সালাহ উদ্দিন মাহমুদ । গুচ্ছ কবিতা
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ । গুচ্ছ কবিতা
চৈত্রের শেষদিনে


 

কবেকার প্রখর রোদে আমাদের দেখা হবে ফের;

যেখানে ক্ষেতের আলের পাশে হিজলের ডালে

বসে আছে এক শিকারি শালিক নিবিষ্ট মনে।

 

যেখানে কীটপতঙ্গ বা ঘাসফড়িংয়ের উৎপাত নেই;

অথবা কীটনাশক বিহীন প্রেমে মজে আছে শস্য

সোনালি ধানের ঢেউ আমাদের নিয়ে গেছে মাঠে।

 

কবেকার ক্লান্ত বিকেলের আলোয় মিলিত হবো;

বিরাণ মাঠে পড়ে থাকবে ফসলের শেষ চিহ্ন

তুমি-আমি গাইবো নতুন ধানের আগমনী গান।

 


 

আব্বার মিলাদ


 

অনেক দিন আব্বার সঙ্গে মিলাদে যাই না

 

তুমি যে নূরের নবি নিখিলের ধ্যানের ছবি,

তুমি না এলে দুনিয়ায় আঁধারে ডুবিত সবি।

সুর করে করে বলতেন আব্বা, পরক্ষণেই

আমরা সমস্বরে বলে উঠতাম, ইয়া নবি

সালামু আলাইকা, ইয়া রাসুল সালামু আলাইকা

 

আমাদের সমবেত কণ্ঠস্বরে ভেসে যেত তেপান্তর।

সেই সুরের মুর্ছনায় যেন মোহিত নিস্তব্ধ চরাচর...

 

আব্বার সঙ্গে শেষবার সেই কবে মিলাদে গেছি

এখন আর মনে পড়ে না দিন-তারিখ, আঙুলের

কড় গুনে গুনে অপেক্ষার প্রহর হারিয়ে ফেলেছি।

 

এখন আর ঘরে ঘরে মিলাদ নেই; ইয়া নবি

সালামু আলাইকা শুনি না উঠানজুড়ে।

বর্তনের অপেক্ষায় নেই দাওয়াতি মুসল্লি

তবু আজ মনে পড়ে খুব আব্বার দরাজ কণ্ঠের

সেই নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আইহি ওয়া সাল্লাম।

 


 

নানার দোয়া

 

নানা যখন মুনাজাত করতেন; সকলের চোখ আর্দ্র হয়ে উঠতো। কেঁপে উঠতো আল্লাহর আরশ। তিনি যখনরাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরাবলতেন; সমস্ত বাবা-মায়ের হৃদয় কিংবা কবর শীতল হয়ে উঠতো।

 

মুনাজাতে তিনি মুসলিম বিশ্বের কল্যাণ কামনা করতেন। আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আজ অবধি মৃত মানুষের জান্নাত কামনা করতেন। গুনাহগার বান্দার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

 

নানা দীর্ঘসময় মুনাজাত করতেন। তার চোখের জলে ভিজে উঠতো সফেদ দাড়ি। এত আবেগ এত দরদে স্তব্ধ হয়ে যেত মজলিস।

 

আজ নানার জন্য যতবার দোয়া করি; তার বলা শব্দগুলোই কর্ণকুহরে বাজতে থাকে। আল্লাহকে বলি, তুমি আমার নানার সব দোয়া কবুল করে নাও।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান