শামীম আহমদ এর কবিতাগুচ্ছ
শামীম আহমদ এর কবিতাগুচ্ছ

কবি - শামীম আহমদ


পোষা প্রেমিকরা আজ মুক্ত


হাওয়ায় ঢেউ তুলে সুতনু রমণীর চুল

অভিমানে ওড়ে যায় শব্দহীন অক্ষর গুলো !

পোষা প্রেমিক তখন খিলখিল করে হেসে ওঠে

নির্বাক পেলব ঠোঁটের আর্তনাদ শুনে ।

গালের ঐ গুলদানীতে মৌমাছির গুনগুন

সেতো এখন প্রাচীন ইতিহাস ।

এই ডিজিটাল যুগে হাতের মুটোয় মেদহীন নাভিমূল

প্রেমিকরা আজ সব মুক্ত গাংচিল !

সাদা কালো বাদামী যেখানে ইচ্ছে ছুঁ মারে আহারের খোঁজে !!

মানুষের চরিত্রে ঈশ্বর আর শয়তান

ওহে কৌতুহলী যুবক একটু শুনো,
তুমি একা নও আছে আরো কতো শত,
অনেকে অনেককাল ধরে ছদ্মবেশী কাকের মতো ।
কমবেশি সব পুরুষই কামুক ,
নারীও কম নয় !
আমার বলতে কোন দ্বিধাবোধ নেই ,কারণ
আমিওতো পুরুষ ,নিজের অভিজ্ঞতা নিয়েই বলছি মশাই ,
রাস্তায় কিংবা সপিংমলের বারান্দায় যেখানেই দৃষ্টি নামাই,দৃষ্টি কেবলই খোঁজে নারীর স্নিগ্ধ শরীর,
পিছনে দিক থেকে হলে মাংসল নিতম্ব আর সামনের
দিক থেকে হলে বুকের সুউচ্ছ গুম্বজসম ছাতি!
ইতারে ভাসতে থাকা অসংখ্য নগ্ন দেহ মুটোফোনের
স্ক্রীন জুড়ে যখন প্রকট হয়
কিশোর কিশোরী যুবা বৃদ্ধ তন্ময় হয়ে হারিয়ে যায় ডিজিটাল তরঙ্গে !
এই ভয়ংকর বিছিন্নতাবোধ কেবলই মাংসের খরিদ্দার ,
নারীকে পণ্য বানিয়ে ,পুরুষও মাঝেমধ্যে হয়
তবে খুব কম ,ধরে নেও সংখ্যার দিক থেকে শতে পাঁচ ;
সবাই নিমিষেই সৌষ্ঠব উরুসন্ধিতে বিলিয়ে দেয়
মানবিক শ্রদ্ধাবোধ! চেতনে কিংবা অবচেতনে
যে যেভাবেই বলুন পুরুষালী সত্তা চরম জাগ্রত
কামুকি আরাধনায় নিমগ্ন অষ্টপ্রহর !
মানুষের চরিত্র ঈশ্বর এবং শয়তানের বৈশিষ্টে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ !
কখনো ঈশ্বরের খুব কাছাকাছি আবার পলকেই
শয়তানের দুসর ;রাস্তায় উলঙ্গ শরীরে দৃষ্টি উন্মাদ
অথচ নিজের স্ত্রী কন্যাকে ধর্মের ব্যারিকেডে
বন্দি করে রাখি,এটাতো ভালোই,ধর্মীয় মুল্যবোধ,তাহলে
অপরের স্ত্রী কন্যাকে কেনো এক্সরের ক্লিন ফিল্মে কামনার সচ্ছল ছায়ামুর্তি ভাবি !
দুচোখ প্রতিনিয়ত কেনো খায় নগ্ন সৌন্দর্যের খাবি ?

তবে কিছু সাধু মহাজন আছেন সমাজে-
তাহারা একাই কাটিয়ে দেন জীবন ,ঈশ্বরের তপস্যায়
তপস্বী তাঁরা,আর বাদবাকি আধেক ধান আর আধেক চুর্ণ তুষ
বিপরীত লিঙ্গ দেখলে বুঝতেই পারছেন মশাই হা হা,একদম বেহুস ।

কবি-জীবন


কবি কুটিল পথে হেঁটো’না
এই পথ কবিদের নয়,
এই পথ মধ্যসত্বভোগী দালালদের !

কবির ঠোঁটে লজ্জার লালা থাকতে নেই
এ লালা নষ্ট বেশ্যার ঠোঁটেই মানায়,যারা-
বিলাসী জীবন যাপনে উরুসন্ধির সওদা করে !
তুমি শিল্পি,এবার বেরিয়ে এসো আপন সত্তাটুকু নিয়ে
কবির বিস্তার হোক ব্যাপক,গর্বিত সময়ের দিশারী হয়ে ,
তোমার পরিচয় হোক নজরুলের বিদ্রোহী চেতনায়
শার্ল বোদলেয়ারের ধ্রুপদী বোধ জাগ্রত হোক তোমার কবিতায় ;
ঈর্ষার বেদিতে সুন্দের উত্তোরণ হয়না কখনো,
মনে রেখো অবশিষ্টরাও এক সময় বিশিষ্ট হয়ে ওঠে
আর বিশিষ্টজন হারিয়ে যায় এক সময়, নিক্ষেপিত হয় আস্থাকূড়ে !

মাথা উঁচু করে দাঁড়াও কবি
সময়ের সিংহদ্বারে লিখে যাও আগামী প্রজন্মের কবিতা
একটি সার্থক কবিতাই কবির আসল পরিচয় ।

ভেজাশোকে কাতর

এখনো মরণের ভেজাশোকে কাতর,
এতকাল সে মৃত ছিলো বলে ...

ছনের ছাউনি থেকে বৃষ্টির অনেক পরেও
যেমন জলের ফুঁটায় মেঘের কান্না
টিপটিপ অভিরাম ঝরে পড়ে কষ্ট
সে জলে নদী হয়না জানি
কেবলই হৃদয়ের গহিনে ভাঙনের ডাক শুনি ।

মন ভাঙার ডাক দেহ ভাঙার ডাক
দৃষ্টির বিস্তৃর্ণ সীমানা জুড়ে দুঃস্বপ্নের মতো ধুসর দেয়াল ,
সে দেয়ালে চোখ মেললেই দেখি পূর্বপুরুষে শক্ত চোয়াল
আকড়ে ঝুলে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে
আর আমি ভেজাচোখ দিয়ে খুঁজি স্বর্গে যাবার সিঁড়ি
অনুভূতি গুলোকে জাগ্রত করে ক্ষীণ মোমবাতির আলোয়
উদাসীন বৃক্ষগুলোও আজ তন্ময় হয়ে আছে গ্রীবা নিচু করে ।

পরবাসী জীবন

পঞ্চনদ আর পদ্মার বাঁশরী ,শুনি টেমসের কূলে বসে

আমার চোখের জলেতে লক্ষতারা নিমিষেই যায় ভেসে ;

বোবাকান্নার ওঠে সুর ছোট ছোট ঢেউ

পরবাসী জীবন একা সঙ্গে নেই কেউ

ব্যাথার অনলে কষ্ট গলে গলে টেমসের জলে মিশে

চিৎকার করে বলতে পারিনা আমি,ভাল নেই,অবশেষে ।।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান