় কী?
হে ঈশ্বর, কীভাবে সময় চলে যায়?
হে ঈশ্বর, কীভাবে তার দেখা পাব আমি?
এই তো কিছুক্ষণ আগে বাদশা সোলায়মান জীবিত ছিলেন
আর এরই মধ্যে তিন হাজার বছর পার হয়ে গেছে!

বিভ্রম

শান-বাঁধানো ঘাটে বসে আছে একজন।
দৃষ্টি নিবদ্ধ পুকুরের জলে ।
আমরা চার জন দূর থেকে দেখছি—
জল কেমন করে জলের সাথে মিশে আছে।

মানুষ কেন পারে না? এই কথাই
ভেবে যাচ্ছে শুধু— একজন বলে উঠল।

অন্যজন বলল, এমন হতে পারে ব্যর্থ প্রেমিক
কোনো, হৃদয়ের ক্ষত যদি দূর হয়
এইখানে বসে থেকে, নির্জনে, নিরালায়— এই আশা ।
সংসারের জটাজাল ছিন্ন করে কীভাবে
পালাবে— তৃতীয় জন বলল ।

আমি বললাম, না— কবি সে, পুকুরের
জলে নিজের ছায়া দেখছে।


পায়ের ছাপ

কেউ না কেউ রোজ আসে-
টের পাই ।

প্রতিদিন ভোরবেলা দরজা খুলে পায়ের ছাপ দেখি—
চোর নাকি ডাকাত
কোনো গুপ্তঘাতক নাকি অন্ধ প্রেমিক কোনো ।

ভালো করে দেখি খুঁটে খুঁটে
বুড়ো আঙ্গুল থেকে কনিষ্ঠা পর্যন্ত
দীর্ঘ না হ্রস, মোটা না সরু
ভালো করে দেখি গোড়ালি ও গড়ন
আর বয়স কত হতে পারে।

কেউ না কেউ রোজ আসে
আমার অজ্ঞাতসারে আমার ঘরের দরজায়
না— কোনো ডাক নেই, টোকাও দেয় না ।
শুধু পায়ের ছাপ দেখে টের পাই।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান