রাজিব বাপ্পির তিনটি কবিতা
রাজিব বাপ্পির তিনটি কবিতা
রাজিব বাপ্পি মুলত ফিল্মমেকার,এক্সপেরিমেন্টের সাথে বসবাস। দৃশ্য নির্মান বির্নিমানের ভেতর দিয়ে সময়কে জার্নি করতে ভালোবাসেন। মাধ্যম হিসেবে শব্দকে নিয়ত দেখতে চান আলোর মতই যা একপ্রকার ছায়াই। তার কবিতায় শরীর খুব একটা সম্পর্কায়নে থাকে না,বরং সপ্রতিভ রাখতে চান চিত্রকে সম্পর্করহিত এক স্বতন্ত্র অবস্থানেই। তার কবিতা অনেকটাই সূতা হীন একটা স্থাপত্য কলার মতোই। 

সওদাগরের দল

খইক্ষেত, বামনগাছ – সিজোফ্রেনিয়ায় আটকে কোন গভীর টানেলের গহব্বরে ডুবে যায়। চোখ বন্ধ করে অবশ হয়ে শো শো বাতাসে মস্তিষ্কের লাগামহীন স্মৃতি ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে পড়ে থাকা কোন আহত কাককে দেখেছি মূল্যবান গালিচা বিছিয়ে সফলতার পথ পরিমাপ করতে। কিরকম অর্বুদে জমে আছে এইসব স্লো-গান-সুর। শীত এলেই স্কুলের সেই নেভিব্লু সোয়েটারের কথা মনে পড়ে যেখানে মেধাবীরা মরুভুমির ব্যাথায় ছটফট করে শকুন সকালে চাকা ঘুরিয়ে সংর্ঘষের লাল ব্যালটে পড়ে আছে। কোথাও পুরাতন ঘুটঘুটে অন্ধকারে বালুঘড়ি হাতে ছড়িয়ে পড়ছে সওদাগরের দল। সম্মিলিত সিম্ফনি বাজাতে বাজাতে জেগে উঠছে বানিজ্যের পাহাড়। সন্ধ্যায় পামগাছের ছায়া সড়ে গেলেই দেখি পুকুরঘাটের টিয়াপাখিগুলো বাতাস বুনে উড়ে,তলিয়ে থাকা মাছেরা ঝাক বেধে দৌড়ে- ঠিক যেন সূর্যাস্তের শৈশব খেলার মত তীব্র হাওয়ায় জাপটে থাকা মৃত্যু শোক।

অজ্ঞান চিহ্নে সিমেট্রি

অতীত সন্দেহের মস্তিষ্ক থেকেই চুয়ে পড়তে থাকে গন্ধরাজ। রোদের দুপুরে আমার বিছানায় শুয়ে পড়তে থাকে চিত্রকূট। তুমি অবিরত উঠান বানিয়ে হাস ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকো শিরিষ গাছটার নিচে ফুপিয়ে উঠা ধাধার মত। সারারাত চীনাবাদামের চাষ হয় কচ্ছপ গোলার্ধে। দুরাত্মায় উজ্জল শাবক ধূলায় হুচোট খেতে থাকে। বাতাসের দল চিনতে পারে না জলরং।কৌতুহল নিয়ে সুবিশাল কুড়েঘরে গোঁজে থাকতে চাইলেই রুগ্ন ফুটপাতগুলো তাড়া করতে থাকে আমাদের। সাদৃশ্যতা দিয়েই স্বভাব যুক্তাক্ষর বানাতে চেয়েছো শুধু। চারপাশে ধসে পড়া পাহাড় নীতি শাদা পাখি,অজ্ঞান চিহ্নে সিমেট্রি ভর্তি মাকড়সার জাল। খেয়া নৌকাগুলো চিরকাল খুজতে থাকে নিরুদ্দেশের নদী ধ্বনি। কোনদিন হয়তো হরিণের মূর্তির মত লিখতে থাকবো শেষ দিনলিপি।


ঈশ্বরী স্মৃতি ঠাসা মগজ

আত্মাদের অনুভব করা যায় নির্বাক বিস্তীর্ণ দুপুরে। বিষন্নতার কারণ অনুসন্ধান করা আর আনন্দকল মূলত একই। অট্টালিকার যেমন অরণ্যে যেতে ইচ্ছে করতে পারে তেমনি চিরহরিৎ অরণ্যের হিমালয়পর্বত। বেদনা তো বন্দী হয়ে থাকা আবরণ চূর্ত প্রবোধ। বাদুড় উড়ে যায় তুলার মত মেঘে চাপা পড়ে থাকে চাঁদ। ঠান্ডা বাতাসে শেওলা পড়া ছাদে শুকনা মেহগনির পাতা সচ্ছ জলের মাছের মত গড়াতে থাকে। ঈশ্বরী স্মৃতি ঠাসা মগজ। মহামারীতেও ছুটি হয় না রাতপ্রহরীর। সুপারিগাছের শরীর ঠোকরে যাচ্ছে কাঠঠুকরা। গভীরে থাকা শিকড়মূলকে যেমন সূর্যলোক দেখতে প্রাণ ত্যাগ করতে হয় তেমনি পাতাকে ও ঝরে পড়তে হয় মাটিতে।

তবে কি বোধি বৃক্ষের নিচেই তাবত রহস্য….

ধূসর কবুতরকে গিলে ফেলা যায় নি তবে শিং মাছগুলোকে গিলে ফেলা গেলো। পথ যখন আমাদের ইশারা করে তখনি বরফে জমে যেতে হয়। ঋতু পরিক্রমায় কর্মহীন জ্ঞান বৃথা হয়ে উঠে। কি নিঃসঙ্গ রাত পড়ে থাকে নগরের পান্থশালায়। আমরা অভিজ্ঞতা চাই মহামারীর আমরা অভিজ্ঞতা চাই বিশ্ব যুদ্ধের আমরা অভিজ্ঞতা চাই শান্ত রাতগুলিতে সতঃস্ফুর্ত ফড়িং এর পূর্ণতা সন্ধানের। পাইন গাছের হৃদপিন্ডে শুন্যতার বিমুঢ়তা জমে, দূর ফসলের মাঠ বনভুমি নিঃশব্দে অস্তিত্বময়তা গেয়ে উঠে।




সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান