রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ ।। পাঁচটি কবিতা
রাজেশ  চন্দ্র দেবনাথ ।। পাঁচটি কবিতা
যে কারনে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে কবি

 

কবিকে অনেকেই স্যার বলে ডাকেন

নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধ রোগ নিয়ে

কবি হাসপাতালের নীরব চাঁদ

 

কবিকে কেউ কেউ দাদা বলে ডাকেন

কবি তখন লাল পানির

লালায়িত পাখি

 

কবিকে কেউ কেউ নাম ধরে ডাকেন

কবি তখন নদীর ঢেউয়ে ভাসমান মাঝি

সূর্য গানের রহস্যময় ছায়া

 

কবিকে যখন পাড়াপড়শিরা কবি বলে ডাকেন

কবি তখন অক্ষরবৃত্তের

টিমটিমে লজ্জাবতী বিষাক্ত আচঁড়

 

কবিকে যখন ডাক্তারবাবুরা রোগী হিসেবে ডাকেন

কবি তখন নিষিদ্ধ ফুলের

ভারাক্রান্ত ছন্দের কারুকার্যময় পাতা

 

যে পাতায় কবিতা আছে,

আছে বেলেল্লাপনা জীবনের গল্প

যে গল্পে লুকিয়ে আছে

অকাতরে বীর্য পতনের সমকামী আর্তনাদ

 

কবিকে কি কেউ চেনেন?

 

কবিকে কেউ কেউ খুবই ভালো ভাবেই চেনেন

কবিকে কেউ কেউ আবার চেনেনই না

প্রাপ্ত বয়স্কের অপ্রাপ্ত লিঙ্গে

কবি যখন রাতের নক্সায়

নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধ ছায়ায় আক্রান্ত

কবি তখন তারুন্যের সৃষ্টিকে কলুষিত করে


মরাকান্নায় যখন ঘুম নেমে আসে

 

মৃত্যুর তাড়া নেই,

তবুও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মৃত্যুর যন্ত্রণা

মধ্যরাতের আত্মহত্যার নেশায় ঝুলে যাওয়া যায়,

কিংবা একরোখা বর্ণমালার ছাদে

একেঁ দেওয়া যায়

চিতা ভস্ম হরিবোল বলহরি...

 

এখানে অশান্তিকেও তাড়ানো যায়না চেঁচিয়ে

কষ্টকে কষাঘাতে দুমড়ে মুচড়ে

প্রেমিকার পিঠে ছোঁয়ানো যায় না

শীতকাতুরে বীর্যবান...

 

যে বানে একদিন মেঘের কোলে

শাখা সিঁদুরে লেপ্টে দিয়েছিলাম মৃত্যু সুখ

 

যে সুখের আর্তনাদ

বহুদিন ভুলতে দেয়নি

নির্বংশ রাতের ব্যর্থতা

 

আমি যতবারই একা থাকতে চেয়েছি

ততবারই কলকাটি নেড়ে উঠে এক বিষাক্ত আত্মা

কখনো বন্ধুবেশে, কখনো আত্মীয়বেশে

কখনো পাড়াপড়শি বেশে

কানেকানে গুনগুনিয়ে যায়

আর কত...আর কত


গালাগালি থেকে গলাগলি

 

এই জন্মতো অগণতান্ত্রিক নয়

যেখানে মধ্যরাতে কুকুরের ধ্বনি

আর গর্ভে লুকিয়ে থাকা

কলুষিত মায়া

আমাকে জাগিয়ে রাখে

তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে...

 

বেঁচে থাকার গোলকধাঁধা

আর সৃষ্টির প্ররোচনায় ক্রমশ

ললাটপটে অলিখিত প্রতিযোগিতা

 

যে প্রতিযোগিতায় সূর্যোদয়ে কবিকে গালাগালি

আর বিকেলের সূর্যাস্তের মঞ্চে গলাগলি

 

গালাগালি থেকে গলাগলির যে দূরত্ব

সবটাই ছিল আলপিনের ভেলকি

 

প্রথম পক্ষের বয়সের হাহুতাশ

দ্বিতীয় পক্ষের প্রতিবেশীর নিঃশ্বাস

আর তৃতীয় পক্ষের মাচানে টিকে থাকার নাভিশ্বাস

 

কবিতার রাশ ধরবার আগেই

কবির হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়

অস্তিত্বের ঘ্রাণ 

 

সেখানে কবিতার ছন্দ নেই

আছে কবিদের দ্বন্দ্ব শেখার কৌশল

 

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা পেরিয়ে

একটি কবুতরকে কবি ভেবে

সারাজীবন নিজেকে কবুতর ভেবে গেছি

 

আসলে কবুতরের ফাঁদেই লুকোনো ছিল

কবিকে ভাগবাটোয়ারার অপকৌশল


কান্না


এভাবে হতাশ হওয়া যায় না

রাতের বাদামি যুগ পেরিয়ে গেলে

ভাষায় নেমে আসে ক্ষুদার্ত বুলি...

 

সম্পর্কের গ্যারাকলে যতটা

আমদানি আর রপ্তানি হিসেব থাকে

বয়স ফুরিয়ে গেলে জীবন

তখন নগ্ন পায়ের আমসত্ত্ব

 

আমসত্ত্ব আসলে সমগোত্রীয় কান্না

যে কান্নায় মধ্যদুপুরে তৎকালিন প্রেমিকা

এঁকে দেবে মেঘের ঠোঁট

যে ঠোঁটে লেগে থাকবে

বিগত জন্মের ধ্বনি

যে ধ্বনিতে বাউলদের গলিতে

দুটো দেহের সংঘর্ষে

জ্বলে উঠবে মৃত আত্মার তীব্র অপেক্ষা

 

অপেক্ষার পদ্মব্যূহ পেরিয়ে

ডানা মেলতে মেলতে একদিন

সঙ্গমের ভাবনাটাও মিশে যাবে

অমাবস্যার চিতার শৈশব পাঠে


মেয়েটি চুপিচুপি শহর ছেড়েছিল

 

মেয়েটি কবি হতে চেয়েছিল

মেয়েটির ছিল ভয়,ছিল সংশয়

 

কবিতার জন্য মেয়েটি চুপিচুপি শহর ছেড়ে

চলে যায় দূর বহুদূর এক কবির আলয়

 

মেয়েটির কানেকানে কেউ বলতে শুনিনি

চুপিচুপি নয়, প্রকাশ্যে শব্দবানে বুনে ভোর

 

উত্তর থেকে দক্ষিণ, দক্ষিণ থেকে উত্তর

ভেঙ্গে দাও কবিতার সমস্ত হাড়গোড়


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান