হামীম ফারুক এর দীর্ঘ কবিতা
হামীম ফারুক এর দীর্ঘ কবিতা

জলাভূমি   একটি সাদাছড়ি

 

 

সারা রাত বৃষ্টি হল, অথচ গরম কমল না।

 

অবাক হচ্ছো?

 

মনে নেই, গতবছর মৌসুমী বায়ূ নিচে আমরা সারা রাত ভিজলাম,

তখনো তাপ ছিল, আশ্বিনের মাঝামাঝি-

এবারে দাহ নেই, শরীরটা কেমন আঠালো, কলসীর ঘাম সারা কপাল জুড়ে। মেঘ ডাকছে-

 

তা বরাবরই তো ডাকে

 

জানো না কবি বলেছে, যত গর্জে তত ...

দাঁড়াও দাঁড়াও..... তত বর্ষে না।

 

হ্যাঁ, কবিতাই আমাদের কাল হলো, কষ্টকে বলি আনন্দ, আনন্দকে কষ্ট।

 

এসব কথা না বললে পৃথিবীতে কিভাবে হতো বিপ্লব!

 

বিপ্লব? সে আবার কি জিনিষ?

 

চলো জলাভমির কাছে। সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির গান শুনতে শুনতে আমরা কথা বলবো বিপ্লব নিয়ে-এইযে তুমি,আমি পাশাপাশি, হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছি, এটাইতো বিপ্লব।

 

বাহ্, এতো সহজ।

 

হ্যাঁ, পাথরের মতো সহজ।

 

ভুল বললে, ওটা হবে পাথরের মতো কঠিন।

 

হ্যাঁ, কঠিনের মতো সহজ।

 

কি উল্টোপাল্টা বকছো কখন থেকে? দ্যাখো- বৃষ্টি থেমে গেছে।

 

আচ্ছা, আমরা এখানে একটি ঘর বানাতে পারি না, খড়কুটো দিয়ে?

 

কে থাকবে সেখানে?

 

 

কেন, তুমি আর আমি।

 

রাতে শুয়ে শুয়ে বিশাল মাঠের মতো আকাশ দেখব আর তুমি

মনে করার চেষ্টা করবে নক্ষত্রগুলোর নাম

 

খাবে কি? ঘুমোবে কোথায়? জংলী মশার কামড়- খেয়েছো কখনো?

একটি নক্ষত্রের নামও মনে করতে পারব না।

পরের দিন সকালে কাউকে মুখ দেখাতে পারবে?

 

তোমার এতো ভয়?

 

আমার নেকড়ের খুব ভয়।

 

এখানে নেকড়ে কোথায় ?

জলাভূমির ধারে, যে সুখি গ্রামটা রয়েছে, সেখানে;

সকাল হলেই ফিরে আসবে এখানে।

 

তবে জায়গা ছেড়ে চলো, অন্য কোথাও যাই

 

কোথায় যাবে, তোমার পেছন পেছন যাবে মেঘের প্রহেলিকা,

দু:স্বপ্নের মাকড়সা। হাঁপিয়ে উঠবে তুমি ওগুলো তাড়াতে তাড়াতে।

 

আহ্ চোখে যেন কি পড়ল!

 

একটু দেখেও চলতে পারো না।

 

কিছু নয়। উড়ে আসা ছাই। কেউ কিছু পোড়াচ্ছে বুঝি?

 

সেতো অনেক আগের কথা। জলাভূমির ওপর ছিল পাহাড়।

লোকে বলত, কোন এক ধূমকেতুর কথা। আকাশ থেকে ছিটকে এসে

নামলো পাহাড়ে। সেই ভস্ম এখনো ঘুড়ে বেড়ায় বাতাসে-

টের পাচ্ছো ওর চাপা ক্রোধ, ফিস ফিস কথা।

 

কই নাতো, কানের কাছে তো একটা মাছি, , জ্বালালো তো।

 

আচ্ছা, তুমি জীবনানন্দ পড়েছো?

হ্যাঁ।

 

 

তোমার ভাল লাগে?

 

আসলে কি, আমি কবিতা তেমন বুঝিনা। শুধু মনে হয়, লোকটা কেন ট্রামের নিচে ঝাঁপ দিল!

 

সে তুমি সত্যিই বুঝবে না। সবাই কি আর ভাল সাঁতার জানে?

 

সাঁতার ! নাহ্, আজকাল এতো হেঁয়ালী করো। শোনো, একবার কি হলো, আমি বাড়ির ছাতে উঠেছি।

 

পাশের বাড়ির জানালা দিয়ে কেউ আমাকে ঢিল ছুঁড়লো।

 

ফুল নয়, চিরকুট নয়, ঢিল! ঠিক বলছো তো।

 

হ্যাঁ, তবে ঢিলটির গাযে ছিল কারুকাজ, শরীরে উল্কির মতো।

আর কখনো মা আমাদের ছাতে উঠতে দেয়নি।

 

ভাগ্যিস সেটা হয়েছিল, না হলে তোমার সাথে কোনো দিন দেখা হতো না।

 

কেন, তোমার পুর্নজন্মে বিশ্বাস নেই?

 

আমার কিছুতেই বিশ্বাস নেই।

 

আমাকেও না !

 

এইতো বিপদে ফেললে। অবিশ্বাসের মধ্যেই যে তোমাকে খুঁজে পেলাম। তোমার

হাত ছেড়ে দিলে মনে হয় তুমি হুডিনির যাদুর মতো মিলিয়ে যাবে।

 

সেওযে বিশ্বাস !

 

তোমার সাথে কথায় পারবো না। যাকগে, তারপর বলো কি হলো?

 

কোন কথা বলছো?

 

সেইযে কে যেন তোমার গায়ে ঢিল ছুঁড়ল-

 

, সেতো অনেক কথা। তবুও বলো-

 

 

বাবা মারা গেলেন। বেচারি মা। আমরা তিনটি বোন, শুধু তার লুকোনো কান্না দেখতাম।

 

তারপর ?

 

তারপর ঝড় উঠল, বৃষ্টি হলো, রোদও উঠল। একটি সেলাই মেশিন আঁকড়ে ধরে আমার মা বুড়ো হল।

 

থামলে কেন?

 

না, বলছি। বিয়ের দিন মা আমার হাতে তুলে দিলেন একটি ছোট্ট ভাঁজ করা রুমাল। বললেন, এটি তোর বাবার। আমি রুমাল খুলে দেখলাম, মাকে দেওয়া বাবার আংটি।

 

তারপর?

 

তারপর আর কি, নটে গাছটি মুড়োল-

 

দাঁড়াও দাঁড়াও গল্প তো ফুরোবার নয়।

 

কে বলল ফুরিয়েছে? এইযে আজ বুনে যাচ্ছি শব্দজাল- এর কি শেষ আছে?

 

তাহলে নদীর পাড় ভাঙে কেনো?

 

কে বলল ভাঙে ! নদীর মতো ভালবাসতে পারে কজন! মায়ার উথলে ওঠা প্লাবনে নি:স্ব করে দিতে পারে আর কে?

 

তুমিও যে আমাকে নি:স্ব করে দিলে। তোমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না।

 

ইংরেজিতে এর একটি সুন্দর নাম আছে।

 

সেটি আবার কি?

 

ইনফেচুয়েশন।

 

এরকম খটোমটো নামের আবার সুন্দর অর্থ ! তোমাকে আসলেই বুঝতে পারি না।

 

পারো, পারো বলেই তো নদীর পাড় ভাঙার শব্দ ঠিক শুনতে পাও।

 

 তখন মনে হয় মায়ের কথা।

 

আমার হাতটা ধরবে? খুব শক্ত করে ধরো।

 

আমার সাদাছড়িটা যে পাচ্ছি না। কোথায় গেল ওটা।

 

আমি ফেলে দিয়েছি জলে।

 

কি বলছ?

 

ওটা আর লাগবে না। আমি ধরে আছি তোমার হাত।


 



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান