মোজাক্কির খান এর ৫টি কবিতা
মোজাক্কির খান এর ৫টি কবিতা

কবি :মোজাক্কির খান

অবতারণা

 

প্রতিটা ভোরই বিকশিত হয়

নিষ্কলুষ গোলাপের মতো

সৌরভ ছড়ায় এ-ভুবনকুঞ্জে

সমস্ত আঁধার হয় বিদূরিত

 

প্রতিটা সূত্র প্রতিফলিত হয়

ছায়া-মায়া-কায়ার সূত্রে

ভাবিয়ে তুলে ডুবে অতলে

প্রথা-কুপ্রথা ভেঙে একত্রে

 

প্রতিটা প্রহরই যাপিত হয়

ভিন্নভিন্ন ধ্যান-ধারনায়

তার পানেতেই ছুটছি আজ

প্রেম-প্রীতির অবতারণায়

 

প্রতিটা রাতই ভূমিষ্ঠ করে

কুসুমপেলব একটি সূর্য 

রাঙিয়ে তুলে সাতআসমান

শাদাকালোতে চলে রণতূর্য

 

প্রতিটা মানুষ ভাবান্তরিত হয়

ভুলতে চেয়ে তিক্ত অতীত

গড়ে তুলে নতুন এক ভুবন

সমীকরণে বিশ্বাসের ভিত

 

তুমি এলে


 

এইতো তুমি এলে

যেভাবেই বললাম আমি

ঠিক সেভাবেইথথথথ

জনারণ্য এড়িয়ে

পাহাড়পর্বত পেরিয়ে

যেভাবে তুমিও বললে

ঠিক সেভাবেই যেন এলে

 

তুমি এলে,

হাওয়ার মতো শনশন করে

সব বাধা উপেক্ষা করে,

ছিল না কোনো মান-অভিমান

না ছিল কোনো দান-প্রতিদান!

সেভাবেই তুমি এলে আমার ভুবনে

প্রভাতের প্রথম আলোর মতো

দূর করে আঁধার যত

 

বিশ্বাস ছিল তুমি পারবে!

ইচ্ছেগুলোকে শক্তি করে

সাহারা মরু অতিক্রম করে

অশ্বারোহী কোনো সিপাহীর মতো

নিয়ে আসতে একটুকরো পৃথিবী

জয় করে ওই গগন-রবি

 

তুমি পারবে

সেদিনই মনে হয়েছিল যেদিন দেখেছিলাম

তোমার নেশাভরা ওই দুটি চোখ

মৃগের মতো সুতীক্ষ্ণ চাহনি

চঞ্চল হৃদয়থথথ

আর আমি ভাবাবেশে হারিয়ে গিয়েছিলাম

হাজার বছর পুরনো কোনো এক স্বপ্নপুরীতে৷

 

 

ব্যবচ্ছেদ

 

একই শব্দ

অথচ বাক্যভেদে ভিন্ন অর্থ

একই ক্ষত

কোনোটা কুয়া;কোনোটা গর্ত ৷

 

একই মানুষ

অথচ হরেকরকম বর্ণ

একই সভাসদ

কেউ অবহেলিত;কেউ বরেণ্য!

 

একই পৃথিবী

অথচ হাজারও ধর্মের মতভেদ

একই রবি

আলো-তাপ বিকিরণে কত ব্যবচ্ছেদ

 

একই চাঁদ

অথচ শুক্লপক্ষ কৃষ্ণপক্ষে বিভক্ত

একই প্রকৃতি

ভাঙাগড়ায় সদা নিযুক্ত

 

একই আকাশ

অথচ হাজারো রঙের আধার

একই পাতাল

আগুন পানির শত দ্বার

 

একই স্রষ্টা

অথচ ভিন্নতর বিশ্বাস

একইভাবে আসা-যাওয়া

একইভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস ৷


এক পেয়ালা প্রশান্তি


 

দরজা খুলে দাও

পশরা সরিয়ে নাও

দীর্ঘ চব্বিশটি বছর বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে

বড্ড ক্লান্ত আমিথথথ 

আমাকে ভেতরে আসতে দাও৷

 

কোন ভাবনায় ছলছল আঁখি

আবেশে উদ্বেগে যেন মাখামাখি,

একি তবে অভিমান

নাকি উপেক্ষা?

লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে সে ভুল ভেঙে দাও৷

 

তোমার এই চাঁদমুখে

বেদনার ছাপ কোন-সে শোকে,

ভাঙো এই মৌনতা

হটিয়ে বিষণ্ণতা

প্রফুল্ল বদনে একপেয়ালা প্রশান্তি দাও

 

হাত রাখতে দাও কোমল দুটি হাতে

গ্রহণ করো এই প্রসন্ন-প্রাতে,

যেটুকু সময় গিয়েছে;যাক

এবার এই ঝড়কে থামাও!

 

নির্মম বাস্তবতা সচক্ষে দর্শে

বহুরূপী পৃথিবী এসেছে স্পর্শে,

জীবন তবু জীবনের দাবীতে

তুমিও এসে হাত মেলাও৷

 

আমার যত অসম্পূর্ণতা

পূর্ণতায় ভরিয়ে দাও

দীর্ঘ সাল-শতাব্দী শূন্যে বেড়িয়েছি

কেন যাপিত জীবনের তিক্ততা কুড়িয়ে

বেদনা কুরিয়ে জাগাও৷

 

ডাউকা নদী


 

আবারও আসছি ফিরে

সেই ডাউকা নদীর তীরে

যার কুলঘেষা গাঁয়ে জন্মেছি

শৈশব-কৈশোর তাকে ঘিরে

 

প্রাণোচ্ছল পুরনো দিন

মনের কোণে সেঁটে

শিহরিত হই পুলকিত হই

স্মৃতির ডায়েরী ঘেঁটে

 

তোমার প্রশস্তবুকে কত প্রহর

হেসেছি-খেলেছি অবিরাম

কেটেছি সাঁতার ভেসেছি ভেলায়

কখনো আসেনি ক্লান্তির ঘাম

 

চৈতালিচাঁদে জোয়ার এলে

সাজতে তুমি নবযৌবনে

নানারঙের নৌকা আসত কত

ফসল তোলার আয়োজনে

 

সারিসারি শতবর্ষী বৃক্ষ

দাঁড়িয়ে তোমার কূলে

উৎসবমুখর নৌকাবাইচে

উঠতে তুমি দোলে

 

আজ দেখি সবকিছু বিলীন

শুকিয়ে হয়েছো চর

চাষাবাদ করে বন্ধু-পরিজন

তোমার বুকের ভেতর 

 

তোমায় দেখে দু'চোখ ভিজে

হারালে কেন হে ডাউকা

কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিআকর্ষণ করছি

বাঁচতে দেয়া হোক মওকা


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান